বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন

সিনেমা হল খুলতে সমস্যা কোথায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০
  • ২৩৭ বার

করোনার দাপটে মার্চ মাসে দেশে প্রথম সিনেমা হল বন্ধ হয়েছিল। আগামী মাসেও যে প্রেক্ষাগৃহ খুলবে, এমন নিশ্চয়তা এখন অবধি নেই। এদিকে তিন-চার বছর ধরে ডিজিটালে ছবি রিলিজের যে রীতি শুরু হয়েছিল, অতিমারি ও লকডাউন সেই বুনিয়াদ বেশ মজবুত করে দিয়েছে। বড় তারকার ছবি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি, দেশজ ও আন্তর্জাতিক সিরিজ… ডিজিটালে আয়োজনের কমতি নেই।

বাংলা ছবির মার্কেট ছোট। মূলত উৎসব বা ছুটির মৌসুমকে কেন্দ্র করে একাধিক ছবি আসে সিনেমা হলে। কিন্তু ওটিটি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া দর্শক কি এর পর সিনেমা হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখবেন? কী এমন ছবিতে থাকতে হবে, যা দর্শককে হলে যেতে বাধ্য করবে? টলিউডের অনেক পরিচালক আশাবাদী। তবে দুশ্চিন্তার মেঘ যে একেবারে নেই, তাও নয়। করোনাকে সঙ্গী করেই সবাইকে চলতে হবে। তাই সিনেমা হল খুলতে সমস্যা কোথায়? এই প্রশ্ন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের।

করোনাকে বাংলা ছবির ক্ষেত্রে ‘আশীর্বাদ’ বলে মনে করছেন অনেকেই। আমরা বরাবরই তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পছন্দ করি। সেটা আমাদের বিচারিক স্বভাবের জন্য। ওটিটির পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে ‘গেল গেল রব’ উঠেছে, তা মানতে একদম প্রস্তুত নই। বড় পর্দার জন্য বিপদ নয় ওটিটি। বরং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যেভাবে ছবির চাহিদা বেড়েছে, সেটা চলচ্চিত্রশিল্পকে ‘ডিফাইন’ করেছে। হল বন্ধ থাকা সাময়িক চিন্তার কারণ। আগামী বছর শুরুর দিকেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মিটিং, মিছিল, র‌্যালিতে মানুষের যেমন আগ্রহ, বাংলা ছবি দেখতেও দর্শক হলে আসবেন। কিন্তু সারা শহর মাস্ক পরে হাঁটছে… এমন দৃশ্য তো দুবছর আগেও লোকের কল্পনায় ছিল না। তাই এর পর বাংলায় অনেক নতুন কাজ হবে এটাই প্রত্যাশা।

হিন্দি ছবির পাশাপাশি বাংলা, মারাঠি ও দক্ষিণের আঞ্চলিক ভাষার ছবিগুলো বরাবরই স্বকীয়তা ধরে রেখেছে। ছবি বাঙালির কাছে বিনোদন নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু। আগামী দশ-পনেরো বছরে সিনেমা হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখার ট্রেন্ড অন্তত বদলাবে না।

ওটিটি নিয়ে উৎসাহ শুধু শহরাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। মফস্বলে ওটিটির ধারণা এখনো স্পষ্ট নয়। ওরা দেখে ঠিকই, কিন্তু যে পরিমাণ ফ্রি-নেট একটি ছবি দেখার জন্য লাগে, সেই আর্থিক সঙ্গতি ওদের সব সময় থাকে না। তবে আগামী দিনে বাংলা ছবির জন্য হলে দর্শক টেনে আনা যে বড়সড় চ্যালেঞ্জ, তা মেনে নিতেই হবে নির্মাতাদের।

বাকিদের মতো অতটাও আশাবাদী নন প্রযোজকরা। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাংলা ছবি বিক্রি করে যে টাকা আসে, তাতে খরচ ওঠে না। উপরন্তু পাইরেটেড ভার্সন সহজেই পাওয়া যায়। তাই এই ট্রেন্ড বহাল থাকলে, তা বাংলা ছবির ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা হবে। একটা সময়ে হলে বাংলা ছবি দেখতে দর্শক যেতেন না। হালে সেই ট্রেন্ড কিছুটা বদলেছিল সিনেপ্লেক্সের জন্য। কিন্তু দর্শক আবার হলে ভিড় করবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।

ছবির ক্ষেত্রে বিভাজন আগামী দিনে আরও স্পষ্ট হবে। কিছু ছবি ওটিটির জন্যই তৈরি হবে। কিছু ছবি আবার বড় পর্দার জন্য। বিষয়ের সঙ্গে বদলে যাবে ট্রিটমেন্ট। কিন্তু ওটিটির জন্য বড় পর্দার মান ক্ষুণœ হবে, সেটা মানতে নারাজ আমি।

‘নিউ নর্মাল’ বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও যে কার্যকর হবে, তা শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাই পরিচালকদের ভেবে রাখা স্ক্রিপ্ট আগামী দিনে কি আদৌ বাস্তবায়িত হবে? নাকি নতুন করে ভাবতে হবে সবাইকে। ছবির বাজেট এখন গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রযোজকের ধার্য করা বাজেটে যে ছবি করা যায়, সেটাই করবেন পরিচালকরা।

কঠিন সময়, কঠিন পরিস্থিতি। কঠিন দায়িত্ব বাংলার পরিচালকদেরও হাতে। দর্শককে হলে আনার জন্য তাদের রণকৌশল বদলাতে হবে। যত কিছুই বদলাক, সিনেমা হল আগে খুলতে হবে। তা না হলে সংশ্লিষ্টরা কীভাবে বুঝবেন আসলে দর্শক কী চাচ্ছে। তাই করোনাকালে এখন সবকিছুই খুলে যাচ্ছে, সিনেমা হল কেন বাদ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমা হল খোলা এখন সময়ের দাবি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com