দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়িয়ে করোনা পরীক্ষার নমুনা জমা দিতে না পারায় লোকজন ওষুধ খাওয়া শুরু করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা চিকিৎসকের পরামর্শের পরিবর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তথ্য নিয়ে ইভারমেকটিলসহ বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে নিচ্ছে। এ ধরনের চিকিৎসায় মানুষের শরীরে অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন।
জানা গেছে, এ মুহূর্তে চট্টগ্রামে যে পরিমাণ লোকজন করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে চান, সে পরিমাণ কিট থাকছে না। তাই তাদের বাধ্য হয়ে নমুনা জমা দিতে দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু প্রতিদিনই ওই লাইনে যোগ হচ্ছেন নতুন রোগী। ফলে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। আবার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে গিয়ে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় থাকেন অধিকাংশ লোক। এ অবস্থায় লোকজন আর পরীক্ষার ওপর ভরসা না করে ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। এ ধরনের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে নানা তথ্য পাওয়া যায়।
নগরীর জামাল খান এলাকার সালাহউদ্দিন নামের একজন বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি, এসব ওষুধ খেলে রোগ ভালো না হলেও শরীরের তেমন একটা ক্ষতি নেই। তেমন কোনো পার্র্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। তাই নিজের করোনা হয়েছে ভেবে নিয়েই ওষুধ খাওয়া শুরু করি। তিনি বলেন, ফেসবুকে এসব ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ পেলেও তা একাধিক গ্রুপ থেকে যাচাই করে নিয়েছি।
কেবল সাধারণ জনগণই নন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও জ্বর কাশি হলে ইভারমেকটিল খাওয়ার জন্য গত সোমবার রাতে এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, কারও জ্বর-কাশি হলেই যেন পরীক্ষার নমুনা দেওয়ার অপেক্ষা না করে ইভারমেকটিল খেয়ে নেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) ও জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশ কমিশনারসহ বর্তমানে চট্টগ্রামে ১৮৯ জন পুলিশ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। করোনা উপসর্গ নিয়ে আছেন অনেক পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে দেখা দিয়েছে করোনা পরীক্ষার কিট সংকট। ফলে এখন ফল পাওয়ার গড় সময় উঠেছে নয় দিনে। অর্থৎ নয় দিন আগে জমা দেওয়া নমুনার ফল আজকে পাওয়া যাচ্ছে। এতে ফল যেমন ভুল আসতে পারে, তেমনি ফল পাওয়ার অপেক্ষায় থেকে রোগী অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাই নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই প্যারাসিটামল, ডক্সিকেপ ও ইভারমেকটিল খেয়ে নিতে বলেছেন।
এর মধ্যে লোকজন ব্যাপকভাবে ইভেরা, স্ক্যাবো, জি থ্রক্স, নাপা একটেন্ড, এইস প্লাস, ফেনাডিন, মোনাস ১০ ইত্যাদি ওষুধ নিয়ে নিয়ে খাচ্ছেন। অনেকে ফার্মেসি থেকেও এসব ওষুধ নিয়ে সেবন করছেন বলে জামাল খান ও হাজারী গলির একাধিক ফার্মেসির মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, যেসব ওষুধের নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসছে, সেগুলো আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় চিকিৎসকরা ট্রায়াল দিয়েছেন। আমাদের দেশেও কিছু কিছু ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে। তবে স্বীকৃতি না থাকায় এভাবে ওষুধ খাওয়ার পার্শ¦প্রতিক্রিয়া আছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মো. শামীম হাসান আমাদের সময়কে বলেন, যে কোনো ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। চমেক হাসপাতালসহ সব সরকারি হাসপাতালের আউটডোর সব সময় খোলা থাকে। সেখানে ফ্লু কর্নার থাকে। এসব জায়গায় গিয়ে পরামর্শ নিয়ে তো ওষুধ খাওয়া যায়। তাতে রোগীরা উপকৃত হবেন।