বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৬ অপরাহ্ন

বাংলাদেশী কারাম চৌধুরী হলেন নিউইয়র্ক পুলিশের ক্যাপ্টেন

বাংলাদেশ রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯
  • ৩৬৪ বার

যুক্তরাষ্ট্রে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার তিলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কারাম চৌধুরী (৩৯) নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) নির্বাহী কর্মকর্তা ‘ক্যাপ্টেন’ হচ্ছেন । আগামী ৩০ অক্টোবর, বুধবার, নিউইয়র্ক পুলিশের সদর দপ্তর ‘ওয়ান পুলিশ প্লাজা’য় আড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে তাকে ক্যাপ্টেন পদোন্নতি দেওয়া হবে।
সূত্রে জানা যায়, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তার এই পদে এ পর্যন্ত কারাম চৌধুরীসহ তিনজন বাংলাদেশি আমেরিকান পদোন্নতি পেলেন। এর আগে কারাম চৌধুরীর খালাতো ভাই সিলেটের আরেক সন্তান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং পারোল আহমেদ ক্যাপ্টেন হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন। এদিকে বাংলাদেশি আমেরিকান মিলাদ খান ক্যাপ্টেন হিসাবে পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন। নিউইয়র্ক পুলিশে বাংলাদেশি অফিসারদের একের পর এক সাফল্যে দারুণ খুশী বাংলাদেশি কমিউনিটিও।
কারাম চৌধুরী বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার তিলাগাঁও গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন চৌধুরীর একমাত্র পুত্র কারাম চৌধুরী ১৯৯৩ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। লেখাপড়া ও বেড়ে ওঠা নিউইয়র্কেই। পড়ালেখা শেষ করে নিউইয়র্কের ফাইন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট-এ চাকরি করেছেন। কিন্তু ইচ্ছা ছিল চ্যালেঞ্জিং কোনো পেশায় আসার। আর তাই ২০০৫ সালে যোগ দিলেন নিউইয়র্ক পুলিশের অফিসার পদে। ধাপে ধাপে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অফিসার থেকে সার্জেন্ট ও লেফটেন্যান্ট এবং সর্বশেষ পেলেন নির্বাহী কর্মকর্তার পদ।
কারাম চৌধুরী জানান, ‘পুলিশের চাকরিতে সেবা করার সুযোগ বেশী। সেই সেবার মানসিকতা নিয়েই পুলিশের চাকরি বেছে নেই। আমি খুব খুশি। এই পদোন্নতিতে এখন আরো সেবা করার সুযোগ বাড়লো। তিনি জানান, আমি বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য কাজ করতে চাই। কারণ বাংলাদেশই আমার শেকড়।’

৭ বছর বয়সে বাবাকে হারানো কারাম চৌধুরী পদোন্নতির এই মুহূর্তে বাবাকে ভীষণ মনে পড়ছে জানিয়ে বলেন, আজ বাবা থাকলে খুব খুশি হতেন, যেমনটি আমার মা খুশি হয়েছেন। স্ত্রী বেগম চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ক্যাপ্টেন পরীক্ষার আগে একটানা আট মাস আমাকে পড়াশোনা করতে হয়েছে। এই সময়টাতে একমাত্র ছেলেকে সামলানোসহ সংসারের সব দেখভাল করেছেন স্ত্রী। মায়ের দোয়া ও স্ত্রীর সহযোগিতা না পেলে তিনি এ পর্যন্ত আসতে পারতেন না বলে জানান কারাম চৌধুরী।
নিউইয়র্ক পুলিশে বাংলাদেশিদের জয়জয়কার উল্লেখ করে কারাম চৌধুরী স্বপ্ন দেখেন, একদিন নিউইয়র্ক পুলিশের নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরাই। এখন নিউইয়র্ক পুলিশে বাংলাদেশিদের যোগদান বাড়ছে। বর্তমানে সাড়ে তিনশ পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছে এনওয়াইপিডিতে। তাদেও মধ্যে তিনজন ক্যাপ্টেন, ১৫জন লেফটেন্যান্ট, ২৮ জন সার্জেন্ট ও অন্যরা অফিসার পদে কর্মরর্ত। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগে ম্যানেজার ও সুপাইভাইজারসহ এজেন্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছেন আরো সহস্রাধিক। তিনি জানান, অফিসার থেকে ক্যাপ্টেন হতে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। ক্যাপ্টেন থেকে শীর্ষপদ পর্যন্ত আর কোনো পরীক্ষা নেই। দক্ষতা, যোগ্যতা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্যাপ্টেন থেকে যে কেউ পুলিশ কমিশনারও হতে পারেন। দিন দিন এই সাফল্যে নতুনরা পুলিশে যোগ দিতে উৎসাহ পাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে উঠলেও চিন্তা চেতনা ও মননে কারাম চৌধুরী একজন পুরোদস্তুর বাংলাদেশি। অনর্গল বাংলা বলেন। তাদের সন্তানসহ পরিবারের সবাই বাংলা চর্চা করেন বলে জানান তিনি। পেশাগত কাজের বাইরে অবসরে ভ্রমণ খুব পছন্দ কারাম চৌধুরী। সময় দেন প্রাণের সংগঠন বাপায়। পুলিশে নিয়োগসহ বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রমে অংশ নেন, নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করেন। পরিবারের আরো চারজন সদস্য নিউইয়র্ক পুলিশে কর্মরত বলে জানান কারাম চৌধুরী।
ক্যাপ্টেন হিসাবে যোগদানের পর একমাসের প্রশিক্ষণে যাবেন কারাম চৌধুরী। এখানে উল্লেখ্য, ৬৩ বছর বয়স পর্যন্ত নিউইয়র্ক পুলিশের চাকরি করা যায়। সে হিসাবে আরো ২৫ বছর চাকরি করতে পারবেন তিনি। সে লক্ষ্য নিয়েই কারাম চৌধুরী স্বপ্ন দেখেন আরো সামনে এগিয়ে যাবার।
কারাম চৌধুরী নিউইয়র্কে বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) ইভেন্ট কো-অর্ডিনেটর। নিউইয়র্ক পুলিশের হিরো এবং বাপা’র মিডিয়া লিয়াজোঁ ডিটেকটিভ জামিল সারোয়ার জনি জানান, কারাম চৌধুরীর এই সাফল্যে বাপা গর্বিত এবং সংগঠনে তার নেতৃত্বও ব্যাপক প্রশংসিত।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com