শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন

দরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩ জুন, ২০২০
  • ২৭১ বার

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি যেমন মারাত্মক সঙ্কটের মুখে পড়েছে, তেমনি বাংলাদেশের অর্থনীতিও চরম সঙ্কট-সন্ধিক্ষণে উপনীত। এই পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য খাতের বিশেষজ্ঞরা নানা বিচার-বিশ্লেষণে নিয়োজিত আছেন। আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন খাতের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম কী হতে পারে সে বিষয়ে তারা সরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য খাতের নীতিনির্ধারকদের জন্য নানা সুপারিশ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি দেশের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় এনজিওর করা এক সমীক্ষার ফলাফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির এক ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক, ডেটা সেন্স এবং উন্নয়ন সমন্বয়-এর এক যৌথ সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, করোনা মহামারীর কারণে দেশের প্রায় ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত দুর্বলতার ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রায় ৭৪ শতাংশ পরিবারের উপার্জন কমে গেছে। ১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন বা ফিরে আসতে যাচ্ছেন। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, দেশের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ এখন চরম দরিদ্র। এদের দৈনিক আয় মাত্র এক দশমিক ৯ ডলার। এই সাড়ে পাঁচ কোটি চরম দরিদ্রের মধ্যে গত ছয় মাসে করোনাজনিত লকডাউন এবং কর্মহীনতার শিকার মানুষও রয়েছেন।
এনজিওগুলোর এই সমীক্ষার ফলাফলের সাথে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণাপত্র পর্যালোচনা এবং তাদের প্রাপ্ত ফলাফল সমন্বয় করা হয়েছে। এতে করে দেখা যায়, দেশে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে পাঁচ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র (দৈনিক আয় ১.৯ ডলার)। এর মধ্যে চার কোটি ৭৩ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক দিক থেকে উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে আছে। আর তিন কোটি ৬৩ লাখ মানুষ আছে উচ্চমাত্রার স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। এমন পরিস্থিতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে ধারণা করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। আর লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পূর্বাভাস অনুযায়ী, করোনা-উত্তর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৩ শতাংশ। অন্য দিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এডিবি বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আগের বছরের চেয়ে ০.২ শতাংশ থেকে ০.৪ শতাংশ কম হতে পারে।
পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে প্রবৃদ্ধির চিন্তা হয়তো মাথা থেকে সরিয়ে রাখতে হবে। বরং কিভাবে, কোন উপায়ে মানুষ বাঁচিয়ে রাখা যাবে সেই কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে, তারপর স্বপ্নপূরণ আর সুখে থাকার চিন্তা। তাই এবারের বাজেট হতে হবে বেঁচে থাকার বা টিকে থাকার বাজেট। এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ ক্ষতির মাত্রা ও পরিমাণ কমাতে নীতিনির্ধারক তথা সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জন্য কর্মসংস্থান সহায়তা স্কিম থাকতে পারে। দক্ষতা নবায়ন ও পুনঃপ্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমিকদের বিকল্প কাজের সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে। ক্ষুদ্র ব্যবসায় নিয়োজিত হতে চান এমন লোকদের সহজ শর্তে মূলধন দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং করোনার ফলে চাকরি হারানো লোকদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় এনে সাময়িকভাবে সহায়তা দেয়া যেতে পারে।
এ ছাড়াও দেশের ব্যবসায়ীদের একটি গবেষণা সংস্থা বিল্ড সঙ্কট উত্তরণে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। যেমন, জাতীয় অর্থনৈতিক তহবিলের (এনইএফ) অধীনে বিশেষ অর্থনৈতিক সহায়তা তহবিল (এসইএএফ) গঠন। বলা হয়েছে, এ তহবিলের মাধ্যমে করোনার কারণে উদ্ভূত বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে এমএসএমই খাত ও শিল্পকারখানায় তারল্য সহায়তা দিতে হবে। তবে তহবিল থেকে দেয়া ঋণ হতে হবে সুদবিহীন, যা তিন মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধের ব্যবস্থা থাকবে। সব খাতের আয়কর ও করপোরেট করের হার ৫ শতাংশ হ্রাস করার সুপারিশ করেছে বিল্ড।
বিভিন্ন মহল থেকে আসা সুপারিশগুলোর সুষ্ঠু বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এমনটাই প্রত্যাশিত।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com