

বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম এবং নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক অবস্থায় নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত এই অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
আজ বুধবার (৮ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ মামলাগুলোর নথি পর্যালোচনা শেষে অভিযোগকে বিচারযোগ্য মনে করে আদেশ দেন। আদালত একই সঙ্গে সব আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার নির্দেশও দেন।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, মামলাগুলোর মূল অভিযোগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার (জেআইসি)–এর সেলে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, এসব ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব এবং সরকারি নির্দেশনার ভূমিকা ছিল, যার সর্বোচ্চ দায়িত্ব সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন সরকারপ্রধানের ওপর বর্তায়।
মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি রয়েছেন সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদসহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালী সাবেক কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক ব্যক্তি।
অভিযোগ আমলে নেওয়ার পাশাপাশি আদালত তদন্ত সংস্থাকে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে দ্রুত পরোয়ানা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, একই দিনে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন চলাকালীন রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা আরেকটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলাও ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়েছে। এই মামলায় বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ওই সময় রামপুরায় বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর নেতৃত্ব দেন রেদোয়ানুল ইসলাম। তাঁর সহযোগী হিসেবে ছিলেন মেজর রাফাত বিন আলম মুন, ডিএমপির খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক এডিসি রাশেদুল ইসলাম এবং রামপুরা থানার সাবেক ওসি মশিউর রহমান। শুনানি শেষে আদালত এই চারজনের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের সময় সারা দেশে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, গুম ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল, যা পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে ট্রাইব্যুনালের আওতায় আসে। এখন আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে মামলাগুলো গ্রহণ করায় পুরো প্রক্রিয়া নতুন ধাপে প্রবেশ করল।