মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ভয়ঙ্কর জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রতিষ্ঠাতা এবং শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদির মৃত্যুর খবর যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করার পর বিশ্লেষকরা মনে করছেন এর প্রভাব অন্য জঙ্গিদের ওপরও পড়বে। তারা মনে করছেন, বাগদাদির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশে আইএস ভাবাদর্শে বিশ্বাসীরা ক্রমে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে বাগদাদির মৃত্যুতে হতাশ হয়ে পড়লেও একেবারে যে ধ্বংস হয়ে যায়নি তা জানান দিয়েছে আইএস। বাগদাদির মৃত্যুর পরই নিজেদের নতুন শীর্ষ নেতা হিসেবে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সেনাবাহিনীর সাবেক এক অফিসারকে বেছে নিয়েছে জঙ্গি গ্রুপটি।
নিউজউইক, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইম, মেইল অনলাইনসহ আরও কিছু পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম বলছে, বাগদাদির মৃত্যুর পর তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবদুল্লাহ কারদিশ ওরফে হাজি আবদুল্লাহ আল আরাফির হাতে এসেছে আইএসের নেতৃত্ব। বাইরের দুনিয়ায় অনেকটাই অচেনা কারদাশ আইএস জঙ্গিদের কাছে ‘প্রফেসর’ বা ‘দ্য ডেস্ট্রয়ার’ হিসেবেও পরিচিত। আইএসের মুখপত্র আমাক এজেন্সি জানিয়েছে, সংগঠনের মুসলিমবিষয়ক বিভাগ পরিচালনার জন্য কারদাশকে গত আগস্টে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বাগদাদি। এখন বাগদাদির অনুপস্থিতিতে তিনিই আইএস প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন।
স্থানীয় সময় গত শনিবার রাতে সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব ইদলিব প্রদেশে বাগদাদির গোপন ঘাঁটিতে অভিযান চালায় মার্কিন সেনাবাহিনীর এক বিশেষ দল। ওই গোপন ঘাঁটিতেই লুকিয়ে ছিলেন নিজেকে ইসলামের শেষ খলিফা দাবি করা জঙ্গি নেতা বাগদাদি। গতকাল রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, শনিবারের ওই অভিযানে মার্কিন বাহিনীর তাড়া খেয়ে একটি বদ্ধ সুড়ঙ্গে নিজের গায়ে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বাগদাদি। ছিন্নভিন্ন শরীরের ডিএনএ পরীক্ষা করে বাগদাদির পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা কারদাশের জন্ম ইরাকের সুন্নি অধ্যুষিত তাল আফার শহরে। ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনী ইরাক আক্রমণের পর গ্রেপ্তার হন কারদাশ। তার বিরুদ্ধে জঙ্গি গ্রুপ আল কায়দার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগ ওঠে। সে সময় ইরাকের উম কাসর এলাকায় অবস্থিত বুক্কা বন্দিশিবিরে বাগদাদির সান্নিধ্যে আসেন কারদাশ। পরবর্তীতে যোগ দেন আইএসে। নির্মম ও কঠোর চরিত্রের কারণে তিনি অচিরেই আইএস জঙ্গিদের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হন।
এদিকে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন এক খবরে দাবি করেছে, ওসামা বিন লাদেনের মতো বাগদাদির মরদেহও সম্ভবত সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এনবিসি নিউজের এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও ব্রায়েন বলেন, বাগদাদির মরদেহ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সেটি যথাযথভাবেই নিষ্পত্তি করা হবে। লাদেনের মতো বাগদাদির মরদেহও সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হবে বলেই আমি আশা করি।