শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন

করোনা পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তায় আম-বাণিজ্য

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৯ মে, ২০২০
  • ২৬৭ বার

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশে কার্যত যে লকডাউন চলছে, এতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে আম-বাণিজ্য।

এবার লম্বা সময় ধরে শীত থাকায় এবং মার্চের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টির কারণে গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কিছুটা কম হবে বলে আশঙ্কা বাগান মালিকদের।

এরপরও সময় মতো সব আম বিক্রি করতে পারবেন কি না সেটা নিয়ে তারা সংশয়ে আছেন। কারণ দেশজুড়ে কার্যত লকডাউন চলছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে এবারের আমের উৎপাদন ও বিপণন ঠিক রাখতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

তবে লকডাউন তুলে না দিলে প্রত্যাশিত দাম পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন আম চাষি মোহাম্মদ মন্টু মণ্ডল।

রাজশাহীর পুথিয়া উপজেলার বানেশ্বর গ্রামের এই আম চাষি তার চার বিঘা জমি জুড়ে আম চাষ করছেন।

প্রতিবছর আমের পরিচর্যা ও কীটনাশক বাবদ তার খরচ হয় প্রায় এক লাখ টাকার মতো।

প্রতিবছর এই বাগান থেকে আয় করেন তিনি প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মতো। কিন্তু এবারে পরিচর্যার খরচ তুলতে পারবেন কিনা সেটা নিয়েই দ্বিধায় আছেন।

কারণ আগে আগাম বাগান কিনতে আড়তগুলোয় ব্যাপারীদের যে ভিড় থাকতো, এবারে তার কিছুই নেই। স্থানীয় বাজারগুলোও জনশূন্য।

এভাবে আম চাষিরা ন্যায্যমূল্যে আম বিক্রি করতে পারবেন কি না সেটা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছে।

‘লকডাউনের কারণে এক এলাকার লোক আরেক এলাকায় যেতে গেলে তাকে আটকে দেয়া হচ্ছে। এভাবে অন্য জেলায় আমরা আম বেচতে পারছি না। আবার এভাবে অনেক লস হয়ে যাবে’, বলেন মন্টু মণ্ডল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র মতে, এবার ২ লাখ ৩৫ হাজার একর জমিতে ১২ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এবারের আমের ফলন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হবে এবং সব আম দেশের ভেতরেই বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশাবাদী কৃষি মন্ত্রণালয়।

কারণ লকডাউনের মধ্যে কৃষি পণ্য পরিবহনে কোনো বাধা নেই।

এক জেলা থেকে আরেক জেলায় আমের সরবরাহ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য সামনের কয়েকদিনের মধ্যেই আমচাষি, আড়তদার থেকে শুরু করে প্রতিটি জেলা ও উপজেলার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, জেলা প্রশাসক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করার কথা জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসিরুজ্জামান।

রমজান শেষ হওয়ার পর আমের বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠবে এবং কৃষকরা ভালো দাম পাবে বলে মনে করছেন রাজশাহী জেলার কৃষি কর্মকর্তা শামসুল হকও।

তবে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে যে আম রপ্তানি করা হতো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সেটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

এই বিপুল পরিমাণ আম সংরক্ষণের মতো পর্যাপ্ত হিমাগার না থাকায় অনেক আম পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এমন অবস্থায় হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পদ্ধতিকে আম সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দিন।

হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পদ্ধতিতে আমগুলোকে ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানিতে পাঁচ মিনিট ডুবিয়ে রাখা হয়।

এই পদ্ধতিতে আমের দ্রুত পেকে যাওয়া বা পচন পাঁচদিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত রোধ করা যায় বলে জানান আলীম উদ্দিন।

অসাধু ব্যবসায়ীরা আম পাকাতে বা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, পিজিআর, ফরমালিন, ইথোফেনের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করে থাকে।

এই ব্যবসায়ীরা যেন মৌসুমের আগে আম পেড়ে সেগুলোতে রাসায়নিক দেয়ার চেষ্টা না করে সেজন্য কোন সময়ে কোন আম পাড়া হবে সেটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্যমতে, ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম পাড়া হবে। এরপর ২০ মে থেকে গোপালভোগ আম ২৫ মে থেকে রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ আম এবং ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত আম তোলা হবে।

৬ জুন থেকে ১৫ জুনের মধ্যে তোলা হবে, ল্যাংড়া, আম্রপালি এবং ফজলি আম। সবার শেষে ১০ জুলাই নামবে আশ্বিনা এবং বারী-৪ আম পাড়া হবে।

তবে প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে কোনো জেলার আম নির্ধারিত সময়ের আগে পেকে গেলে সেটা সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে তুলে নেয়া যাবে।

এই আমগুলোর সময় মতো বাজারজাতকরণ নির্বিঘ্ন রাখতে কুরিয়ারে আম পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন আলীম উদ্দিন।

‘যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে আমগুলো কুরিয়ার করে পাঠানো যায়, তাহলে কৃষকদের লোকসানের কোনো আশঙ্কা থাকবে না’, তিনি বলেন।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com