শ্রীলংকা সফর হবে এমনটাই মনে করছেন আকরাম খান। বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান গতকাল বলেছেন, ‘শ্রীলংকা আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছু জানায়নি। তারা যদি জানায় তা হলে আগামী মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে সফর হতে পারে।’
কোয়ারেন্টিন ইস্যুতে বাংলাদেশ দলের শ্রীলংকা সফর হুমকির মুখে পড়েছে। শ্রীলংকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, শ্রীলংকা পৌঁছানোর পর বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের। বিসিবি এমন শর্ত মানতে রাজি হয়নি। নাজমুল হাসান পাপন পরিষ্কার জানিয়ে দেন, শর্ত মেনে শ্রীলংকা সফর সম্ভব নয়। এর পর শ্রীলংকা ক্রিকেট (এসএলসি) শর্ত শিথিলের জন্য দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল। বিসিবি এখন এসএলসির উত্তরের অপেক্ষায় আছে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে কলম্বোয় এক সংবাদ সম্মেলনে এসএলসির প্রধান নির্বাহী অ্যাশলি ডি সিলভা বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে তাদের যাওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেছেন, ‘আপনারা জানেন, দেশ হিসেবে আমরা এই করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুবই সফল হয়েছি। সে জন্য আমাদের কঠোর স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মানতে হচ্ছে। কোভিড টাস্কফোর্স থেকে আমরা যে বার্তাই পাই না কেন, সেটা বিসিবিকে পাঠাব। তারা যদি টাস্কফোর্সের (স্বাস্থ্য) নির্দেশিকা মানতে রাজি না থাকে তা হলে সিরিজটি আমাদের স্থগিত করতে হবে। তখন আগামী বছর বা পরের বছর সিরিজটি আয়োজনের ব্যাপারে আমরা চিন্তাভাবনা করব।’
গতকাল ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের (কোচ, নির্বাচক, সিইও) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসএলসি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানানো হয়নি, এমনটাই বলেছেন আকরাম খান। তবে কাল-পরশুর মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়ার আশা করছেন ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান। তিনি বলেছেন, ‘ওরা চেষ্টা করছে, যেহেতু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। ওরা চাচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের একটা নির্দেশিকা আমাদের দিতে। আমার মনে হয় যে আমরা আশাবাদী, ওরাও ইতিবাচক। আজ ও আগামীকাল (শনি ও রবিবার শ্রীলংকার সাপ্তাহিক ছুটি) বন্ধ থাকায় হয়তো সোম, মঙ্গলবারে দেবে।’
পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজ শ্রীলংকাগামী বিমানে চড়ার কথা ছিল মুমিনুলদের। সেভাবে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিলেন টাইগাররা। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তিন ম্যাচের প্রথমটা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২৪ অক্টোবর। সব কিছু ঠিকমতোই এগোচ্ছিল। তবে কোয়ারেন্টিন ইস্যু নিয়ে সফর অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
শর্ত নিয়ে শ্রীলংকা তাদের নীতিমালায় জানিয়েছে, ক্রিকেটারদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এ সময় হোটেল কক্ষ ত্যাগ করা যাবে না। খাবারের জন্যও কক্ষ থেকে বাইরে যাওয়া যাবে না। এটা ছিল কোয়ারেন্টিনের শর্ত। এ ছাড়া সফরে মেডিক্যাল টিম নেওয়া যাবে না, কিন্তু তারা মেডিক্যাল সাপোর্টও দেবে না। অনুশীলনের জন্য নেট বোলার দেবে না, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নেট বোলারও নেওয়া যাবে না। বিসিবি জানিয়ে দিয়েছিল এভাবে সফর করা সম্ভব না। তবে এসএলসির সেক্রেটারি মোহন ডি সিলভা আশাবাদী শর্ত মেনেই সফর করবে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ‘কঠোর স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মানতে হচ্ছে আমাদের। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই কর্তৃপক্ষকে যারা কিনা এই মহামারীর মধ্যেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আমরা তাদের (বিসিবি) সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। আশা করছি আমরা এটার সমাধান করতে পারব এবং খুব দেরি না করেই বাংলাদেশ দল শ্রীলংকা সফরে আসবে।’
আকরাম খান জানান, খেলোয়াড়দের তিন দিনের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। এর পর আবারও অনুশীলন শুরু হবে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এ মুহূর্তে এই সফরটা নিয়ে বেশি মনোযোগী। এ সফরটা চূড়ান্ত হলে আমরা অন্য পরিকল্পনা করব। সফরটা আগে ঠিক হোক তার পর ব্যাটিং কোচ নিয়ে আলাপ আলোচনা করব। আমরা আগামী মাসের ৭-১০ তারিখের মধ্যে যেতে পারি। ওদের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল সেটা যথাসময়ে হচ্ছে না। আমাদের কাছে সময় আছে তাই চিন্তা করছি না।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘যেহেতু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে তিনটি টেস্ট ছিল তিনটিই থাকবে।’ আকরাম খান জানিয়েছেন, সফর শেষ পর্যন্ত না হলে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট শুরু করা হবে। তিনি বলেছেন, ‘বোর্ড সভাপতি তো বলেছেন যদি সফর না হয় একটা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট করব। সেটা আমাদের মাথায় আছে। প্ল্যান এ, বি, সি সব করাই আছে। আমরা আমাদের পরিকল্পনা মতোই আছি।’