পার্বত্য তিন জেলায় সংঘর্ষ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) এ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সার্বিক অবস্থা তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় উছৃঙ্খল জনতার গণপিটুনিতে মো: মামুন (৩০) নামে একজন নিহত হয়। পরে সদর থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন বিকেলে দীঘিনালা কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফের (মূল) কতিপয় সন্ত্রাসী মিছিলের ওপর হামলা করে এবং ২০-৩০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে।
সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের ছয়জন আহত হলে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার ব্রিগেড ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় আগুন নেভায়।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশেপাশের এলাকাগুলোতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেইসাথে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরো উত্তেজনাকর করে তুলে।
দ্রুততার সাথে খাগড়াছড়ি জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়িসহ সক উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সব পক্ষকে সহিংস কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার পরামর্শ দিতে বলা হয়।
একই রাতে (১৯ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল সাড়ে ১০টায় একজন মুমূর্ষু রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছলে অবস্থানরত উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে। এক সময় ইউপিডিএফের (মূল) সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের ওপর গুলি করে এবং আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। উক্ত গোলাগুলির ঘটনায় দিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয় বলে জানা যায়।
একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় উছৃঙ্খল জনতা কয়েকজন যুবকের মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের ওপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। সেইসাথে উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে ফায়ার ব্রিগেডের অফিসে ভাঙচুর করে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলা সদরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে স্থানীয় জনসাধারণ রাঙ্গামাটি জিমনেশিয়াম এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় ৮০০-১০০০ জন উত্তেজিত জনসাধারণ একটি মিছিল বের করে বনরুপা এলাকার দিকে অগ্রসর হয় এবং বনরুপা বাজার মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজি-অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং বেশকিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
এতে করে উভয় পক্ষের বেশকিছু লোকজন আহত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত ঘটনাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে। অনতিবিলম্বে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।