শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন

পিইসি, জেএসসি ও সমমান পরীক্ষা বন্ধ নয়, বিকল্প ভাবা যেতে পারে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০
  • ২৬৭ বার

আমাদের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির ওপর কোভিড-১৯ মহামারীর যে বিরূপ প্রভাব তা সর্বব্যাপী। কিন্তু এর মধ্যেও গুরুত্বের দিক থেকে সম্ভবত সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হলো শিক্ষা খাতে। প্রায় একটি বছরজুড়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়, ক্লাস, লেখাপড়া ইত্যাদি স্বাভাবিক কার্যক্রমের বাইরে। সংক্রমণের ঝুঁকি, মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক এবং লকডাউন, সঙ্গনিরোধ ইত্যাদি আমাদের জীবনের সাথে এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে যে, লেখাপড়া বলে যে একটি বিষয় আছে তা যেন ভুলতে বসেছে শিক্ষার্থীরা।
মহামারীর কারণে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষ হয়ে আসছে। স্বাভাবিক নিয়মে আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা হওয়ার কথা স্কুলগুলোতে। সরকারের সুচিন্তিত সিদ্ধান্তে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার যে কার্যক্রম চলছে তা সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে সুফল দেয়নি এটা ঠিক; কিন্তু কিছু শিক্ষার্থীর জন্য লেখাপড়ার অভ্যাস ধরে রাখার অনুকূল হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।
এখন শোনা যাচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও সমমান এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সমমান পরীক্ষা বাতিল করা হতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠাতে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ। প্রধানমন্ত্রী সে প্রস্তাব অনুমোদন দিলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পিইসি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় জেএসসি ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করবে। পিইসিতে প্রায় ৩০ লাখ এবং জেএসসিতে প্রায় ২৫ লাখ মিলিয়ে প্রায় ৫৫ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন এই সিদ্ধান্তের সাথে জড়িত। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ডÑ এই আপ্তবাক্য উচ্চারণ না করেও বলা যায়, ৫৫ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন জাতির মেরুদণ্ডের মজবুতির জন্য মোটেই অগ্রাহ্য করার মতো কোনো বিষয় নয়। যদি দু’টি পরীক্ষাই বাতিল করা হয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করে দেয়া হয়, তাহলে তাদের জীবনে কী প্রভাব পড়বে তা গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। এর আগে একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা-উত্তর দেশে অটো-প্রমোশন দেয়া হয়েছিল। সেটি জাতীয় জীবনের একটি বিশেষ মুহূর্ত ছিল। জাতি রীতিমতো এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত-বিপর্যস্ত হয়েছিল। সেই বিপন্ন সময়ের সাথে বর্তমান মহামারীর সময় তুলনীয় কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, আমরা দেখছি অর্থনীতির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ গার্মেন্টসহ অনেক শিল্পকারখানা চালু আছে। ঘরে বসে হলেও সরকারি অফিস-আদালতে কাজ হয়েছে। সম্প্রতি সরকারি দফতরে কর্মীদের সশরীরে হাজির হতে বলা হয়েছে। বেসরকারি অফিস, ব্যবসায়-বাণিজ্য, যানবাহন চলছে। মানুষ ঘরের বাইরে এসেছে এবং সামাজিক মেলামেশা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। যদিও মহামারীজনিত সতর্কতা অর্থাৎ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মানুষ স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরছে, তবু এ কথা বলাই যায়, একটি নতুন স্বাভাবিক সময় আমাদের সামনে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় শুধু শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করার যৌক্তিকতা কতটুকু সেই প্রশ্ন উত্থাপন অসঙ্গত হবে মনে হয় না।
পরীক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের যথাযথ মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রমোশন দেয়ার জন্য বিকল্প কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সেটি ভেবে দেখা যেতে পারে। শিক্ষাবর্ষ দুয়েক মাস বাড়ানো, সিলেবাস কাটছাঁট করে পরীক্ষা নেয়াÑ এ রকম বিকল্প এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছে। আমাদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী দেশের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন; যাতে ৫৫ লাখ শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক জীবনধারা ব্যাহত না হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com