করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া নির্মাণশ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চার পাশে ত্রাণ বিতরণ চললেও রাজধানীর বেশির ভাগ নির্মাণশ্রমিক পাননি কোনো ধরনের সহায়তা। কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালালেও এখন আর সেটাও সম্ভব হয়ে উঠছে না। শেষমেশ সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে ওই সব পরিবারের।
রাজধানীতে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেন মো: বাবুল হোসেন। পরিবারের লোকসংখ্যা চারজন। থাকেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকায়। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাচ্ছে। করোনায় ছুটি ঘোষণার আগে থেকেই আমাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো আয়-রোজগার নেই। বাবুল বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের এ এলাকায় কেউই কোনো ত্রাণ নিয়ে আসেনি। আমরা কোনো ত্রাণ পাইনি। আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে কত ঋণ নেয়া যায়! সবাইতো কষ্টে আছে। সামনে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি।
বাবুলের মতো আরেকজন মো: নাজমুল হুদা। রাজধানীতে রঙমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান। পরিবারের লোকসংখ্যা সাতজন। থাকেন বাসাবো মাঠের পাশে। তিনি বলেন, কী বলব ভাই দুঃখের কথা, পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে আছি। করোনার মধ্যে সরকারি বেসরকারিভাবে কতজন কতভাবে সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে শুনি, কিন্তু এ পর্যন্ত আমাদের এখানে কেউ কোনো ত্রাণ নিয়ে আসেনি, আমরা কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। তিনি বলেন, অনেকেই ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে গেছে। সবুজবাগ থানায় আইডি কার্ড দিয়ে এসেছি। কিন্তুওই পর্যন্তই শেষ।
বাসাভাড়া দেয়া প্রসঙ্গে নাজমুল বলেন, নিজেরাই খাইতে পারি না বাসাভাড়া কিভাবে দেবো! গত তিন মাস বাসা ভাড়া দিতে পারি না। কাজের কিছু বকেয়া টাকা ছিল সেগুলো উঠানোর চেষ্টা করছি। কেউ ফোন ধরলে, অনুনয় বিনয় করলে দুয়েক হাজার টাকা দেয়, আবার অনেকেই ফোনও ধরে না। এভাবেই ধারকর্জ করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি।
জানা গেছে, সারা দেশে নির্মাণশ্রমিক আছে ৩৫ লাখের মত। এর মধ্যে ঢাকা শহরে কাজ করেন প্রায় ১২ লাখ। করোনার এ পরিস্থিতির মধ্যে অনেকেই গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। যারা ঢাকায় আছেন তাদের বেশির ভাগ নির্মাণশ্রমিকের সংগঠন ইনসাবের সদস্য হননি। সদস্যদের মধ্যে থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৫ হাজার ৯ জনের একটি তালিকা গত ২৮ এপ্রিল শ্রম মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ নিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেন ইনসাব নেতারা। জেলা প্রশাসন আবার ওই তালিকা ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে সুপারিশ করে পাঠিয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন আবার ওই তালিকা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। শ্রমিকদের ত্রাণসহায়তার ওই আবেদন এক অফিস থেকে আরেক অফিসে ঘুরছে। তবে এখন পর্যন্ত ওই আবেদনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
ইমারত নির্মাণশ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ-ইনসাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্মাণ শিল্পে লাখ লাখ হতদরিদ্র শ্রমিক কর্মহীন হয়ে অমানবিক জীবন অতিবাহিত করছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। গত ২৮ এপ্রিল কিছু সদস্যের একটি তালিকা ঢাকা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছিলাম। কয়েক অফিস ঘুরে এখন সেটা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আছে শুনেছি। কিন্তু কোনো সাহায্য সহযোগিতা এখনো পাইনি। কবে পাবো তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
তিনি বলেন, সরকারি অনুদান পেলে নির্মাণশ্রমিকদের সামান্য হলেও কষ্ট লাঘব হতো। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের হয়তো পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কর্মহীন প্রত্যেক পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা নগদ প্রদান করা হবে। দেশের প্রায় ৩৫ লাখ নির্মাণশ্রমিক করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদেরকেও এই প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।