বিশ্বের মধ্যে করোনা মোকাবেলায় দক্ষ নেতৃত্বের কারণে প্রশংসা আর সুনাম কুড়িয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। মূলত তার দূরদর্শী নেতৃত্বে সংক্রমণের শুরুতেই দেশটি কঠোর লকডাউনে চলে যায়।
করোনার সার্বিক ভয়াবহতা আর লকডাউনের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি জাতিকে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হন। ঠিক এ কারণেই জনগণ তার নির্দেশনা অনুযায়ী সব নিয়মই কঠোরভাবে মেনে চলেছেন। দেশটিতে মাত্র ছয়জন করোনা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিদেশফেরত যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে আইসোলেশনে রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে বিদেশি যাত্রীদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।
সুস্পষ্ট নির্দেশনা আর দ্রুত সিদ্ধান্তের কারণেই নিউজিল্যান্ড করোনার কঠিন পরিস্থিতি সামলে নেয়। এখন অবধি দেশটি শক্তভাবেই করোনাকাল সামলে চলেছে। শনাক্ত আর আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকলেও দেশটির সীমান্ত চলাচলে কঠোর সতর্কতা বহাল থাকবে বলে সাফ জানান প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন। নিউজিল্যান্ডের নাগরিকরা ধাপে ধাপে দেশে ফিরছেন। তবে দেশে ফেরামাত্রই ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে যেতে হচ্ছে।
এভাবে করোনা সামাল দেয়ার নেতৃত্ব গুণে ‘জেসিন্ডা’ এখন আলোচিত। পুরো নাম জেসিন্ডা আরডার্ন। জন্ম ২৬ জুলাই, ১৯৮০ সাল। করোনা আলোচনায় আসার আগেই মাত্র ৩৭ বছর বয়সেই বিশ্ব রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছেন। গড়েছেন ইতিহাস।
ভেঙেছেন ১৬১ বছরের রেকর্ড। কারণ জেসিন্ডাই হচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। ব্যক্তি জীবনে মর্মন ধর্মানুসারী। শখে ডিজের চাকরি করেছেন। কখনই দেখেননি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন। বাবা রোজ আরডার্ন পেশায় পুলিশ কর্মকর্তা। মা লরেন আরডার্ন কাজ করতেন স্কুল ক্যান্টিনে।
২০০১ সালে জেসিন্ডা আরডার্ন ‘ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইকাতো’ থেকে ‘পলিটিক্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন’ বিষয়ে ব্যাচেলর অব কমিউনিকেশন স্ট্যাডিজ (বিসিএস) ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর লন্ডনে গবেষকের কাজ করেছেন। নীতিনির্ধারণী উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। কাজ করতে গিয়েছেন চীন, জর্ডান, আলজেরিয়া ও ইসরায়েলে।
নিউজিল্যান্ড লেবার পার্টির অনুসারী খালার আগ্রহেই তার রাজনীতিতে আসা। নিউজিল্যান্ডের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা এখন লেবার পার্টির প্রধান। ১৮৫৬ সালের পর এত কম বয়সের কোনো প্রধানমন্ত্রী পায়নি নিউজিল্যান্ড। ইতোমধ্যে নানা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজ দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন জেসিন্ডা। তবে কে জানত করোনার মতো বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে তার জন্য। এখন তিনি নিউজিল্যান্ডের সব নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় জেসিন্ডাকে নিয়ে দারুণ সাড়া পড়ে গেছে। করোনার কঠিন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রসঙ্গে জেসিন্ডা বলেন, দায়িত্ব মানেই আমার কাছে উত্তেজনা। করোনায় সবার জন্য সমঅধিকার আর মানোন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই প্রধানতম কাজ এখন।
করোনা পরিস্থিতিতে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে জেসিন্ডা বলেন, নারী হিসেবে এবং নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাড়তি কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে। বড় কিছু অর্জন করতে চাই যেমন সমান মজুরি, ঘরে-বাইরে নারীর কাজকে সম্মান করা- এসব বিষয়ে হৃদয় দিয়ে কাজ করতে চাই। তিনি সরকারের তরফ থেকে একটি জলবায়ু কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন, যা আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে গ্যাস নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে বিশেষ সহায়ক হবে।
রাজনীতির জটিল সমীকরণে নিউজিল্যান্ডের সরকারপ্রধান এখন জেসিন্ডা। একে নারী, দুয়ে করোনা আর তিনে বয়সে তরুণ- সবকিছু মিলিয়ে জেসিন্ডার নতুন কিছু করে দেখানোর চাপ তো আছেই। তারুণ্যের ভাবনায় দেশ কেমন চলবে- এমন প্রশ্নের সদুত্তরে করোনা সময়ে জেসিন্ডার সুদক্ষ নেতৃত্ব সব সংশয় দূর করে দিয়েছে। করোনায় নারীদের জন্য বিশেষ সেবা ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছেন।
আত্মবিশ্বাসই সব কিছুর ঊর্ধ্বে। অবস্থা যতটাই নাজুক হোক না কেন, শুধু আত্মবিশ্বাসে ভর করেই তা থেকে আবার উঠে দাঁড়ানো সম্ভব। নিজের উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা আর উৎসাহকে সঠিক পথ প্রদর্শনই বড় কৌশল। এমনটিই মনে করেন বিশ্ব রাজনীতির তারুণ্যের প্রতীক জেসিন্ডা। নতুন কিছু করার দৃঢ়চেতা মনোভাব জেসিন্ডাকে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছে। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের মতো জটিল করে ভাবেন না।
নীতিনির্ধারণ ও গবেষক হিসেবে তিনি আগেই পারদর্শী। রাজনৈতিক আবহে দিয়েছেন দূরদর্শিতার পরিচয়। করোনার সময়ে নেতৃত্বের দৃশ্যত প্রতিফলনে জেসিন্ডা আরডার্ন নিজেকে করেছেন অনবদ্য।