লা লিগার ফেরার সপ্তাহে লিওনেল মেসি গোল না করলে আড়ম্বর ঠিক পূর্ণতা পায় না। ৯৮ দিন পর মাঠে ফিরে মেসি অবশ্য ম্যাচটা গোল না করেই পার করে দিচ্ছিলেন। তবে ওইটুকু আক্ষেপ আর সঙ্গী হয়নি বার্সেলোনার। যোগ করা সময়ে স্কোরশিটে নাম তুলেছেন তিনিও। শেষ পর্যন্ত বার্সাও জিতেছে সহজেই।
৬৫ সেকেন্ডে আর্তুরো ভিদাল গোল করেই বার্সাকে ছন্দ তুলে দিয়েছিলেন। পরে মার্টিন ব্রাথওয়েট পেয়েছেন বার্সার জার্সিতে প্রথম গোল, দ্বিতীয়ার্ধে জর্দি আলবা যোগ করেছেন অন্যটি, জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো মাঠে নেমেছেন লুইস সুয়ারেজও। সবমিলিয়ে নতুন শুরুটা মন্দ হয়নি বার্সেলোনার।
যোগ করা সময়ের চতুর্থ গোলটা বার্সেলোনার জন্য বোনাসই। জয় নিশ্চিত হয়ে ছিল আগেই। বক্সের ভেতর ডান পায়ে করা মেসির শট মায়োর্কা ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ঢুকে যায় জালে। ওই গোলে অবদান আছে সুয়ারেজেরও। ৫৭ মিনিটে মাঠে নেমে তার নামের সঙ্গেও যোগ হয়েছে এক অ্যাসিস্ট। মেসি বক্সের ভেতর আড়াআড়ি দৌড়ে দুই ডিফেন্ডার ফাঁকি দিয়ে করেছেন শট। তাতে লিগে ২০ গোলের মাইলফলও ছোঁয়া হয়ে গেছে তার। এক যুগ ধরে ধারাবাহিকভাবে লা লিগায় অন্তত ২০ গোল করা একমাত্র ফুটবলারও তিনি। ওর আগেই দুই অ্যাসিস্ট করা হয়ে গিয়েছিল তার। মেসি ম্যাচ শেষ করেছেন এক গোল আর দুই অ্যাসিস্টে।
মায়োর্কার মাঠে বার্সেলোনার শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। ফ্রাঙ্কি ডি ইয়ং বক্সের গোলের ২৫ গজ দূরে কুবোর কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়েছিলেন। জর্দি আলবা ক্রস করেছিলেন বাম প্রান্ত থেকে। ভিদালের শক্তিশালী হেড জালে জড়ালে এগিয়ে যায় বার্সা।
ব্রাথওয়েট, মেসিদের সঙ্গে আক্রমণভাগে শুরু করেছিলেন অ্যান্টোয়ান গ্রিযমান। তিনি সুয়ারেজের বদলি হওয়ার আগ পর্যন্ত মাঠে ছিলেন না থাকার মতোই। তবে ব্রাথওয়েট সুযোগ হাতছাড়া করেননি। বক্সের ভেতর মেসির হেড থেকে বল পেয়েছিলেন ড্যানিশ স্ট্রাইকার। বলটা কেবল জায়গামতো মারতে হত, ব্রাথওয়েট মারলেন টপ কর্নারে। ৩৭ মিনিটের ভেতর বার্সাও ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফেলল তাতে।
পয়েন্ট টেবিলের ১৮ তে থাকা মায়োর্কার জন্য ম্যাচটা কঠিনই হওয়ার কথা ছিল। তার ওপর শুরুতে গোল খেয়ে আরও চাপে পড়ে যাওয়ার কথা ছিল মায়োর্কার। তবে সময়ে সময়ে বার্সার রক্ষণে তারাও চোখ রাঙিয়েছে। বার্সেলোনা একাডেমির সাবেক খেলোয়াড়ই প্রথমার্ধে আশার আলো দেখাচ্ছিলেন মায়োর্কাকে। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ধারে মায়োর্কায় খেলতে এসে গোল করে বসলে, কুবোই হয়ত আলো কাড়তে পারতেন বেশি। গতির সঙ্গে স্কিলের সমন্বয়ে কুবো বার্সার বিপক্ষে যা করেছেন, তাতে খুশিই হওয়ার কথা রিয়ালের।
প্রথমার্ধে কুবোর বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া বাম পায়ের জোরালো শট ঠেকিয়ে মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান অবশ্য নায়ক হতে দেননি তাকে। আরেক দফায় তার ফ্রি কিকও আটকে দিয়েছিলেন স্টেগান। বিরতির পর পর আন্তে বুদিমিরও ভালো একটি শট করেছিলেন, তবে সেটা গেছে বাইরে দিয়ে। অ্যাওয়ে ম্যাচের জুজুটা ফাঁকা মাঠে তখন ভালোভাবেই পেয়ে বসেছিল বার্সাকে।
শর্ত মতো মাঠ ছিল ফাঁকা। যেখানে গুনে গুনে ২০০ লোক ঢুকেছে মাঠে, বাইরে আরও ১০০ নিরাপত্তাকর্মী পাহারা দিয়েছে, সেখানেও পিচ ইনভেডরের হাত থেকে রেহাই মেলেনি। অমন নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে ঠিকই এক সমর্থক ঢুকে গিয়েছিলেন মাঠে। মেসির আর্জেন্টিনার জার্সি পরে দূর থেকে আবার সেলফিও তুলেছেন আলবার সঙ্গে। দর্শকদের কৃত্রিম শব্দের সঙ্গে পিচ ইনভেডর- টেলিভিশন দর্শকদের বিনোদনটা হয়েছে তাই সাধারণ ম্যাচের মতোই!
পুরনো চেহারা বদলায়নি বার্সার রক্ষণেরও। নিষেধাজ্ঞার কারণে এই ম্যাচে খেলা হয়নি ক্লেমেন্ত ল্যাংলেটের। স্যামুয়েল উমতিতিও ছিলেন না। ২১ বছর বয়সী রোনাল্ড আরাউহো সঙ্গী হয়েছিলেন জেরার্ড পিকের। বড় লিড থাকায় দ্বিতীয়ার্ধে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি বার্সার রক্ষণকে। তবে কিকে সেতিয়েন নিশ্চয়ই পরের ম্যাচগুলোতে এর চেয়ে ভালোকিছুই প্রত্যাশা করবেন।
প্রায় ৫ বছর পর ক্লিন শেভ করে মাঠে নামলেও মেসি ছিলেন আগের মতোই ভয়ঙ্কর। শঙ্কা কাটিয়ে তার একাদশে ফেরাই ছিল খবর। ম্যাচ শেষে তো তিনিই আবার হলেন শিরোনাম। জুনের গরমের কথা মাথায় রেখে দুই অর্ধে ছিল পানি পান বিরতিও। দ্বিতীয়ার্ধের ওই বিরতির পরই মেসির পাস থেকে আলবা পেয়ে যান ম্যাচের তৃতীয় গোল। মাঝ মাঠ থেকে মেসি বল মেরেছিলেন উঁচিয়ে, আলবা এরপর বাম প্রান্ত ধরে বক্সের ঢুকেছেন। বাম পায়ে বল মেরেছেন কাছের পোস্টের বটম কর্নারে।
পাঁচ বদলির সবগুলোই কাজে লাগিয়েছে দুই দল। তবে বদলি হিসেবে নেমে একমাত্র সুয়ারেজই প্রভাব বিস্তার করেছেন।
বড় জয়ের পরও অবশ্য দম ফেলার সময় নেই কারও। পয়েন্ট টেবিলে বার্সা এখন ৫ পয়েন্টের লিডে শীর্ষস্থানে। রিয়াল মাদ্রিদ এইবারের বিপক্ষে জিতলেই অবশ্য সেই ব্যবধান নেমে যাবে দুইয়ে। বুধবার রাতে আবার মাঠে নামবেন মেসিরা। এবারও রেলিগেশন এড়াতে ব্যস্ত থাকা আরেক দল লেগানেসের বিপক্ষে।
সূত্র : প্যাভিলিয়ন