যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাথমিক নির্বাচনে একঝাঁক বাংলাদেশি প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। গত মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এসব প্রার্থীর ঐতিহাসিক ভরাডুবির খবরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
পরাজিত বাংলাদেশি প্রার্থীরা হলেন-বদরুন খান মিতা, শানিয়াত চৌধুরী, মেরী জোবায়দা, মাহফুজ ইসলাম, জয় চৌধুরীসহ আরও ১০ জন। এদের মধ্যে কমিটি ওম্যান পদে জামিলা আক্তার উদ্দিন এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তার জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই।
যদিও চূড়ান্ত ফলাফল পেতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে। কেননা অনুপস্থিত ভোটারের ভোট গণনা এখনো বাকি রয়েছে। নির্বাচনে বরাবরের মতো ভোটার উপস্থিতির সংখ্যা কম থাকলেও এবারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের সংখ্যা বেশি অংশ নেওয়ায় কমিউনিটির অংশগ্রহণ ছিল লক্ষ্যণীয়।
এ নির্বাচনে ইউএস কংগ্রেসে দুজন, স্টেট অ্যাসেম্বলিতে তিনজন, বাংলাদেশি-আমেরিকান এবং ডিস্ট্রিক্ট লিডারসহ বিভিন্ন পদে অন্তত ১৫ জন বাংলাদেশি বংশদ্ভূত অংশ নেন। এর আগে নিউইয়র্ক থেকে নতুন প্রজন্মের এত সংখ্যক বাংলাদেশি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি।
করোনাভাইরাস মহামারিতে এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় বোর্ড অব ইলেকশন অফিস অনুপস্থিত ভোটারের ব্যালটের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফলে বোর্ড অব ইলেকশন অফিস নিউইয়র্কের ৭ লাখের বেশি ভোটারের ঠিকানায় ব্যালট পেপার পাঠিয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।
মঙ্গলবার প্রাথমিক নির্বাচনে বাংলাদেশি প্রার্থীদের মধ্যে ইউএস কংগ্রেসওম্যান পদে নিউইয়র্কের কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট-১৪ থেকে বদরুন্নাহার মিতা এবং কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট-৫ থেকে শানিয়াত চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নিউইয়র্ক স্টেটের অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ (কুইন্স ব্রিজ, লং আইল্যান্ড সিটি, সানি সাইড, উডসাইড, ম্যাসপাথ ও রিজউড) থেকে অ্যাসেম্বলিওম্যান পদে মেরী জোবায়দা, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-২৪ থেকে মাহফুজুল ইসলাম এবং অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৪ থেকে জয় চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এ ছাড়াও ডেমোক্র্যাট দলীয় ডিস্ট্রিক্ট লিডার পদে অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-২৪ থেকে ফিমেল লিডার পদে মৌমিতা আহমেদ, মেল লিডার পদে মাহতাব খান ও ইশতিয়াক চৌধুরী, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩২ থেকে মেল লিডার পদে মোহাম্মদ চৌধুরী ও ফিমেল লিডার পদে মোবাসসেরা বেগম, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে ফিমেল লিডার পদে সাঈদা আক্তার, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৫৪ থেকে মেল লিডার পদে নাফিজ আই চৌধুরী, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৮৭ থেকে মেল লিডার পদে এন মজুমদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
অপরদিকে, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-২৪ থেকে জুডিলিয়াল ডেলিগেট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোহাম্মদ এম রহমান। নিউ ইয়র্কের স্টেট অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-২৪ থেকে কমিটিওম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জামিলা আক্তার উদ্দিন।
সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলাফলে মঙ্গলবারের নির্বাচনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত নিউইয়র্কের কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট-৬ থেকে পুন:নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং। তার প্রতি বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশির সমর্থন ছিল বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট-৫ থেকে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন প্রবীণ ও বর্তমান কংগ্রেসম্যান গ্রেগরী মিক্স বিজয়ী হয়েছেন। তার সঙ্গে প্রাইমারিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তরুণ রাজনীতিক বাংলাদেশি-আমেরিকান শানিয়াত চৌধুরী। এই আসনে কংগ্রেসম্যান গ্রেগরী মিক্স-এর প্রাপ্ত ভোট ৩৩ হাজার ৯৭টি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশি-আমেরিকান শানিয়াত চৌধুরী পেয়েছেন ৮ হাজার ৯৮৬ ভোট।
বাংলাদেশি অধ্যুষিত কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট-১৪ থেকে পুন:নির্বাচিত হলেন বর্তমান কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্ডার ওকাসিও-কর্টেজ। তিনি পেয়েছেন ২৭ হাজার ১০৩ অর্থাৎ ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। এই আসনের অপর প্রার্থীদের মধ্যে মাইকেল কাসু-ক্যাবরেনা পেয়েছেন ৭ হাজার ২৫৪ অর্থাৎ ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট, বদরুন খান পেয়েছেন ২ হাজার ৩০ অর্থাৎ ৫ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট আর স্যামুয়েল স্লোয়ান পেয়েছেন ৯২৩ অর্থাৎ ২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট।
নিউইয়র্ক স্টেটের অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ আসনে বিজয়ী বর্তমান অ্যাসেম্বলিওমান ক্যাথেরিন নোলান পেয়েছেন ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৪ হাজার ৩১৪ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মেরী জোবায়দা পেয়েছেন ৩৩ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ৭১১ ভোট। এই আসনের ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে মেরী জোবায়দার আসন দ্বিতীয়।
অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৪ আসনে বিজয়ী প্রার্থী জেসিকা গঞ্জালেজ-রোজাস পেয়েছেন ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ৫১৪ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জয় চৌধুরী পেয়েছেন ১৫ দশমিক ১ শতাংশ অর্থাৎ ৯৪৩ ভোট। এই আসনের ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে জয়ের আসন তৃতীয়।
বাংলাদেশি অধ্যুষিত নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট পদে ডনোভান রিচার্ড ৩৯ হাজার ৮৬১ অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এই পদের অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে এলিজাবেথ ক্রাউলী পেয়েছেন ৩০ হাজার ৭০৪ অর্থাৎ ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট, কস্টা কন্সটানটিনিডিস পেয়েছেন ১৬ হাজার ০৩৬ অর্থাৎ ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট, এন্থনী মিরান্ডা পেয়েছেন ১৬ হাজার ৩৬ অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট। আর দাও ইয়াইন পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৪১ অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট।