রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন

যেভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বাশার আল-আসাদ

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৭ বার

সিরিয়ার ‘স্বৈরশাসক’ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং সিরিয়া এখন মুক্ত বলে ঘোষণা করেছে দেশটির বিদ্রোহীরা।

এর আগে বার্তাসংস্থা রয়টার্স সিরিয়ার দু’জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট আসাদ অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে গেছেন।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা এই অভিযানের নেতৃত্বে আছে তাদের টেলিগ্রাম হ্যান্ডেলে বলেছে, এর মাধ্যমে একটি অন্ধকার যুগের অবসান ঘটেছে এবং এক নতুন যুগের সূচনা ঘটেছে।

দামেস্কের পথে পথে বিপুল সংখ্যক মানুষকে উল্লাস করতে দেখা গেছে।

বিদ্রোহীরা বলছে, আসাদ সরকারের নিপীড়নের শিকার শত শত মানুষ যারা কারাবন্দী ও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন তারা এখন নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারেন।

এদিকে রাজধানীর সবচেয়ে বড় কারাগার সেদনায়া থেকে হাজার হাজার বন্দীকে মুক্ত করেছে বিদ্রোহীরা।

সিরিয়া বিভিন্ন শহর থেকে হিজবুল্লাহ বাহিনী তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করেছে।

এই পরিস্থিতিকে একজন বিশ্লেষক ‘৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের চূড়ান্ত মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বিদ্রোহীরা দামেস্কে প্রবেশ করতে শুরু করেছে- এমন ঘোষণা দেয়ার পরপর প্রেসিডেন্টের দেশ ছাড়ার খবর পাওয়া যায়, কিন্তু শুরুতে সে খবর অস্বীকার করা হয়েছিল।

তিনি চলে যাওয়ার পর বিমানবন্দর থেকে সরকারি বাহিনী সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ গ্রুপ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে একটি ব্যক্তিগত বিমান দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড়ে গেছে এবং সম্ভবত এতেই প্রেসিডেন্ট আসাদ ছিলেন।

রাজধানীতে প্রবেশ শুরুর আগে বিদ্রোহীরা দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

দামেস্কে প্রবেশের ঘটনাকে বিদ্রোহী ইসলামপন্থী হায়াত তাহরির আল-শামস বা এইচটিএস-এর প্রধান ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

বিদ্রোহীরা তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছে, ‘আমাদের বাহিনী রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বিদ্রোহীদের হাতে দামেস্কে একটার পর একটা শহরতলীর পতন হচ্ছে।

এদিকে দামেস্কের প্রাণকেন্দ্র উমায়াদ স্কয়ারে লোকজন উৎসব শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই এলাকাতেই সেখানকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনীর দফতরসহ সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যালয়।

‘জবাইখানা’ হিসেবে পরিচিত কারাগারে যা হলো
জাতিসঙ্ঘ একসময় ‘মনুষ্য জবাইখানা’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল এমন একটি কারাগার থেকে বন্দীদের মুক্ত করেছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা।

সেদনায়ার ওই কারাগারে হাজার হাজার বিরোধী সমর্থককে ফাঁসি ও নির্যাতনের অভিযোগ আছে।

টেলিগ্রাম চ্যানেলে বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস বলেছে, বন্দীদের মুক্ত করে তারা একে অবিচারের যুগের অবসান হিসেবে উল্লেখ করেছে।

কিছু ভিডিওতে কারাগার থেকে লোকজনকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে। তবে এগুলোর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

দ্যা অ্যাসোসিয়েশন অফ ডিটেইনিস অ্যান্ড দা মিসিং ইন সেদনায়া প্রিজন বলেছে, মুক্ত হওয়া বন্দীরা দামেস্কের কাছেই একটি শহর মানিনের দিকে যাচ্ছে।

এরপর কী হবে
তুরস্ক সিরিয়া সীমান্ত এলাকার কাছে আছেন বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা হুগো ব্যাচেগা। তিনি লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট আসাদ বিদায় নিলে বহু মানুষ খুশি হিবে, কিন্তু এরপরই একটি প্রশ্ন নিশ্চিতভাবে আসবে যে এরপর কী হবে।

এবারের বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছে বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত এইচটিএস। বহুবছর ধরেই তারা নিজেদের জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে পরিচিত করানোর চেষ্টা করছে। তবে অনেকেই এটা মানতে রাজি নয়।

তাদের মতে, গ্রুপটি এখনো চরমপন্থী সহিংস একটি সংগঠন এবং সে কারণেই এরপর দেশটিতে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।

হিজবুল্লাহ সৈন্য সরিয়ে নিচ্ছে
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সহযোগী হিজবুল্লাহ সিরিয়ার নির্দিষ্ট কিছু এলাকা থেকে তাদের সৈন্যদের সরিয়ে নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, তারা হোমস ও দামেস্ক শহর থেকে সৈন্যদের প্রত্যাহার করছে।

ওদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, লেবানন সীমান্তের কাছে সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুসেইর শহর থেকেও হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা সরে যাচ্ছে।

সিরিয়ার আর্মি অফিসাররা কী করছে
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা দ্যা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) খবর দিয়েছে, সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীর শত শত সদস্য তাদের সামরিক পোশাক খুলে ফেলেছে।

এর আগে তাদের বলা হয়েছে, সরকারের পতন হয়েছে এবং তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

একটি ব্যক্তিগত বিমান চলে যাওয়ার পর একই ধরনের আদেশ দামেস্ক বিমানবন্দর এলাকায় থাকা সরকারি বাহিনী সদস্যদেরও দেয়া হয়েছে।

‘৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান’
দ্যা সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক কর্মসূচির সিনিয়র ফেলো নাতাশা হল।

বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভে তিনি বলেছেন, ‘এটাকে সত্যিকার অর্থেই মনে হচ্ছে যে সিরিয়ায় ৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের চূড়ান্ত মুহূর্ত।’

সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের শাসন শুরু হয়েছিল সত্তরের দশকের শুরু থেকে। নাতাশা হল বলছেন, প্রেসিডেন্ট আসাদ দামেস্ক ছেড়ে গেছেন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

তার মতে মূলত আসাদের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাশিয়া ও ইরান অন্য ঘটনায় ‘দুর্বল ও মনোযোগ হারানোর’ কারণেই তার এ পরিণতি হলো।

রাশিয়া কয়েক বছর ধরে ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত, আর ইরানসমর্থিত দুই গোষ্ঠী হামাস ও হিজবুল্লাহ ইসরাইলের হামলায় বিপর্যস্ত। ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও হয়েছে।

এছাড়া সিরিয়ান ৯০ ভাগ মানুষ এখন দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে এবং অনেকেই বাস্তুচ্যুতদের জন্য নির্মিত ক্যাম্পে বাস করে।

নাতাশা বলেন, ‘আমি মনে করি মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।’

২০১৮ সাল থেকে দেশটি কার্যত তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে, যেখানে বাশার আল-আসাদের কর্তৃত্ববাদী শাসন, কুর্দি বাহিনী এবং বিদ্রোহীরা বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

একটা সময় পর্যন্ত সিরিয়ায় যুদ্ধ শেষ করা কঠিন বলে বিশ্বাস করেছেন বিশ্লেষকেরা।

বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধ সিরিয়াকে ধ্বংস করে দিয়েছে। একইসাথে দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু, অবকাঠামোকে ধ্বংস এবং লাখ লাখ মানুষকে ভয়াবহ দুর্দশায় ফেলেছে।

এটি এমন একটি মানবিক সঙ্কট তৈরি করেছে যেখান থেকে পুনরুদ্ধারের কোনো সুস্পষ্ট পথ নেই।

জাতিসঙ্ঘর তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ায় যুদ্ধের আগের দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়া ৬৮ লাখ মানুষের মধ্যে ২০ লাখেরও বেশি লোক সীমিত সুবিধা নিয়ে ভিড়ে উপচে পড়া শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে।

এর বাইরে আরো প্রায় ৬০ লাখ মানুষ দেশটি ছেড়ে পালিয়েছে, যার বেশিভাগই আশ্রয় নিয়েছে লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্কে। এসব দেশে সবমিলিয়ে ৫৩ লাখ সিরিয়ান শরণার্থী রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com