ছয় বছরের ব্যবধানে বাজেটে বিদেশী ঋণ সহায়তা নির্ভরতা সাড়ে ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটে বিদেশী নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। সেখানে আগামী অর্থবছরে এই নিট ঋণ সহায়তা প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশী ঋণ সহায়তা একটি হিসাব প্রাক্কলন করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বিশ্বব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ আরো কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ বাজেটে সহায়তা হিসেবে পাওয়া গেছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশী ঋণ ধরা রয়েছে ৭০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিদেশী অনুদান খাতে পাওয়া যাবে আরো চার হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশী ঋণ ও সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৮২০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূলত, বাজেট সহায়তা পাবার কারণে এবারকার বাজেটে বিদেশী সহায়তার অঙ্ক বাড়ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা দাতা সংস্থার কাছ থেকে কোনো ধরনের বাজেট সহায়তা পাচ্ছিলাম না। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। কারণ করোনার কারণে সরকারের পক্ষ থেকে যে বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছিল তাতে এরই মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। বিশ্বব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও এডিবির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বাজেট সহায়তা দেয়া শুরু হয়েছে। ফলে আগামী অর্থবছরে বাজেটে বিদেশী ঋণ সহায়তা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হবে।
এদিকে অর্থ বিভাগের বাজেট ডকুমেন্ট ঘেটে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিট বিদেশী ঋণ সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল ১১ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ৪১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে এখাতে ধরা রয়েছে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা।
এর আগে গত মাসে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে চলতি ও আগামী অর্থবছরের বাজেটে বাড়তি আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর মধ্যে এআইআইবির ( চীনভিত্তিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ব্যাংক) কাছে বাজেট সহায়তা খাতে চলতি অর্থবছরে আর ৫০ কোটি ডলার এবং আগামী দুই অর্থবছরে ৫০ কোটি ডলার ও করোনা মোকাবেলায় ১০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক- এডিবির কাছে চাওয়া হয়েছে ১০০ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর কাছে ৭০ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংকের কাছে চলমান সহায়তার বাইরে ৫০ কোটি ডলার এবং ‘ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ (আইএসডিবি)-এর কাছে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১৫ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে। শুধু বাজেট সহায়তা হিসেবেই নয়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার এরই মধ্যে দাতা সংস্থারগুলোর কাছ থেকে সহায়তা কামনা করেছে। চলতি অর্থবছরে করোনায় স্বাস্থ্যজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাংক ১০ কোটি ডলার, ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ (এডিবি) বাজেট সহায়তাসহ অন্যান্য খাতে ৬০ কোটি ২৩ লাখ ডলার এবং ‘এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক’ (এআইআইবি) ৪৫ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট ক্রেডিটের আওতায় বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রাপ্য ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ২৫ কোটি ডলার দ্রুত ছাড়ের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বেশ কয়েকটি সংস্থা অর্থ ছাড়ও শুরু করেছে।