রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ অপরাহ্ন

উখিয়ায় ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪
  • ১১৬ বার

কক্সবাজারের উখিয়ায় টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার কারণে ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করেছে উপজেলা প্রশাসন। এক সপ্তাহ ধরে উখিয়ায় থেমে থেমে মাঝারি ও ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা বেড়েছে, এমনটাই বলছে প্রশাসন।

স্থানীয়দের সচেতন ও সতর্ক করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তানভীর হোসেন।

তিনি বলেন, উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অতিবৃষ্টি হচ্ছে। ওই সময় পাহাড়ি ঢল ও বন্যার আশঙ্কায় মাইকিং করা হয়েছে। স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ক্ষয়ক্ষতি ও জানমাল রক্ষায় সচেতন বিভিন্ন এনজিওদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও মাইকিং করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমেও মাইকিং করে নিরাপদ স্থানে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ সময় রহমতেরবিল, পানবাজার, থাইংখালী, পালংখালী জামতলী, হাকিমপাড়া, কুতুপালং, মধুরছরা, তুতুরবিল, পাতাবাড়ি, চৌধুরীপাড়া, রুহুল্লারডেবা, হরিণমারা, দোছড়ি, খয়রাতিপাড়া, সোনারপাড়া, জালিয়াপালং, টিএনটি, মরিচ্যা, পাগলিরবিল, জুমেরছরা, বালুখালী ছরা এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ও নিম্নাঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে উখিয়ার পাশ্ববর্তী তুমব্রু এলাকায় পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় খাল তীরবর্তী গ্রাম ও ঘরবাড়ি। প্রতিবছরই বর্ষার মৌসুমে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া জালিয়াপালং সোনাইছড়ি গ্রামে ইনানী সমুদ্র ও রেজুখালের পানি বাড়ে। ফলে সে সময়টায় নিচু জায়গায় বসবাসরত লোকজনের জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেককে পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে।

বালুখালী এলাকার মোস্তাক আহমেদ ও জয়নাল আবেদীন বলেন, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পশ্চিমপাশে বালুখালী ছরা নামক স্থানে পাহাড়ের মাটি সরে গিয়ে বিশাল একটি গাছ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে শেকড়ের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল আকৃতির পুরনো গাছটি। ঝুঁকিপূর্ণ গাছটির তলে এখনো অবুঝ শিশুরা খেলা করে। যেকোনো মুহূর্তে গাছটি পড়ে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।

গত ২০ জুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই বাংলাদেশীসহ ১১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জন স্থানীয়। এর মধ্যে একজন থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র শাহ আলমের ছেলে আব্দুল করিম (১২)। অন্যজন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার হোসেন আহমেদ। দু’জনের বাড়ি ১৪ নম্বর ক্যাম্পের পাশে। বাকিরা সব রোহিঙ্গা।

আবারো এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে।

১১ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা সোলতান আহমেদ বলেন, ক্যাম্পের অনেক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় জুলফিকার আলী ভূট্টো বলেন, ১১ নম্বর ক্যাম্পের পাশে কাটাতারের বাহিরে মরাগাছতলা এলাকায় আমার দোকান রয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে ড্রেনগুলো আইএমওসহ বিভিন্ন এনজিও পানি নিস্কাশনের জন্য ও ড্রেন পরিস্কার রাখতে নানান প্রকল্প হাতে নিয়ে নয়-ছয় করে চালিয়ে যাচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমার ছোট ভাই ক্যাম্প ১১ এর সিআইসি অফিসে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরও ড্রেনের কাজ পরিষ্কার করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে কাটাতারের বাইরে মার্কেটের প্রায় শতাধিক দোকান ক্যাম্পের ময়লা পানিতে তলিয়ে গেছে।

১১ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিক বলেন, ভারী বর্ষণে ক্যাম্পে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। অধিকাংশ ঘরে পানি ঢুকছে। আমাদের কষ্টের শেষ নেই। দমন-পীড়নের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা ১৩ লাখ রোহিঙ্গার অধিকাংশই রয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ শরণার্থী শিবিরে। সেখানে বিভিন্ন পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করেছে রোহিঙ্গারা। এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকে টানা ভারী বৃষ্টিতে উখিয়া-টেকনাফে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি আর পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল, ডুবে গেছে ঘরবাড়িসহ মৎস্যঘের, লবণের গোলা। ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট। অতিরিক্ত পানির কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের কিছু কিছু জায়গায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অনেক গাড়ি গ্রামের ছোট ছোট রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কামরুদ্দিন মুকুল বলেন, রাস্তা ও খাল-বিল পানিতে ভরে গেছে। পানিবন্দি অধিকাংশ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র এবং আত্নীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com