ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক মাফিয়া সিজার এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। ঢাকায় তার বড় ধরনের কোনো মিশন থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। মাফিয়া ডন আজিজ মোহাম্মদ ভাই তার উকিল শ্বশুর বলে জানা গেছে। সিজার অনেক দিন ধরে কানাডায় অবস্থান করলেও হঠাৎ তার ঢাকায় আসার বিষয়টি নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সিজারের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। খুন-জখম, অবৈধ সম্পদ অর্জন, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, অপরের জমি দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রাজধানীর বনানীতে গৃহপরিচারিকাসহ আমেরিকা প্রবাসী ফারুক হত্যা, গেন্ডারিয়ার সন্ত্রাসী ঠেডা মালেক হত্যাসহ বেশ কয়েকটি হত্যার অভিযোগ রয়েছে সিজারের বিরুদ্ধে। লালবাগের কুখ্যাত অস্ত্র ব্যবসায়ী হাতকাটা আমান ছিল সিজারের বড় ধরনের অস্ত্র সরবরাহকারী। ফ্রিডম আমানকে মাতুয়াইল কোনাপাড়ায় আশ্রয় দিয়ে তার সব অস্ত্র নিজ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর সিজারের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যারহস্য আজো অজানা অনেকের কাছে। দনিয়ার স্থানীয় প্রভাবশালী যুবক আদিলকে হত্যা করে সিজারের সেকেন্ড ইন কমান্ড টুপি মিন্টু। এ ছাড়া হাতকাটা শাহআলম হত্যাসহ পুরান ঢাকার অনেক খুনের সাথে এ সিজারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
দোলাইরপাড় সিজারের নির্দেশেই টুপি মিন্টু বাংলালিংকের প্রায় ১৯ লাখ টাকা ছিনতাই করে। এ ঘটনায় ডিবির কাছে ধরা পড়ে দনিয়ার বড় বাড়ির মুরাদ ও টুপি মিন্টুসহ তিনজন। তাদের কাছ থেকে ওই সময় তিনটি অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গুলি এবং ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে, ওই ঘটনায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের কারণে সিজার বেঁচে যায়। সুব্রত বাইন ও জিসানের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণকারী মোহাম্মদ ওরফে ভাড়াটিয়া খুনি মোহাম্মদ সিজারের গুলশানের বাসায় একাধিকবার মিটিং করে। পরে মোহাম্মদ ভারতে গিয়ে ধরা পড়লে তাকে পুশব্যাক করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ধলপুরের সিটি পল্লীর সবুর, গোপীবাগের আসিফ ও ঈদুল, ফার্মগেটের তারেক, ডেমরার রকমা ডাকাত ও মাতুয়াইলের বকুলের হাত ধরে সিজারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হলেও একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেকেই তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। আজিজ মোহাম্মদ ভাই তার উকিল শ্বশুর হলে তার প্রভাব আরো বেড়ে যায়। সে অনেকের নাম ব্যবহার করে নানা অপকর্মও করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বৃহত্তর নোয়াখালীর এক সংসদ সদস্য এবং টাঙ্গাইলের এক সাবেক সংসদ সদস্যের নাম বিক্রি করতে শুরু করে সে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও অনেকের নাম ব্যবহার করে এ সিজার। একসময় সে কানাডায় পাড়ি জমায়। কানাডায় বসেই সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। তবে তার যে আগ্নেয়াস্ত্রগুলো ছিল তা এখনো তার নিয়ন্ত্রণেই রয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে সে ঢাকায় আসে। এ সময়ে তার ঢাকায় আসাটাকে অনেকেই সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন। সিজার ২০১৬ সাল থেকে আমেরিকান ইমিগ্র্যান্ট বলে একাধিক সূত্র বলেছে। জানা যায়, আজিজ মোহাম্মদ ভাই যখন কানাডায় যান তখন এই সিজারের বাসাতেই অবস্থান করেন। দেশে এসে এখন সিজার গুলশান ও বনানী এলাকাতেই অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।