আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতেই ব্যয় করা হবে ৪৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, যা কি না চলতি অর্থবছরের এ খাতে বরাদ্দ অর্থের চেয়ে ১৪ ভাগ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের ভর্তুকি খাতে প্রথমবারের নতুন একটি খাত যোগ হয়েছে। আর সেটি হলো ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। কোভিড-১৯ এর কারণে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য ভর্তুকি হিসেবে এবার এ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হবে কৃষি খাতে। এ খাতে ভর্তুকি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ভর্তুকির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ খাত। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) খাতেও ভর্তুকির একটি বিশাল অঙ্ক ধরা হয়েছে। এখানে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ থাকছে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে খাদ্যবাবদ ভর্তুকি দেয়া হবে ৬ হাজার কোটি টাকা। কোভিডের কারণে গরিবদের স্বল্পমূল্যে চাল সরবরাহ করার জন্যই এ খাতে বেশি ভর্তুকির প্রয়োজন হচ্ছে। রফতানি ও রেমিট্যান্স খাতে প্রণোদনার জন্য রাখা হয়েছে যথাক্রমে ৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা এবং ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। আর ব্যাংকঋণ সুদ খাতে ভর্তুকি রয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোভিডের কারণে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সরকার বিভিন্ন প্যাকেজে ব্যাংকঋণের সুদে ৫ থেকে সাড়ে ৫ এমনকি ৯ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করছে। এ সুদের ব্যয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সরকারকেই বহন করতে হবে। এ জন্য আগামী অর্থবছরে এ খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও এলএনজি খাতে ভর্তুকি দেয়া হবে। তবে আগামী অর্থবছরের ভর্তুকির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এ খাতে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হলেও আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সরকার মূলত এলএনজি আমদানিকারক বেসরকারি খাত থেকে বেশি দামে পণ্যটি কিনে স্থানীয় বাজারে কম দামে বিক্রি করার কারণে এ ভর্তুকি গুনতে হয় বলে জানা গেছে।
একই অবস্থা বিদ্যুৎ খাতেও। আগামী অর্থবছরে এ খাতে ভর্তুকি গুনতে হবে ৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রি করার কারণে এ খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। শুধু চুক্তির শর্ত পরিপালনের জন্য কোনোরূপ বিদ্যুৎ না কিনেও বেসরকারি খাতে রেন্টাল পাওয়ার কোম্পানিগুলোকে প্রতি বছর ৪ হাজার কোটি টাকা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি, নগদ সহায়তা, প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ। তার আগের অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ২ ভাগ। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।