যদি বলি, দেশ এই মুহূর্তে কয়েক ধরনের মহামারিতে আক্রান্ত, তা হলে আপনারা হয়ত কিছুটা ধন্দে পড়ে যাবেন, ভাববেন, আমরা তো জানি দেশ কেবল কোবিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। আর শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেরই এখন এই মহামারির কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে। এমন কি উন্নত বিশ্বের যেসব দেশে রোগ-বালাই কম তারাও বাদ যায়নি। তাদের ওপর বরং করোনা দেবী একটু বেশিই ‘করুণা’ (নাকি আছর?) করেছেন। তা হলে কি আমাদের পুরানো বন্ধু ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, কলেরা, বসন্ত এরাও সুযোগ বুঝে হামলে পড়েছে? তারা হয়ত ভেবেছে, এ দেশের মানুষ এখন কোবিড-১৯ এবং আরেক উপদ্রব সাইক্লোন আম্ফানের চোখ রাঙানি নিয়ে বেসামাল অবস্থায় আছে, এখনই মহা সুযোগ এদের কাবু করার। না, ডেঙ্গু-চিকনগুনিয়া-মোটাগুনিয়া দরজায় কড়া নাড়লেও আল্লাহর ফজলে এখনও ঘরে ঢুকতে পারেনি। তবে বলা যায় না, আমাদের দারোয়ান বাবাজিরা প্রতিবারের মত এবারও নাসারন্ধ্রে যথেষ্ট পরিমাণ সরিষার তেল ঢেলে নিদ্রাদেবীর সেবায় নিয়োজিত হলে, এবং/অথবা ভেঙ্গু দমনের নামে টু-পাইস বানাতে থাকলে, ওই ডাকাতগুলোও নির্বিবাদে ঘরে ঢুকে তাণ্ডব চালাতে পারে। আল্লাহ না করুন। এক করোনা সামাল দিতে গিয়ে আমাদের যে লেজে-গোবরে অবস্থা তার ওপর ডেঙ্গু-টেঙ্গুও এই দুঃসময়ে এসে হানা দিলে আমাদের সুইসাইড খাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
আপনারা নিশ্চয়ই বলতে শুরু করেছেন, তাহলে আপনি যে বললেন দেশ কয়েক ধরনের মহামারির কবলে পড়েছে সেগুলো কী? বলছি, বলছি। এই মহামারির কালে মহাকাব্যের ভাষায় বলতে হয় : ধৈর্য্য ধর, তিষ্ঠ ক্ষণকাল। তার আগে বলুন, টিভিতে রোজ আমাদের বিচক্ষণ শাহজাদা-শাহজাদী, বাদশাজাদা-বাদশাহজাদীরা করোনা রাক্ষসী নামক যে মহিলা চেঙ্গিস খানের দোর্দণ্ড প্রতাপের বয়ান আপনাদের শোনান, এবং তাঁরাও তাঁদের পরম পূজনীয় ‘বসে’রা, বিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা অরণ্যে রোদনের মত মুহুর্মুহু অতি প্রয়োজনীয় ও নিঃসন্দেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ‘ওয়ায-নসিহত’ করে অচেতন-অর্দ্ধচেতন জাতির কর্ণকূহরের দ্বারপথ দিয়ে মর্মমূলে যেসব আদেশ-নির্দেশ-উপদেশ বিনা মূল্যে প্রবিষ্ট করার প্রাণান্ত চেষ্টা করে চলেছেন গত প্রায় আড়াই মাস ধরে (বেঞ্চমার্ক : ৮ মার্চ ২০২০-এর সেই ঐতিহাসিক দিন, যেদিন দেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম ‘কেসিট’ শনাক্ত হয়), তার কি কোনো মূল্য নেই? সেসবই কি উলুবনে মুক্তা ছড়ানো? (এই প্রবচনটির ইংরেজি ভাষ্যটি শুনলে তো আপনারা লাঠি নিয়ে মারতে আসবেন আমাকে। সেই ভাষ্যটি হচ্ছে : টু কাস্ট্ পার্ল্ বিফোর দ্য সোয়াইন, একটু ভদ্র বাংলায় যার তরজমা হতে পারে : বরাহের সামনে মুক্তা ছিটানো। তবে সত্য বলতে কি, আমাদের গোয়ার্তুমি যে পর্যায়ে চলে গেছে তাতে এই ইংরেজি প্রবচনটির প্রয়োগই বোধ হয় যথার্থ।) সত্যি, দুঃখ হয় এই জাতির অচেতনতার মাত্রা দেখে। হঠকারিতা, অবিমৃশ্যকারিতা, সব কিছু তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতাই কি তা হলে আমাদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য? শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, আইন মেনে চলা এগুলো কি শুধু স্কুলের রচনা বইয়ের পাতায় চিরকাল ‘লকডাউন’ হয়ে থাকার বিষয়? জীবনে কি এগুলোর কোনো প্রয়োগিক প্রয়োজন নেই এই দেশে? এই কি আমাদের বিধিলিপি? গড্ ফরবিড্, তাই যদি হয় তবে এই জাতির কপালে অনেক দুঃখ আছে।
কী, এই দেশে অন্তত আরেকটি মহামারির খবর পেলেন তো? কী সেটা? তা হলে আমাকে বলতেই হয় : আবার জিগায়। সরকার, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, নীতিবান ও নীতিবিগর্হিত রাজনীতিক ও আমলা, কে নয়, সবাই তারস্বরে অহর্নিশ চেঁচাতে চেঁচাতে যখন একটি জাতিকে একটি ভালো কথা শোনাতে ব্যর্থ হয় তখন বুঝতে হবে এ জাতি চোখ থাকতেও কানা, কান থাকতেও কালা। আর এটি যখন মহামারির আকার ধারণ করে—যা হয়েছে বাংলাদেশের বেলায়—তখন বুঝতে হবে ‘মানি না মানব না’ ‘শুনি না শুনব না’ ‘পারলে ঠেকাও’ প্রভৃতি উপসর্গ ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়েছে রাষ্ট্রকাঠামোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এর ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা যেত যেসব উপাদান দিয়ে তা হচ্ছে সততা, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাপরায়ণতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ। দুঃখের বিষয় এসব উপাদান বাংলাদেশে দুষ্প্রাপ্য। ফলে করোনা মহামারির পাশাপাশি ‘মরো না বাঙালি, কেডা করছে মানা’ মহামারিও কম প্রাণঘাতী নয়।
২.
তবে এই মুহূর্তে সর্বগ্রাসী কোবিড-১৯ মহামারি ও বাঙালির ক্রনিক গোয়ার্তুমি, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ফুল হার্ডিনেস’, রোগের চাইতে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে যে রাক্ষুসে ব্যাধিটি দ্রুত কাবু করে ফেলছে তার নাম ক্ষুধা। কোবিড-১৯ এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই সুপ্রাচীন ও সুপরিচিত ব্যাধিটি শহর-বন্দর-গ্রাম সবখানে তার ভয়াল থাবা বিস্তার করে চলেছে। অথচ, আমাদের চির অবহেলিত, চির বঞ্চিত কৃষককুলকে হৃদয় নিংড়ানো কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলতে চাই, ক্ষুধা নামক এই আদিম পশুটাকে আমরা মোটামুটি দেশছাড়া করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমাদের ‘মূঢ়-ম্লান-মূক’ মুখের হতদরিদ্র নিচতলার মানুষরাও দু’বেলা দু’মুঠো জোটাতে পারত। এই মানুষগুলো আমাদের আবহমানকালের প্রতিবেশী, যদিও এদের জীবনযাপন প্রণালীর সঙ্গে আমাদের ঠাট-বাটের জীবনধারার কোনো মিল নেই। বস্তুত, আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আবার এদের ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলে না। সকালে বুয়া হয়ে এসে বেল টিপে আমাদের ঘুম ভাঙায় এরা। কাওরানবাজারে-ঠাটারিবাজারে মিন্তি হয়ে আমাদের দেড় হাজার টাকার বাজার-সদাই মাথায় তুলে পেছনে পেছনে হাঁটে। ঠেলাগাড়িতে করে আমাদের লাখ লাখ টাকার আসবাবপত্র, চালের বস্তা, গমের বস্তা, নির্মাণসামগ্রী ওয়াগায়রা ওয়াগায়রা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যায়। ফুটপাতে খেলনাপাতি, ফলমূল, জুতাসেলাই ইত্যাদি কত কিছুর পসরা নিয়ে বসে। আমাদের দশতলা-বিশতলা দালানগুলো বানাতে এইসব পুরুষ-মহিলারা চৈত্রমাসের আগুনঝরা দুপুরে ইট ভাঙে, কেউ বা আবার সার্কাসের ট্রাপিজ খেলোয়াড়ের মত জানটা হাতে নিয়ে বিশতলা উঁচুতে বাদুড়ঝোলা হয়ে ইটের পর ইট সাজায় তার দূরের বস্তির ঘরে ক্ষুধার নেকড়েটাকে বশে রাখতে। এমনি আরও কত হাজারটা উদয়াস্ত পরিশ্রমের রক্ত জল করা কাজ এরা করে এই সমাজটাকে, সমাজের ওপরতলার মানুষগুলোকে স্বস্তিতে টিকিয়ে রাখতে। বিনিময়ে ‘ক্ষুধা পেলে লবণভাত’ (নজরুলগীতি, গায়ক আব্বাসউদ্দিন)। আর ছেঁড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখা : বিশতলা দালানের সমান উঁচু থেকে দড়ি ছিঁড়ে পড়ে গেছে সে। আর বাস্তবে দালান-নির্মাণের দড়ি না ছিঁড়লেও হঠাৎই তার জীবনধারণের অবলম্বনটিকে করোনা রাক্ষুসী এক হেঁচকা টানে ছিঁড়ে ফেলল। এখন সে কর্মহীন, বেকার। কাজ নেই, আয় নেই, উপার্জন নেই, আছে শুধু পরিবারের পাঁচটি অসহায় প্রাণী ও তাদের অন্তহীন ক্ষুধা।
এখন এরা আর রেল লাইনের পাশের পলিথিনের ছাউনি দেওয়া বস্তিতেও নেই। এখন এদের রাত্রিদিবস অষ্টপ্রহর কাটে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে রিলিফের খোঁজে। আর না হয় জীবনে যা কোনোদিন করতে হবে ভাবেনি সেই ভিক্ষার অনভ্যস্ত হাত যার তার সামনে বাড়িয়ে। আর তার ঘাসফুলের মতো সুন্দর শিশু তিনটি দৌড়ায় চলন্ত গাড়ির পিছু পিছু স্যার, দুইটা টাকা দেন। সারাদিন কিচ্ছু খাইনি, স্যার।… আহা রে!
এদেরই সমগোত্রীয় গৃহহীন মানুষেরা আগে সারাদিন ভিক্ষা করে রাতে বৃক্ষতলে কিংবা ফুটপাতে চট মুড়ি দিয়ে মশককুলের শয্যাসঙ্গী হতো। এখন তাদের বৃক্ষতলে বা ফুটপাতে রাত দশটা বাজতে না বাজতেই শয্যাপাতার বিলাসিতা (!) আর নেই। এখন তারা, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, রাস্তার ধারে ধারে, মোড়ে মোড়ে, গভীর রাত পর্যন্ত যুথবদ্ধ হয়ে বসে থাকে, কখন আসবে স্বপ্নের রিলিফ, সেই আশায়। হঠাৎ ফেরেশতার মত কখনো কখনো নাজিল হন এক ট্রাক চাল-ডাল নিয়ে কোনো দাতা হাতিম তায়ী। আর অমনি এই অস্থিচর্মসার অন্নহীন নিদ্রাহীন স্বস্তিহীন মনুষ্যপদবাচ্য জীবগুলো সৃষ্টিকর্তাকে মুক্তকণ্ঠে হাজার বার কৃতজ্ঞতা জানাতে জানাতে হামলে পড়ে ওই স্বপ্নে পাওয়া খাদ্যবস্তুগুলোর ওপর। ওই সময় ওদের কে বোঝাবে ‘সামাজিক দূরত্ব’ আর কাতারবন্দি হয়ে বসার কথা। ওরা জানে এক মুহূর্ত দেরি করলে ওদের পেটের ভেতরের ক্ষুধা নামক নেকড়ে বাঘটা ওদের ছিঁড়ে-খুড়ে খেয়ে ফেলবে।
অতএব, সুধী পাঠক/পাঠিকা, মানলেন তো, বাংলাদেশে এখন উঠতি গুণ্ডার মতো আরেকটি উঠতি মহামারি দ্রুত সন্ত্রাসী হয়ে উঠছে। তার নাম ক্ষুধা। অনাদিকালের অন্তহীন, সর্বগ্রাসী অনলের মত ক্ষুধা।
৩.
তা ক্ষুধা নামক মহামারিকে দমন করতে সদাশয় কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমরা দেখে পুলকিত হয়েছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্বরিৎ সিদ্ধান্তে হাজার হাজার কোটি টাকার তৈল-তণ্ডুল ও নগদ অর্থ দেশের আনাচে-কানাচে পাঠানো হয়েছে অন্নকষ্টে জর্জরিত কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। আলহামদুলিল্লাহ। এই পর্যন্ত অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারকে আমরা দশে দশ দেবো। কিন্তু…। এবং এটা একটা বড় কিন্তু। আমরা দেখতে পেলাম, বঙ্গবন্ধুর কথিত ‘চাটার’ দল টাকা-পয়সা, চাল-ডাল-তেলের গন্ধ শুঁকে শুঁকে ঠিকই গিয়ে হাজির হয়েছে তৃণমূলে; দাঁত বসিয়ে দিয়েছে চালের বস্তায়, লোপাট করেছে তেলের বোতল, গাপ্পু করেছে মোবাইলে পাঠানো টাকা। আর এই চাটারা পাকিস্তান থেকে আসেনি, এরা রাজাকারের বাচ্চা রাজকার নয়, এরা আমাদেরই ‘সোনার টুকরা’ ছেলে, ঘরের শত্রু বিভীষণ। এদের নাকি ‘বরখাস্ত’ করা হয়েছে, দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু আমি বলব, সরি, দ্যাটস্ নট ইনাফ। মৃত্যুপথযাত্রী বুভুক্ষু মানুষের মুখের গ্রাস যারা কেড়ে নিতে দ্বিধা করে না তাদের জন্য কোনো শাস্তিই যথেষ্ট নয়। এদের দু’চারটাকে আইনের আওতায় এনে অতি দ্রুত জনসমক্ষে শাস্তি দিন, দেখবেন বাকি চাটাগুলো সুড়সুড় করে গর্তে ঢুকে পড়েছে।
অতএব…। (হ্যাঁ, আবার অতএব!) আমার দৃষ্টিতে কোভিড-১৯ এর চেয়েও মারাত্মক ভাইরাস হচ্ছে দুর্নীতির ভাইরাস। কী কারণে জানি না, কোভিড-১৯ টার্গেট করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প, বরিস জনসন, এঞ্জেলা মার্কেল প্রভৃতি বড়লোকদের দেশকে। আর দুর্নীতির ভাইরাসের টার্গেট একটাই আমাদের মত সব সম্ভবের দেশ, যেখানে আমাদের জনপ্রিয় গান বোধ হয় ‘হায়রে কপাল মন্দ/চোখ থাকিতে অন্ধ’। কেন? এর উত্তরে বলব, আমরা তো আয়নায় নিজের চেহারা দেখি না, কাজেই চোখ থেকেও আমাদের কোনো কাজে লাগে না, আমরা ব্যস্ত থাকি অন্যের চেহারায় খুঁত ধরতে। আর আমাদের জাতীয় খেলা কাবাডি নয়, ফুটবল নয়, ক্রিকেট নয়, আমাদের জাতীয় খেলা (‘গেইম’) কী বলুন তো? হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, আমাদের জাতীয় ‘গেইম’-এর নাম ‘ব্লেইম গেইম’। দুঃখের বিষয়, গবেট বিদেশীরা আজও এই অতি উন্নত মানের খেলাটিকে যথোপযুক্ত মর্যাদা দিল না, এমন কি স্বীকৃতিও দিল না। অলিম্পিকে এই খেলা অন্তর্ভুক্ত হলে, অথবা ফুটবল-ক্রিকেটের মত এর বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হলে, আমি বাজি ধরে বলতে পারি, কোনো বাপের বেটা আমাদের হারিয়ে স্বর্ণপদক পেতো না। ঠিক বলিনি?
তবে বাস্তবতা হলো, এই ‘ব্লেইম গেইম’ দেখতে দেখতে আমাদের ১৭ কোটি দর্শকের মাথা ধরে গেছে, বিবমিষা হচ্ছে রীতিমত। আমাদের বাকপটু খেলোয়াড়রা এটা বুঝেও বুঝতে চান না, এই যা দুঃখ।
৪.
তবু এই করোনাকালে, এই এত এত মহামারির কালে, স্মরণ কবর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে : মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে/হারা শশীর হারা হাসি অন্ধকারেই ফিরে আসে। হাঁ, রাত্রি যত গভীর হয়, নিকষ কালো হয় চারদিক, ভোরের সূর্য ওঠার সময় তত ঘনিয়ে আসে।
করোনাকালো আকাশটার দিকে তাকিয়ে দেখুন, একটি নতুন সূর্যের আভায় উদ্ভাসিত নতুন পৃথিবীকে, এক আজনবি পৃথিবীকে দেখতে পাচ্ছেন না? আমি তো দেখতে পাচ্ছি, মাতৃগর্ভ থেকে সদ্যোজাত এক নতুন পৃথিবীকে দেখতে পাচ্ছি আমি।
৫.
ঈদ এসেছে, ঈদ। করোনাক্রান্ত বিশ্বে এসেছে ঈদ। পলিথিনে ছাওয়া বস্তির ঘরে, বৃক্ষতলের শয্যায়, পথের মোড়ের রিলিফ প্রত্যাশীদের মলিনপ্রসূনের মত আননে, ঈদ এসেছে, ঈদ। মাবুদ তুমি ‘এইসব মূঢ়-ম্লান-মূক মুখে’ একটু হাসি দাও, দাও ঈদের আনন্দের অনাবিল ছটা। আমিন।…
সবাইকে ঈদ মুবারক।
লেখক : সাবেক সচিব, কবি