নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাইমারী নির্বাচনের চুড়ান্ত ফলাফল আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২৩ জুন মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ভোটারদের সরাসরি ভোট গণনা শেষ হলেও অ্যাবসন্টেী ব্যালট ভোট এখনো গণনা শেষ না হওয়ায় নির্বাচনের চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে ইউএস ডাক বিভাগে অ্যাবসেন্টী ব্যালটের জ্যাম লেগেছে। অনেক ভোট এখনো ডাক বিভাগে জমা পড়েছে এবং সেগুলো বোর্ড অব ইলেকশন অফিসে প্রেরণ করা হচ্ছে।
অপরদিকে একাধিক বাংলাদেশী-আমেরিকান প্রার্থী সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। কেননা তাদের মধ্যে কেউ কেউ ২০০, ৫০০ বা দেড়/দুই হাজার ভোটের ব্যাবধানে ২৩ জুনের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা অ্যাবসেন্টী ভোটে তাদের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি এবারের নির্বাচনে বিশেষ করে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত অন্তত ১৫জন নতুন প্রজন্ম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়ে নিউইয়র্কে মূলধারার রাজনীতিতে নাড়া দিয়েছেন। ফলে আমেরিকার রাজনীতিতে তাদের আগামী দিনে বিপুল সম্ভবাবনা দেখছেন রাজনৈতিক মহল। এই প্রার্থীদের অধিকাংশই ছিলেন সিনেটর বার্ণি সেন্ডার্স-এর সমর্থক এবং প্রগ্রেসিভ ধারার। তারা সদস্য গঠিত বাংলাদেশী-আমেরিকান ফর পলিটিক্যাল প্রগ্রেস (বিএপিপি বা বাপ) এর সদস্য। মূলধারার রাজনীতিতে তারা এবারই প্রথম সরাসরি ভোটের নির্বাচনে অংশ নেন।
উল্লেখ্য, সদ্য অনুষ্ঠিত প্রাইমারী নির্বাচনে ইউএস কংগ্রেসে ২জন, ষ্টেট অ্যাসেম্বলীতে ৩জন বাংলাদেশী-আমেরিকান এবং ডিষ্ট্রিক্ট লীডার সহ বিভিন্ন পদে একাধিক বাংলাদেশী বংশদ্ভুত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রার্থীদের নিয়ে এখন চলছে জয়-পরাজয়ের চুলচেরা বিশ্লেষন। এই নির্বাচনে মাত্র একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রার্থী মোহাম্মদ এম রহমান জয়ী হয়েছেন। তিনি অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ থেকে জুডিলিয়াল ডেলিগেট পদের প্রার্থী ছিলেন। খবর ইউএনএ’র।
গত ২৩ জুন মঙ্গলবারের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, এই নির্বাচনে সমচেয়ে আলোচিত প্রার্থী ছিলেন নিউইয়র্ক ষ্টেটের অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৩৭ (কুইন্স ব্রীজ, লং আইল্যান্ড সিটি, সানি সাইড, উডসাইড, ম্যাসপাথ ও রিজউড) থেকে অ্যাসেম্বলীওম্যান পদে লড়ছেন মেরী জোবায়দা। তার জয়ের ব্যাপারে অনেকেই ছিলেন আশাবাদী। নির্বাচনে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী প্রবীণ ও বর্তমান অ্যাসেম্বলীওম্যান ক্যাথেরিন নোলান-এর চেয়ে অর্ধেক ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। প্রথমবারের মতো নির্বাচন করে একজন শক্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এবং শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করায় আগামী দিনের জন্য কমিউনিটির অনেকেই নতুন করে ভাবছেন মেরী জোবায়দা-কে নিয়ে।
পাশাপাশি ইউএস কংগ্রেসের অন্যতম শক্তিশালী সদস্য কংগ্রেম্যান গ্রেগরী মিক্স-এর সাথে প্রথমবার নির্বাচন করে কংগ্রেশনাল ডিষ্ট্রিক্ট-৫ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আলোচিত হয়েছেন সানিয়াত চৌধুরী। একই রকম আলোচিত প্রার্থী হচ্ছেন অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ এর প্রার্থী মাহফুজুল ইসলাম, অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৩৪ এর জয় চৌধুরী, অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ থেকে ফিমেল ডিষ্ট্রিক্ট লীডার মৌমিতা আহমেদ ও মেল ডিষ্ট্রিক্ট লীডার মাহতাব খান। অপরদিকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন নিউইয়র্কের ষ্টেট অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্র্রিক্ট-২৪ থেকে কমিটিওম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জামিলা আক্তার উদ্দিন।
এবারের ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারী নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আরো যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তারা হলেন: ইউএস কংগ্রেশনাল ডিষ্ট্রিক্ট-১৪ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কংগ্রেসওম্যান পদে বদরুন্নাহার মিতা, অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ থেকে ডিষ্ট্রিক্ট লীডার পদে ইশতিয়াক চৌধুরী, অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৩২ থেকে মোহাম্মদ চৌধুরী ও মোবাসসেরা বেগম, অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৩৯ সাঈদা আক্তার এবং অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৫৪ থেকে লড়ছেন নাফিজ আই চৌধুরী।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৩ জুন মঙ্গলবারের প্রাইমারী নির্বাচনে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলকার প্রার্থীদেও প্রাথমিক ফলাফল নিম্নরূপ:
# বাংলাদেশী অধ্যুষিত নিউইয়র্কের ইউএস কংগ্রেশনাল ডিষ্ট্রিক্ট-৬ থেকে পুন: নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং। তার প্রতি বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর সমর্থন রয়েছে।
# কংগ্রেশনাল ডিষ্ট্রিক্ট-৫ থেকে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন প্রবীণ ও বর্তমান কংগ্রেসম্যান গ্রেগরী মিক্স। তার প্রাপ্ত ভোট ৩৩,৩৬৭ অর্থাৎ ৭৭ দশমিক ৩% ভোট। তার সাথে প্রাইমারীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তরুণ রাজনীতিক বাংলাদেশী-আমেরিকান সানিয়াত চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ১০.৮০৩ ভোট অর্থাৎ ২২ দশমিক ৪% ভোট।
# বাংলাদেশী অধ্যুষিত কংগ্রেশনাল ডিষ্ট্রিক্ট-১৪ থেকে পুন: নির্বাচিত হলেন বর্তমান কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্ডার ওকাসিও-কর্টেজ। তিনি পেয়েছেন ২৭,৪৬০ অর্থাৎ ৭২ দশমিক ৪% ভোট। এই আসনের বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রার্থী বদরুন খান পেয়েছেন ২,০৪০ অর্থাৎ ৫ দশমিক ৪% ভোট।
# বাংলাদেশী অধ্যুষিত নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেট ডিষ্ট্রিক্ট-৩২ থেকে পুন: নির্বাচিত হলেন বর্তমান সিনেটর লুইস সেপুলভেদা। যিনি বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ‘লুইস ভাই’ নামে সমধিক পরিচিত। এই আসনে লুইস সেপুলভেদা পেয়েছেন ৭,০৫৫ অর্থাৎ ৫৩ দশমিক ৭% ভোট। অপর প্রার্থীদের মধ্যে পামেলা স্টেওয়ার্ট-মার্টিনেজ পেয়েছেন ৪,৫০৩ অর্থাৎ ৩৪ দশমিক ৩% ভোট
আর জন পেরেজ পেয়েছেন ১,৫৪০ অর্থাৎ ১১ দশমিক ৭% ভোট।
# এবারের নির্বাচনে ব্যাপক আলোচিত নিউইয়র্ক ষ্টেটের অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৩৭ আসনের আলোচিত প্রার্থী মেরী জোবায়দা পেয়েছেন ২,৭১১ ভোট অর্থাৎ ৩২ দশমিক ৯% ভোট। এই আসনে বিজয়ী বর্তমান অ্যাসেম্বলীওমান ক্যাথেরিন নোলান পেয়েছেন ৪,৩১৪ ভোট অর্থাৎ ৫২ দশমিক ৩% ভোট। এই আসনের ৩জন প্রার্থীর মধ্যে মেরী জোবায়দার অবস্থান দ্বিতীয়।
# অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৩৪ আসনে বিজয়ী জেসিকা গঞ্জালেজ-রোহাম পেয়েছেন তার এই আসনে বিজয়ী জেসিকা গঞ্জালেজ-রোজাস পেয়েছেন ২,৫১৪ ভোট অর্থাৎ ৪০ দশমিক ৩৬% ভোট। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত জয় চৌধুরী পেয়েছেন ৯৪৩ ভোট অর্থাৎ ১৫ দশমিক ১% ভোট। এই আসনের ৫জন প্রার্থীর মধ্যে জয়ের অবস্থান তৃতীয়।
# বাংলাদেশী অধ্যুষিত অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ আসনে বিজয়ী বর্তন অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিড ওয়েপ্রীন পেয়েছেন ২,২৪৪ ভোট অর্থাৎ ৪৬ দশমিক ৩৭% ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বি বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মাহফুজুল ইসলাম পেয়েছেন ১,৩৫৯ ভোট অর্থাৎ ২৯ দশমিক ৩৯% ভোট। তিনজন প্রার্থীও মধ্যে তার অবস্থান দ্বিতীয়।
# অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ আসনের ফিমেল ডিষ্ট্রিক লীডার পদে বিজয়ী মার্থা টেইলর পেয়েছেন ১,৩১৯ ভোট। অপরদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মৌমিতা আহমেদ পেয়েছেন ১,২৫৩ ভোট।
# অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ আসনের ফিমেল ডিষ্ট্রিক লীডার পদে বিজয়ী ডেভিড ওয়েপ্রীন পেয়েছেন ১,৪৩১ ভোট। অপরদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মাহতাব খান পেয়েছেন ১,২০৭ ভোট।
কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট পদে ডনোভান রিচার্ড এগিয়ে
বাংলাদেশী অধ্যুষিত নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট পদে ডনোভান রিচার্ড ৩৯,৮৬১ অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ৮% ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এই পদের অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে এলিজাবেথ ক্রাউলী পেয়েছেন ৩০,৭০৪ অর্থাৎ ২৮ দশমিক ৪% ভোট, কস্টা কন্সটানটিনিডিস পেয়েছেন ১৬,০৩৬ অর্থাৎ ১৫ দশমিক ৫% ভোট, এন্থনী মিরান্ডা পেয়েছেন ১৬,০৩৬ অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৮% ভোট আর দাও ইয়াইন পেয়েছেন ৪,৮৪১ অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫% ভোট।
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হয় এবারের ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাইমারী নির্বাচন। ফলে এই নির্বাচনে অ্যাবসেন্টি ব্যালট ভোটিং-এর ওপর বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়। এজন্য বোর্ড অব ইলেকশন ঘরে ঘরে ব্যালট পেপার প্রেরণ করে। ফলে অনেক ভোটার মেইলিং ভোটে ভোট দিয়েছেন। পোষ্ট অফিসগুলোতে মেইলিং ভোটের জ্যাম পড়ে গেছে। ভোটগুলো নির্বাচন অফিসে পৌছাতে হিমশিম খাচ্ছে পোস্টাল সার্ভিস।
গেলো প্রাইমারী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভুতরা আগামী দিনে নির্বাচনী মাঠ ছাড়ছেন না বলে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন। তারা বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেই এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা কারাই ছিলো আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে আমরা জয়ী হয়েছি। আমাদের মধ্যে অনেকই অল্প ব্যবধানের ভোটে হেরেছেন। এটা আমাদের কমিউনিটির অনৈক, ভোটার না হওয়া, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া প্রভৃতি কারণে হয়েছে। তারা বলেন, সময় আত্ম সমালোচনার, পরনিন্দা বা পরচর্চা নয়। তবে আমরা আশা করবো এবারের ভুল-ত্রুটি শুধরে আগামীতে ভালো করবো, জয় ছিনিয়ে নেবো। আবার কেউ কেউ আগামী দিনে নির্বাচনে অংশ না নিলেও কমিউনিটির সেবায় নিয়োজিত থাকবো, দলের জন্য কাজ করবেন বলে জানান।