সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ন

নিউইয়র্ক সিটি সচলের দ্বিতীয় ধাপ ২৩ জুন থেকে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২০ জুন, ২০২০
  • ২৩৮ বার

করোনা মহামারিতে ক্ষত-বিক্ষত নিউইয়র্ক সিটিতে লকডাউন শিথিলের প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে ৮ জুন। দীর্ঘ ৮২ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর ঐ দিন থেকে এই সিটির কন্সট্রাকশন ব্যবসা, কল-কারখানা এবং রাস্তার পার্শ্ববর্তী দোকান খোলার অনুমতি দেয়া হয়। দোকানে কেনা-কাটার সুযোগ নেই। যারা অনলাইনে অর্ডার দিয়েছেন তারাই শুধুমাত্র পন্য পিকআপন করছেন। একইঅবস্থা পাইকারি স্টোরেও। প্রথম ধাপের পর ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রয়েছে। ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকায় ২৩ জুন সোমবার থেকে দ্বিতীয় ধাপে পদার্পণ করার যোগ্যতা অর্জন করছে বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্ক সিটি।

১৮ জুন এক প্রেস ব্রিফিংকালে স্টেট গভর্ণর এ্যান্ড্রু ক্যুমো নিউইয়র্কবাসীকে ধন্যবাদ জানান স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্যে। স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে স্টেট গভর্ণর বলেন, সর্বশেষ বুধবার এই সিটিতে মোট ৬৮৫৪১ জনের করোনা টেস্ট হয়েছে। এরমধ্যে পজিটিভ পাওয়া গেছে মাত্র ৬১৮ জনের অর্থাৎ ০.৯% এরও কম। এদিন মারা গেছে ২৯ জন। তবে এর আগের তিন দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭, ১৮ এবং ২৫। স্টেট গভর্ণর বলেন, এই পরিস্থিতি তৈরী করা সম্ভব হয়েছে সকলেই আন্তরিক অর্থে মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করায়। প্রথম ধাপের মত দ্বিতীয় ধাপে পদার্পনের পরও এসব বিধি মেনে চলতে হবে। রেস্টুরেন্টের বারান্দায় সীটিং ব্যবস্থা করা যাবে মোট জায়গার অর্ধেকে ৬ ফুট অন্তর। ভেতরে বসে খাবারের সুযোগ তৈরী হবে এরও ১৪ দিন পর অর্থাৎ তৃতীয় ধাপে। রেস্টুরেন্টের কর্মচারিরা সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকবেন। গ্রাহকেরাও খাবার শুরু পর্যন্ত মাস্ক ব্যবহার করবেন। এ ধাপে অফিষ, রিয়েল এস্টেট কোম্পানী, গাড়ির ডিলারশীপের স্টোর খুলবে। তবে সকলকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। অফিসের স্টাফকে বসতে হবে ৬ ফুট অন্তর। স্টোরের কর্মচারি এবং সেবা নিতে আসা লোকজনের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে। ইতিপূর্বে স্টেট গভর্ণর এক নির্বাহী আদেশে বলেছেন যে, মাস্ক ছাড়া কোন গ্রাহককে গ্রোসারি, রিটেইল অথবা অন্য যে কোন দোকানে প্রবেশাধিকার দেয়া হবে না। এর ব্যতয় হলে ঐ স্টোর-মালিকের জরিমানা হবে। সে সময় সেলুন, বডি ম্যাসেজ, থেরাপি সেন্টার, বিউটি পার্লারও একইবিধি অনুসরণ সাপেক্ষে খোলার অনুমতি থাকবে। সর্বোচ্চ ১০ জন একত্রিত হয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে মিটিং করতে পারবেন বলে গভর্ণরের ঘোষণায় বলা হয়েছে। মসজিদগুলোতেও একই প্রক্রিয়ায় ২৫ জনের বেশী মানুষের নামাজ আদায় করার অনুমতি নেই। প্রসঙ্গেত: উল্লেখ্য যে, করোনা মহামারিতে নিউইয়র্ক স্টেটে মারা গেছে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা পর্যন্ত (ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী ) ৩১ হাজার মানুষ। এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগ্রহে যে সব স্টেট আগেই লকডাউন শিথিল করেছে সেগুলোর অধিকাংশকেই এখন খেসারত দিতে হচ্ছে জীবনের বিনিময়ে। অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, ওকলাহোমা, অরেগন, টেক্সাস, নেভাডাসহ অন্তত: ১০টি স্টেটে নতুন করে সংক্রমণের হার চরমে উঠেছে। এহেন অবস্থাকে ‘ট্রাম্পের ঐতিহাসিক ভুল’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এ্যান্ড্রু ক্যুমো বলেন, হোয়াইট হাউজের গড়া করোনাভাইরাসের উপদেষ্টা পরিষদের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণের অনুরোধ উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার রাজনৈতিক মতলব হাসিলের দায় চাপিয়েছেন উপরোক্ত স্টেটের সাধারণ নাগরিকের ওপর। তারা এখন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। কিন্তু নিউইয়র্কসহ আশপাশের স্টেটগুলো ট্রাম্পের ইচ্ছার কাছে সমর্পিত হইনি বলে এখন পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অর্থনীতিকে সচল করার জন্যে মানুষের জীবনকে জিম্মি করতে আমরা রাজি হইনি-জোর দিয়ে বলেন ক্যুমো। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ফ্লোরিডায় বৃহস্পতিবার নতুন কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে ৩২০৭ জনের। এই স্টেটে করোনা তান্ডব শুরুর পর এটাই সর্বাধিকসংখ্যক সংক্রমণের ঘটনা বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। এ নিয়ে মোট ৮৬ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ফ্লোরিডায়। সূর্যোদয়ের এই স্টেটকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পরবর্তী মহামারি-কেন্দ্র হিসেবে ভাবছেন। ফ্লোরিডার মতো অবস্থা বিরাজ করছে আলাবামা, আরিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা, নর্থ ক্যারলিনা, ওকলাহোমা, ওরেগণ, সাউথ ক্যারলিনা এবং টেক্সাস স্টেটেও। গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যানে প্রতিদিনই ব্যাপকহারে সংক্রমণের তথ্য জমা হচ্ছে বলে জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি জানায়।

টেক্সাসে ২,৬২২ জন এবং আরিজোনায় ২,৩৯২ জন সংক্রমিত হবার তথ্য এসেছে বুধবার। ওকলাহোমা, ওরেগন এবং নেভাদাতেও একদিনের হিসাবে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ধরা পড়েছে বৃহস্পতিবার। গত ২৩ মে এ রাজ্যগুলোতে সংক্রমণের যে হার ছিল তার তুলনায় সংক্রমণ অনেক বেড়েছে। হাসপাতালগুলোতেও রেকর্ড সংখ্যক রোগী আসছে। অ্যারিজোনার একটি মেডিকেল সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে কেবল একটি শয্যাই খালি ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসাকর্মীরা। আরো অন্তত ১০ টি স্টেটে গত দুসপ্তাহ ধরেই বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা পর্যন্ত ২২ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি মানুষের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১২০,৬৮৮ জন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com