হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ-বাহুবল দুই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেন হবিগঞ্জ -১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ (মিলাদ)। সেদিন থেকেই এই পর্যন্ত প্রায় ২১ জন রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে বহন করে হাসপাতালে এবং বাড়িতে পৌছে দিয়েছেন আব্দুল জলিল। সংগ্রহ করা নমুনা পৌঁছে দিচ্ছেন সিলেটে। সে নবীগঞ্জ উপজেলার নাদামপুর গ্রামে মৃত মোঃ হাসু মিয়া ছেলে।
কাজ শেষ করে অ্যাম্বুলেন্সেই ঘুমিয়ে রাত কাটিয়ে দেন তিনি। মাঝে মধ্যে একটু বের হয়ে হাঁটাহাঁটি করেন। সকাল হলে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে সাড়ে ৮ টা থেকে ৯টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছেন।
বেশির ভাগ মানুষ যখন করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত, কেউ আক্রান্ত হলেই দূরে সরে যাচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরই অন্যরা যখন নমুনা সংগ্রহে রাজি হচ্ছেন না তখন জলিল করোনা আক্রান্তদের একেবারে কাছে গিয়ে সেবা দিচ্ছেন।
আব্দুল জলিল জানান, রোগীদের একেবারে কাছে গিয়ে সেবা দেয়ায় তার করোনা নমুনা পাঠানো হয়েছিলো পরীক্ষার জন্য, ‘আল্লাহর রহমতে নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে।’
এ বিষয়ে জলিল বলেন, ছোট বেলা থেকেই কাজ পাগল মানুষ। কোনো কাজ দেখেই ভয় পাই না। আল্লাহর ইচ্ছায় আমার কোনো সমস্যা হবেনা। মনের শক্তি থেকেই মানুষের সেবার করছি।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজের মধ্যেই থাকেন জলিল। তিনি বলেন, রাতে ঘুম আসতে চায় না। করোনার বিভীষিকা, রোগীদের আতঙ্ক, অস্থিরতা আর সব সময় মৃত্যু ভয়ে কাতর মানুষের মুখগুলো চোখের সামনে ভাসে। ভীষণ কষ্ট লাগে, মনটা বিষন্ন হয়ে ওঠে এসব মানুষের দেখে।
তিনি জানান, বাড়ির বাইরে থাকছি, কবে বাড়িতে যেতে পারবেন তারও ঠিক নেই। পরিবারের সদস্যদের জন্যও মনটা কাঁদে। তবে সবচেয়ে খারাপ লাগে দিনশেষে যখন চিকিৎসক ও নার্সদেরই ধন্যবাদ জানানো হয়। আমার মত বা অন্য ছোট পদগুলিতে যারা আছেন, এই যেমন প্রতিদিন সকালে কিটবক্সগুলি একজন সুইপার জীবাণুমুক্ত করে দেন। এই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে তারও তো ভূমিকা রয়েছে। তাদের কেউ ধন্যবাদ দেয় না।
শুধুমাত্র চিকিৎসক-নার্সদের কথা না বলে যদি বলা হতো স্বাস্থ্যকর্মী তাহলেও আমরা শান্তি পেতাম।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, আব্দুল জলিল অনেক বুদ্ধিসম্পন্ন ছেলে। ও অন্যদের মত কাজ দেখে ভয় পায়না। তাকে নমুনা নিয়ে বারবার সিলেট পাঠানো হচ্ছে। এই করোনার সময়ে সে নবীগঞ্জ বাহুবল তথা হবিগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে যে সার্ভিস দিচ্ছে তাতে জলিলকে ধন্যবাদ দিলেও ছোট করা হবে।