মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ অপরাহ্ন

মাঠ কাঁপানো আরিফ এখন ৪০০ টাকার রাজমিস্ত্রীর যোগালী!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০
  • ২২২ বার

একসময় ফুটবলের মাঠ কাঁপাতেন তিনি। মাঠের রক্ষণভাগের বাঘা বাঘা ডিফেন্ডার পেরিয়ে বিপক্ষ দলের জালে ফুটবল পৌঁছালেও জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে করছেন লড়াই। জীবিকার তাগিদে সংসারের অভাব মেটাতে বাংলাদেশ পেশাদার লীগে মাঠ কাঁপানো স্ট্রাইকার আরিফ এখন রাজমিস্ত্রীর যোগালী।

সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা বছরে পাওয়া দেশের প্রথম শ্রেণীর স্বনামধন্য টিমে অংশ নেয়া স্ট্রাইকার আরিফ এখন ৪০০ টাকা রোজে রাজমিস্ত্রীর কাজ করছেন। যার পায়ে একসময় শোভা পেতো ফুটবল। তার মাথায় এখন কংক্রিটের বস্তা।

কারোনকালে কোনো টিম তাকে নেয়নি। আগে যা রোজগার করেছিলেন সেই টাকা দিয়ে বাবাকে দিয়েছিলেন ব্যবসা করতে। কিন্তু লোকসান হওয়ায় পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। বাবা স্ট্রোক করেন দুই বার। কথায় বলে ‘বিপদ যখন আসে চারদিক থেকে আসে’।

২০১৯ সালে আড়াই লাখ টাকা বার্ষিক চুক্তিতে চ্যাম্পিয়নস লীগ অগ্রণী ব্যাংক, ২০১৭-১৮ মৌসুম শেখ জামাল টিমে ৬ লাখ, ২০১৬ সাল ৩ লাখ টাকা আরামবাগ কেসি ও ২০১৫ বি লীগ বিজেএমসিতে আড়াই লাখ টাকা চুক্তিতে টিমে সুযোগ পায় আরিফ। কিন্তু কোনো টিমে ডাক না পেয়ে তার জীবনে নেমে আসে বেকারত্ব। সংসার টানতে ও পেটের ক্ষুধা মেটাতে শেষতক গত দেড় মাস ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে মাত্র ৪০০ টাকায় যোগালীর কাজ করছেন আরিফ হাওলাদার।

শুক্রবার বাদ জুম্মা নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার গাবতলীর বাসিন্দা আরিফ হাওলাদারকে শহরের গলাচিপা চেয়ারম্যান বাড়ির নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে যোগালীর কাজ করা অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই সময় নিজের জীবনের দুর্দশার কথা জানিয়ে লজ্জায় কাউকে বলতে পারেননি বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন আরিফ।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরিফ বলেন, করোনাকালে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। ৬ লাখ টাকা বার্ষিক চুক্তি ছিল শেখ জামাল টিমে। যা টাকা কামিয়েছিলাম বাবাকে দিয়েছিলাম ব্যবসা করতে। বাবা পরিবহন ব্যবসা করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে প্রায় সব টাকা খুইয়ে ফেলেন। এর মধ্যে এই কারোনাকালে আমাকে কোনো টিম চুক্তিতে নেয়নি। ২০১৯ সালে ঢাকা চ্যাম্পিয়নস লীগে অগ্রণী ব্যাংকে বার্ষিক ৩ লাখ চুক্তিতে খেলতে থাকি। কিন্তু ২০২০ সালের কোনো টিম আর ডাকেনি। এতে বেকার হয়ে যাই। টিম না পাওয়ার কারণে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে আমার বাবা দুই বার স্ট্রোক করেছেন। বাসা ভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালা খারাপ ব্যবহার ও অন্যদিকে ঘরে অভাব। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেই কারো কাছে হাত পাতব না। নেমে পড়ি যোগালী কাজে। গত দেড় মাস যাবত কাজ করে যাচ্ছি। বাসার কেউ জানত না আমি যোগালী কাজ করছি। কোনো সময় এই কাজ করিনি বলে পা কেটে গেছে। কিন্তু আর গোপন রাখতে পারলাম না। অনেককে নানা কৌশলে নিজের সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। হয়তো কেউ উপলব্দি করতে পারেনি। আর লজ্জায় ভেবেছি কারো কাছে হাত পাতার চেয়ে খেটে খাওয়া ভালো। মাত্র ৮ম শ্রেণীর পর্যন্ত পড়াশোনা করছি।

আরিফের যোগালী জীবনে কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে আরিফের মা মফিজা বেগম বলেন, সংসারে অভাব মেটাতে আমার ছেলেটা যোগালী কাজ করছে আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। কিন্তু ওর পায়ে কাটা ছেড়া ও শরীর ব্যাথা কথা শুনে সন্দেহ হয়। পরে এলাকার অনেক মানুষ জানায় আমার ছেলে আমাদের সংসারের অভাব মেটাতে যোগালীর কাজ করছে। এই বলেই তিনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।

আরিফ আরো জানান, আমি বেঁচে থাকতে আমার বাবা-মা না খেয়ে থাকবে তা হতে পারে না। আমি খেঁটে খেতে চাই। আমি আমার যোগ্যতা প্রমাণ করে ফুটবলে ফিরতে চাই।

আরিফের বাবা শাজাহান হাওলাদার জানান, জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৩, ১৪ ১৬ কিশোর থেকেই ফুটবলে সুযোগ পেয়েছিল। ওর যা পুঁজি ছিল আমি ব্যবসা করতে গিয়ে খুঁইয়ে ফেলেছি। আমি গর্বিত আমার সন্তান নিয়ে যে, সে কারো কাছে হাত পাতেনি। কর্ম করে সংসারের অভাব মেটানোর চেষ্টা করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com