জয় দিয়েই বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের। তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটা ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলালেও শেষ হাসি টাইগারদের। শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়েছে সাকিব-শান্তরা। তাতে সুগম করেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবার পথ।
টেক্সাসের গ্রান্ট প্রেইরি স্টেডিয়ামে টসে হেরে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ১২৪ রান তুলে শ্রীলঙ্কা। জবাব দিতে নেমে চাপে পড়লেও ব্যবধান গড়ে দেন তাওহীদ হৃদয়। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে ১ ওভার বাকি থাকতেই নিশ্চিত হয় জয়।
সহজ লক্ষ্যটা সহজ করেই জিততে পারতো টাইগারর, সমীকরণটা হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছিলেন হৃদয়। হাসারাঙ্গাকে তিন ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যবধান নামিয়ে এনেছিলেন ৫০ বলে ৩৪ রানে, হাতে তখনো ৭ উইকেট। দাপুটে জয়ের স্বপ্নে বিভোর তখন টাইগাররা।
তবে সেখান থেকেই রঙ বদলাতে শুরু করে ম্যাচ, পরের ৬ ওভারে ২২ রান তুলতেই হারায় ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। রানের তুলনায় বল বেশি থাকলেও ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলা টাইগাররা পড়ে যায় শঙ্কায়। তবে আরো একবার দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ।
তবে মাহমুদউল্লাহ বা তাওহীদ হৃদয় নয়, ম্যাচ জয়ের নায়ক রিশাদ হোসেন। প্রথমবার কোনো বৈশ্বিক আসরে খেলতে নেমেই বনে গেছেন ম্যাচ সেরা, তার বোলিংয়েই তো গুঁটিয়ে যায় লঙ্কানরা, ২২ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। যদিও সমান তিন উইকেট ছিল মোস্তাফিজেরও।
১২৫ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় বলেই ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার। ২ বলে ০ রানে ফেরেন তিনি। থিতু হতে পারেননি তানজিদ তামিমও, পরের ওভারে ৬ বলে ৩ করে নুয়ান তুষারার শিকার তিনি।
৬ রানে জোড়া উইকেট হারানোর ধাক্কা কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস। তবে বড় হয়নি এই জুটিও, ২২ বলে ২২ রান আসে এই যুগলবন্দীতে। ৫.২ ওভারে দলীয় ২৮ রানে ফেরেন শান্ত। ১৩ বলে ৭ রান করেন তিনি।
তবে সেখান থেলে দলকে টেনে তুলেন লিটন দাস ও তাওহীদ হৃদয়। দু’জনের জুটিতে জয়ের পথেই ছুটে বাংলাদেশ। যেখানে একটু বেশিই আগ্রাসী ছিলেন তাওহীদ হৃদয়। হাসারাঙ্গার করা ১২তম ওভারে পরপর তিন বলে তিন ছক্কা হাঁকান তিনি। যদিও ফিরতে হয় এরপরই।
হৃদয় ঝড় থামে ১১.৪ ওভারে, দলীয় ৯১ রানে। ২০ বলে ৪০ রান তুলে আউট হন তিনি। জয়ের জন্য তখন বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫০ বলে ৩৪ রান। তবে এই সমীকরণ কঠিন হয়ে পড়ে ১৪. ১ ওভারে লিটন ফিরলে। এই ব্যাটার আউট হন ৩৮ বলে ৩৬ রানে।
এরপর দ্রুত সাকিব (৮) ফিরলে চাপ বাড়ে টাইগারদের। শেষ ১৮ বলে প্রয়োজন ছিল ১৪ রানের, হাতে ৪ উইকেট। তবে এই রান তুলতে গিয়েও ফেরেন রিশাদ হোসেন ও তাসকিন। যদিও ১৩ বলে ১৬* রানের ছোট এক ইনিংসে সব শঙ্কা দূর করেন মাহমুদউল্লাহ।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। পাওয়ার প্লেতে জোড়া উইকেট হারালেও আদায় করে নেয় ৫৩ রান। কুশল মেন্ডিসকে ১০ রানে ফেরান তাসকিন, কামিন্দু (৪) হোন মোস্তাফিজের প্রথম শিকার। তবে পাথুম নিশানকার ব্যাটে বড় লক্ষ্যেই ছুটছিল লঙ্কানরা।
পাওয়ার প্লে শেষ হবার পর থেকেই যেন রানের গতি কমে আসে শ্রীলঙ্কার। পাথুম নিশানকা ফেরার পর যা আরো প্রগাঢ় হয়। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা লঙ্কান এই ওপেনারকেও ফেরান মোস্তাফিজ। ২৮ বলে ৪৭ রানে আউট হন তিনি। ৯ ওভারে ৭০ রানে ৩ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
সেই চাপ থেকে বের হয়ে আসার আগেই লঙ্কানদের জোড়া আঘাত করেন রিশাদ। ফেরান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও চারিথ আসালাঙ্কাকে। পরপর দুই বলে উইকেট তুলে জাগিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। প্রথমে আসালাঙ্কাকে ২১ ও পরের বলে গোল্ডেন ডাক উপহার দেন হাসারাঙ্গাকে।
পরের ওভারে এসেও ঝলক দেখান রিশাদ, এবার ফেরান থিতু হয়ে যাওয়া ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকেও। সিলভা স্ট্যাম্পিং হয়ে ফেরেন ২৬ বলে ২১ রানে। তাতে বেরিয়ে আসে লঙ্কানদের ইনিংসের লেঁজ। পরের তিনটা উইকেট ভাগাভাগি করেন তাসকিন, মোস্তাফিজ ও তানজিম সাকিব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা : ২০ ওভারে ১২৪/৯ (নিসাঙ্কা ৪৭, ধানাঞ্জয়া ২১, আসালাঙ্কা ১৯;
মোস্তাফিজ ১৭/৩, রিশাদ ২২/৩, তাসকিন ২৫/২)
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১২৫/৮ (তৌহিদ ৪০, লিটন ৩৬, মাহমুদুল্লাহ ১৬*;
থুশারা ১৮/৪, হাসারাঙ্গা ৩২/২)
ফলাফল : বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : রিশাদ হোসেন।