শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন

অর্থবছরের প্রথম মাসে রাজস্ব আদায়ে ধস

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০
  • ২৪১ বার

অর্থবছরের প্রথম মাসে রাজস্ব আদায়ে ধস নেমেছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ১৯ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। কিন্তু এই সময় প্রকৃত পক্ষে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ৭ হাজার ৪৪ কোটি টাকা কম। শতকরা হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৩৬ শতাংশ। আর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় কম হয়েছে ২২ শতাংশ। এনবিআর ও অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এই বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম বলেছেন, অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাই মাসের রাজস্ব আদায়ের হিসাব এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি তবে তুলনামূলকভাবে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। কিন্তু এখন যেহেতু আমদানি-রফতানি বাড়ছে তাই রাজস্বও বাড়তে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রীর সাথে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে অর্থ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

এনবিআরের প্রাথমিক হিসেবে জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি (২২ ভাগ) হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর খাত। এ খাতে জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ছিল সাত হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় করা সম্ভব হয়েছে মাত্র তিন হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এরপর ব্যর্থতার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আয়কর খাত। এই খাতের জন্য জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেয়া ছিল চার হাজার ২১৯ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় করা সম্ভব হয়েছে তিন হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। একইভাবে আমদানি শুল্কের টার্গেট ছিল সাত হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে চার হাজার ৯২৮ কোটি টাকা।

এ দিকে এনবিআরের রাজস্ব আদায় কম হলে এবার বাজেট ঘাটতি আরো বেড়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বাজেট ঘাটতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআর খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা রয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর আদায় করতে হবে এক লাখ ৩ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। ভ্যাট থেকে আদায় করতে হবে এক লাখ ২৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। সম্পূরক শুল্ক থেকে ৫৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা, আমদানি শুল্ক ৩৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা এবং আবগারি শুল্ক থেকে আদায় করতে হবে তিন হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা।

এনবিআর সূত্র জানায়, বিগত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। আদায়কৃত এই রাজস্ব পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২.৪৫ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা হলো তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এতে এবারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ৫১ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে। এর বিপরীতে প্রথম মাসে আগের বছরের একই সাময়ের তুলনায় কম রাজস্ব আদায় হয়েছে ২২ শতাংশ। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর পিছিয়ে পড়ল ৭৭ শতাংশের মতো।

এবারের বাজেট তৈরির সময়েই এনবিআর থেকে মূল বাজেটের তুলনায় এক লাখ কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এর পরও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা মাত্র সাড়ে ২৫ কোটি টাকা কমানো হয়। শেষ পর্যন্ত মূল বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে এক ৭ হাজার কোটি টাকার মতো।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আগের বছরের রাজস্ব আদায়ে বিপুল ঘাটতির কারণে এবারের যে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে তা কখনো অর্জন করা সম্ভব হবে না। এতে সরকারের বাজেটের ব্যয় সংকুলান করতে হিমসিম খেতে হবে। এর মধ্যে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমতে শুরু করেছে। ফলে সরকারের বাজেটের রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতা সামাল দিতে হলে ব্যাংক খাত থেকে আরো বেশি হারে ঋণ নিতে হবে। এবার ব্যাংক খাত থেকে ৮৫ হাজার কোটি টাকা নেবার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। তবে গতবার ৪৭ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণ ৮২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এবার এই অঙ্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটি বলা যাচ্ছে না। তবে প্রথম মাসেই ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র থেকে জানা গেছে। এ ধারা চলতে থাকলে বেসরকারি খাতের জন্য ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে বলে ব্যবসায়ী নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে তা অর্জন করা করোনাকালীন এই সময়ে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এর আগে শুধু একবার রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ। এবার খুব বেশি হলে এই প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১২ শতাংশ হতে পারে।

এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যে সম্ভব নয় তার প্রমাণ রয়েছে গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের দিক তাকলে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এনবিআরকে তিন লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আদায় ব্যর্থতার কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৫ হাজার কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় তিন লাখ ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে তাও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এই সময় রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮২ হাজার কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com