শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ অপরাহ্ন

সোনালী ব্যাংক হঠাৎ মূলধনে ভরপুর

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০
  • ২১৬ বার

নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতিতে ভুগছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক। গত মার্চেও দেশের সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা; কিন্তু মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে জুনে মূলধন ঘাটতি মিটিয়ে উদ্বৃত্ত অবস্থায় গেছে ব্যাংকটি। জুন শেষে প্রয়োজনের তুলনায় ৩ কোটি টাকা বেশি মূলধন সংরক্ষণ করেছে ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক সূত্র জানায়, নীতিগত নানা ছাড়ের কৌশলে মূলধন উদ্বৃত্ত দেখানো হয়েছে।

সোনালী ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। তিন মাস পর মার্চে তা কিছুটা কমে হয় ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর জুনে এসে এই ঘাটতি পূরণ করে ব্যাংকটির মূলধন ৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে।

আন্তর্জাতিক ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুসারে কোনো ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকা বা মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি, তা মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণ খারাপ হয়ে পড়লে সেই অনুপাতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। আবার খারাপ ঋণের ওপর অতিরিক্ত মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো বিভিন্ন কেলেঙ্কারির পর দীর্ঘদিন ধরে মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে।

সোনালী ব্যাংক সূত্র জানায়, গত জুন শেষে ব্যাংকটি ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে ৫৩ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। ব্যাংকের সম্পদ বলতে বোঝায় গ্রাহকের মাঝে বিতরণ করা ঋণ। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় ঋণঝুঁকি, বাজারঝুঁকি ও পরিচালনঝুঁকি পরিমাপ করে জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ১৭ কোটি টাকা। এর ১০ শতাংশ হারে ৫ হাজার ৪০২ কোটি টাকা মূলধন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল; কিন্তু ব্যাংকটি সংরক্ষণ করেছে ৫ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা, যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। ব্যাংকটির মূলধন পর্যাপ্ততার হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ০১ শতাংশ।

এই বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) সুভাষ চন্দ্র দাস বলেন, খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ছাড় গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত মোতাবকে নতুন বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করার আগ পর্যন্ত মূলধন হিসাবায়নে এই ছাড় গ্রহণ করা যাবে। প্রভিশন সংরক্ষণ করলে আয় কমে গিয়ে মুনাফা কমে যায়, এর ফলে মূলধনও কমে। আর ছাড় পাওয়ার কারণে মুনাফা বাড়ে।

সোনালী ব্যাংকের আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় আমাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ যেমন কমেছে, তেমনি মুনাফাও বেড়ে গেছে। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ কম হওয়ার কারণে মূলধন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাও কমেছে। তাই মূলধন ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্ত দেখাচ্ছে। এই ছাড় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

সূত্র জানায়, হলমার্ক কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের অকুস্থল দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে সোনালী ব্যাংকের। নিয়ম অনুযায়ী প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকটি। জুনে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ৮৯২ কোটি টাকা। যদিও মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ১০ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা আর প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে ২ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি সত্বেও ব্যাংকটি প্রকৃত মুনাফা দেখিয়েছে ২৭১ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকটি প্রভিশন সংরক্ষণসহ বিভিন্ন নীতি সংরক্ষণ থেকে অব্যাহতি নিতে ৭ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা ছাড় নিয়েছে। ওই ছাড় বাদ দিলে ব্যাংকটির মুনাফার পরিবর্তে লোকসান দাঁড়াত ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর জুনে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৯৫৩ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন, কর প্রদানসহ অন্য ব্যয় সংরক্ষণের পর প্রকৃত মুনাফা বের করা হয়।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ১ লাখ ১১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা মূলধন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল; কিন্তু ঘাটতিতে থাকা ১০ ব্যাংক ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মূলধন সংরক্ষণ করেছে। ব্যাংকগুলো মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা মূলধন সংরক্ষণ করেছে। মূলধন পর্যাপ্তের হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের, ১০ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৩ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১৫৯ কোটি টাকা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ঘাটতি ১ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। এ ছাড়া সাবেক ফারমার্স বা বর্তমান পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি ২০ কোটি টাকা। যাত্রা শুরুর পর বিভিন্ন অনিয়ম-জালিয়াতির কারণে পদ্মা ব্যাংক ঘাটতিতে রয়েছে। নতুন কার্যক্রম শুরু করা কমিউনিটি ব্যাংকের ঘাটতি ১৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির কোনো ঋণ খেলাপি হয়নি, তবে নিয়ম অনুযায়ী বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে কিছু নতুন মূলধন বাড়ানোর বাধ্যবাধকতা দেখা দিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com