বন্ধু সুয়ারেজের সঙ্গে চুক্তি বাতিল এবং দলে থেকে যেসব বাড়তি সুবিধা পেতেন, তা ত্যাগ করা- নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কর্তৃত্বপরায়ণ এমন আচরণ মেনে না নিতে পারায় বার্সেলোনায় আর না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। এরপর স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, দল ছাড়লে কোথায় যাবেন মেসি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বলছে, আর্জেন্টিনার এই মহাতারকাকে দলে নিতে বিশ্বের যেকোনো ক্লাব আগ্রহী থাকবে। কিন্তু এবারে বিষয়টা জটিল, ক্লাবের আনুষ্ঠানিক প্যাডে মেসির সই নিতে আসলে খুব অল্প ক্লাবই প্রস্তুত। তাদের মধ্যে একটি ম্যানচেস্টার সিটি। মেসি তার ক্লাব ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন পেপ গার্দিওলার অধীনেই। তিনি সিটির কোচ। তালিকায় নাম আছে ইন্টার মিলানেরও।
মেসির দুই প্রিয় বন্ধুর একজন সার্জিও অ্যাগুয়েরো এবং সেস ফ্যাব্রেগাস। অ্যাগুয়েরো বহু বছর ধরে খেলছেন ম্যানচেস্টার সিটিতে। ক্লাবটির ইতিহাসের সফলতম ফুটবলারও তিনি। সেস ফ্যাব্রেগাসও ইংলিশ ফুটবলে খেলেছেন বহুদিন। তাই প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে মেসির ধারণা আছে ব্যাপক। তা ছাড়া মেসিকে আকাশচুম্বী বেতন দিতেও সক্ষম ম্যানচেস্টার সিটি।
ইংলিশ ফুটবলের সফলতম ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও মেসিকে নিতে চাইবে। সম্প্রতি দলটির ট্রান্সফার মার্কেটে ব্যাপক ভুল ধরা পড়েছে। ইউনাইটেডের বর্তমান মালিক গ্ল্যাজার পরিবারের ওপর ক্ষুব্ধ সমর্থকরা। তাই এই পরিস্থিতি নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে মেসিকে দলে ভেড়াতে চাইবেন গ্ল্যাজার। অর্থ এখানে কোনো ব্যাপারই না।
ইংল্যান্ডের বাইরে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে প্যারিসের নাম। এবার ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতায় রানার আপ হয়েছে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। দুটি আলাদা ক্লাবের মালিক এই দলটির আছে অর্থ এবং জৌলুস। নেইমারের সঙ্গে খেলেছেন মেসি। তাই দুজনের ডানা মেলে মাঠ ওড়ার বিষয়টা পিএসজি আবারও সমর্থকদের দেখাতে চাইবে।
লিও যেতে পারেন ছোটবেলার ক্লাব নিউয়েল ওল্ড বয়েজেও। আর্জেন্টিনার রোজারিওর এই ক্লাবেই মেসি শৈশবে বেড়ে ওঠেন। মেসি আসতে পারেন এশিয়াতেও। মেসির সাবেক দুই সতীর্থ জাভি ও ইনিয়েস্তা এখন এশিয়াতেই ফুটবল নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। জাভি কাতারে কোচের দায়িত্বে আছেন, ইনিয়েস্তা জাপানে।
কোচের কর্তৃত্বপরায়ণ আচরণে বার্সা ছাড়ছেন মেসি!
একটি ফ্যাক্সের মাধ্যমে বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষকে দলে আর না থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। দল ছাড়ার কারণ হিসেবে চারটি কারণ সামনে এসেছে। তা হলো- করোনা মহামারির কারণে ক্লাব যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তা থেকে কাটিয়ে উঠতে মেসিকে ব্রিক্রি করতে চায় বার্সা। নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কর্তৃত্বপরায়ণ আচরণ মনে না ধরা, নিজের ভবিষ্যতেরও ভালো না দেখতে পাওয়া এবং বর্তমান দল নিয়ে অসন্তুষ্টতা।
ফুটবল বিষয়ক সংবাদমাধ্যম গোল ডট কম তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। তবে মূল কারণটা বাস্তবিকভাবেই নতুন কোচের সঙ্গে বনিবনা না হওয়া। কারণ দলের অধিনায়ক হিসেবে মেসির যেমন কোচের সঙ্গে আলাপা-আলোচনার দরকার আছে। ঠিক তেমনি কোচ রোনাল্ড কোম্যানেরও দায়িত্ব তার শীষ্যদের অধিনায়কের সঙ্গে সম্পর্কের দৃঢ় সেতু তৈরি করা।
কিন্তু বর্তমান দলের ঘোলাটে পরিস্থিতি ও লিওনের মেসির ক্ষোভের কারণে কোম্যানের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ তেমন ভালো হয়নি। তিনি অনেকটাই কর্তৃত্বপরায়ণ আচরণ দেখিয়েছেন। আলাপের পর অধিনায়ক-কোচের পরিকল্পনাও গোপন থাকেনি। দল নিয়ে মেসি ও কোম্যানের পরিকল্পনাও গণমাধ্যমগুলোতে সহজে চলে আসে। আর এতেই মেসির ক্ষোভ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। নতুন করে এও জানা গেছে, কোম্যানের বিমেষ একটি কথা ভালো লাগেনি বার্সার রেকর্ডম্যানের।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম দেপোর্তিভো কুয়াত্রো তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, কোম্যানের সঙ্গে কথা বলে ভালো অনুভব করতে পারেননি মেসি। হতাশ হয়েছেন। প্রথমত, প্রিয় বন্ধু সুয়ারেজের সঙ্গে বার্সার চুক্তি বাতিল। দ্বিতীয়ত, দলে থেকে মেসি যেসব বাড়তি সুবিধা পেতেন, তা ত্যাগ করা। এ দুটি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না মেসি। বার্সাও রোনাল্ড কোম্যানকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘স্কোয়াডে যেসব বিশেষ সুবিধা পেতে, সেসবের দিন শেষ। তোমাকে এখন দলের জন্য সবকিছু করতে হবে। আমি এ ব্যাপারে অনড় থাকব। তোমাকে সবসময় ক্লাব নিয়েই চিন্তা করতে হবে।’
এই বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নেননি বার্সার মূল স্তম্ভ লিওনেল মেসি। যে কারণে প্রায় ঠিক করে ফেলেন তিনি বার্সেলোনা ছাড়বেন। যে ক্লাব থেকে নিজের জাত বিশ্বকে চিনিয়েছেন, ভালোবাসার ক্লাবকে জানিয়ে দিয়েছেন, আলাদা হয়ে যাওয়াই এখন শ্রেয়। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, একটি বুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে মেসি তার দলকে জানিয়েছেন, তিনি আর থাকতে চাচ্ছেন না। তবে বার্সেলোনার সভাপতি চান, মেসি তার ক্লাবে থেকেই ক্যারিয়ার শেষ করুক।