বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ মার্চে ধরা পড়লেও বিশে^ চলতি বছরের প্রথম থেকেই করোনা ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণ এড়াতে বিশে^র দেশগুলো সাধারণ ছুটি ও লকডাউন ঘোষণা করে। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য। করোনার ভয়ঙ্কর ছোবল ফুটে উঠেছে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফায়। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমেছে। এ ছাড়া ১ এপ্রিল ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকের সুদ আয় অনেক কমে গেছে।
গতকাল ছিল ব্যাংক হলিডে। লেনদেন বন্ধ রেখে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যক্রমের প্রাথমিক হিসাব-নিকাশ করেছে ব্যাংকগুলো। তবে এটি চূড়ান্ত নয়। পরবর্তী সময়ে যাচাই-বাছাই করে এ হিসাব চূড়ান্ত করা হবে। প্রাথমিক হিসাবে দেখা যায় অধিকাংশ ব্যাংকের মুনাফা কমেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, এনসিসি ব্যাংকের মুনাফা ৩৬৫ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ২৯০ কোটি টাকা। সাউথইস্ট ব্যাংকের মুনাফা কমেছে ৩২ শতাংশ। ব্যাংকটির মুনাফা ৫০৫ কোটি টাকা থেকে কমে ৩৪২ কোটি টাকায় নেমেছে। আর পূবালী ব্যাংকের মুনাফা ৫৪০ কোটি টাকা থেকে ২৫ শতাংশ কমে হয়েছে ৪০৫ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংকের মুনাফা ৩৩০ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ৩১৭ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংকের মুনাফা ৩১০ কোটি টাকা থেকে ৩০ কোটি টাকা কমে ২৮০ কোটি টাকায় নেমেছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ২৪৩ কোটি টাকা, আগের বছরের জুনে যা ছিল ৩৩১ কোটি টাকা। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা ২৭৮ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা ১০০ কোটি টাকা কমে হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৪০৫ কোটি টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা ৩২০ কোটি টাকা থেকে ২৪৭ কোটি টাকায় নেমেছে। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের ২৬৮ কোটি টাকা থেকে কমে ২০২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা হয়েছে।
নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের মুনাফা ৯০ কোটি টাকা থেকে কমে ৭০ কোটি টাকা এবং মেঘনা ব্যাংকের মুনাফা ৪৪ কোটি টাকা থেকে কমে মাত্র ১২ কোটিতে নেমেছে।
করোনা সংকটের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের মুনাফা ৭৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩০ কোটি টাকা। এনআরবিসি ব্যাংকের মুনাফা ১ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। মধুমতি ব্যাংকের মুনাফা ২৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৯৮ কোটি টাকা।
মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সফিউল আজম বলেন, করোনা হঠাৎ করে এসেছে। তবে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকরের জন্য আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল। আমার নো কস্ট এবং লোকস্ট আমানত সংগ্রহ এবং ব্যাংকের অপ্রাসঙ্গিক ব্যয় কমাতে কয়েক বছর ধরে পরিকল্পনামাফিক কাজ করছি।
তবে পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন, কর ও অন্যান্য জমা বাদ দেওয়ার পর প্রকৃত মুনাফা পাওয়া যায়। করোনার কারণে এ বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো ঋণ খেলাপি হয়নি। ঋণ খেলাপি না হলে ব্যাংকের সুদ আয় বাড়ে। এতে মুনাফাও বাড়তি দেখায়। তবে অনেক খেলাপি ঋণ রয়েছে যেগুলো আদায় হবে না কিন্তু নিয়মের কারণে এই ঋণকে খেলাপি দেখানো হয়নি। এ ঋণগুলোর বিপরীতে সুদ আয় দেখানো হয়েছে। যে পরিমাণ পরিচালন মুনাফা দেখানো হয়েছে তা কাগুজে আয়ের ভিত্তিতে। প্রকৃতপক্ষে করোনার কারণে ব্যাংকগুলোর মুনাফা আরও কম হয়েছে। আাবার যেহেতু খেলাপি ঋণ কম তাই প্রভিশন কম করতে হবে। এ জন্য প্রকৃত মুনাফা তুলনামুলক বেশি হবে। কাগুজে মুনাফা ব্যাংকগুলোকে প্রকৃত অবস্থাকে আড়াল করে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
এ ছাড়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ১ এপ্রিল থেকে ক্রেটিড কার্ড ছাড়া সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর হয়েছে। তার আগে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকের মুনাফায় প্রভাব পড়েছে।