শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ অপরাহ্ন

শেষ ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’ কী হতে পারে

অ্যান্ড্রু গথোর্প
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২০
  • ২৫৬ বার

স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি অদ্ভুত ও অননুমেয় ঘটনার মধ্য দিয়ে এ বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এত ঘটনাবহুল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এর আগে হতে দেখা যায়নি।

একটু চোখ বোলালেই দেখা যাবে, প্রেসিডেন্ট অভিশংসনের মুখে পড়েছেন। একটি ভয়ানক মহামারি গোটা আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়েছে, যাতে লক্ষাধিক লোকের প্রাণহানি হয়েছে ও অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের একটি আসন ফাঁকা এবং নির্বাচনের মাত্র দিন কয়েক আগে আসনটি পূরণ হবে। এই সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় আছেন এমন একজন প্রেসিডেন্ট, যিনি নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, তা মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়ে রেখেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ঐতিহ্যগতভাবে ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’ বা ‘অক্টোবরের চমক’ বলে একটি পরিভাষা আছে। এ নির্বাচন হয় নভেম্বর মাসে। তার আগের মাসে নির্বাচন প্রভাবিত করতে সক্ষম কোনো প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট চমক দেওয়ার ঘটনা ঘটলে তাকে অক্টোবর সারপ্রাইজ বলে ধরে নেওয়ার রেওয়াজ আছে।

অনেকেই মনে করেছিলেন, এবার অক্টোবরে একের পর এক চমক থাকবে। একটি চমক আরেকটিকে ছাপিয়ে যাবে।

আপাতত সবচেয়ে বড় অক্টোবর সারপ্রাইজ হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু যে প্রেসিডেন্ট করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে নিজে মৌলিক কোনো সুরক্ষাব্যবস্থা অনুসরণ করেননি, সেই প্রেসিডেন্টের শুধু আক্রান্ত হওয়ার খবর হয়তো অনেকের কাছে আশ্চর্যের মনে না–ও হতে পারে। এখন তাঁরা আরও বড় কোনো চমকের জন্য হয়তো অপেক্ষা করছেন। তাঁর স্বাস্থ্যের সম্ভাব্য অবনতির মধ্যেই তাঁরা সেই চমক খুঁজছেন।

এটি স্পষ্ট যে ট্রাম্পের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরটি তাঁর ও তাঁর প্রতিপক্ষ জো বাইডেনের প্রতিযোগিতাকে অনিশ্চিত করে ফেলেছে। প্রেসিডেন্টের অসুস্থতা শেষ পর্যন্ত কত দূর গড়াবে, এই ভাইরাস ট্রাম্পের আর কোন কোন সহকর্মীর মধ্যে সংক্রমিত হবে, তার ওপর তাঁর নির্বাচনী প্রচারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। ট্রাম্পের দেহে ভাইরাসটি ধরা পড়ার পর তাঁর প্রতিপক্ষ জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের দেহ পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তাঁদের পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাঁরা বিপদমুক্ত এবং তাঁরা আক্রান্ত হবেন না।

গত শুক্রবার রাতে ট্রাম্প ‘মৃদু’ উপসর্গ নিয়ে ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হন। সেখানে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি দ্রুত সেরে উঠতে পারেন, আবার অবস্থা খুব খারাপের দিকে গড়াতেও পারে। সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যে বড় উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে এবং আমরা এখনো জানি না ঠিক কবে করোনাভাইরাস তাঁর দেহে সংক্রমিত হয়েছে।

ট্রাম্প যদি শেষ পর্যন্ত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে গোটা দেশ একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। ১৯১২ সালে টেডি রুজভেল্ট নির্বাচনী প্রচারের সময় গুলিবিদ্ধ হওয়ায় শেষ ধাপের প্রচারপর্বে অংশ নিতে পারেননি। তারপর থেকে এ পর্যন্ত কোনো প্রার্থীকেই অসুস্থতার কারণে চূড়ান্ত প্রচারে অংশ নেওয়া থেকে বাদ পড়তে হয়নি। তবে এটুকু বোঝা যাচ্ছে ট্রাম্প যত অসুস্থই হোন না কেন, তিনি ব্যালটে অনড় থাকবেন।

ট্রাম্পের অসুস্থতা বাড়ুক বা না বাড়ুক, তাঁর দেহ পরীক্ষার ফলাফল ইতিমধ্যেই নির্বাচনী দৌড়ে যে পরিবর্তন এনে ফেলেছে, তা পরিবর্তিত হবে বলে মনে হয় না। অনেকে মনে করেন, ট্রাম্প যদি এ অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠেন, তাহলে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে হয়তো বলবেন, এ ভাইরাসকে যতটা খারাপ বলে প্রচার করা হচ্ছে, সবার ক্ষেত্রে আসলে ততটা নয়। কিন্তু করোনাভাইরাস এমন কোনো বিমূর্ত ইস্যু নয়, যার বিষয়ে আমেরিকানরা শুধু সংবাদমাধ্যমের ওপরই নির্ভর করে। প্রেসিডেন্ট যা কিছুই বলুন না কেন, তাঁর সেই বক্তব্য আমেরিকানদের মৃত স্বজনদের ফিরিয়ে আনতে বা কাজ হারানো ব্যক্তির কাজ ফিরিয়ে দিতে পারবে না।

ট্রাম্প যদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে হয়তো কট্টর ডানপন্থীদের পক্ষ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠান বাতিল কিংবা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি উঠতে পারে। নির্বাচন পেছাতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে এবং সেই অনুমোদন কল্পনা করাও অসম্ভব। দক্ষিণপন্থী সংবাদমাধ্যমগুলো ইতিমধ্যে ডাকযোগে ভোট দেওয়ার বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার শুরু করে দিয়েছে এবং ট্রাম্প হারলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা অস্বীকার করার জন্য জনমত গঠনের কাজও তারা চালিয়ে যাচ্ছে।

যদি ট্রাম্প একটা বড় সময় ধরে নির্বাচনী প্রচার করতে না পারেন এবং শেষমেশ হেরে যান, তাহলে তিনি নির্বাচনের ফলের স্বচ্ছতা নিয়ে জনগণকে প্রশ্ন তুলতে আহ্বান জানানোর অজুহাত পাবেন।

প্রেসিডেন্টের অসুস্থতা এখন শুধু নির্বাচনী ঝুঁকির বিষয় নয়, এর সঙ্গে জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্নও জড়িত। তাঁর দপ্তরের ওপর বিশাল দায়িত্ব ন্যস্ত। প্রেসিডেন্টের নির্দেশনা না থাকলে সরকারের বহু দপ্তর ‘অটো পাইলট’ কায়দায় কাজ চালাতে শুরু করবে এবং তাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

এ ছাড়া আরও ভয় আছে। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের পক্ষে রুটিন কাজে মন দেওয়া প্রায় অসম্ভব। সংকটজনক অবস্থা কেটে যাওয়ার পরও রোগীর মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ না–ও করতে পারে। নির্বাচনের ঠিক আগে যেকোনো প্রেসিডেন্টই নিজেকে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ ঘোষণা করতে দ্বিধা করবেন। আর ট্রাম্পের মতো আত্মপ্রেমে মগ্ন একজন প্রেসিডেন্টের পক্ষে তা বলা তো একেবারেই অসম্ভব বিষয়।

তার মানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি মহাক্ষমতাধর দেশের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা এমন একজন মানুষের হাতে থাকবে, যিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অস্থিতিশীল থাকবেন।

তার মানে বোঝা যাচ্ছে সত্যিকারের অক্টোবর সারপ্রাইজ আসতে এখনো বাকি আছে এবং প্রেসিডেন্ট সেই চমককে মোকাবিলা করতে সমর্থ হবেন কি না, সে বিষয়েও আমাদের কোনো ধারণা নেই।

যে প্রেসিডেন্ট অতিমাত্রায় আত্মপ্রেমে মগ্ন এবং মিথ্যাচারে আসক্ত, তিনি প্রতিকূল অবস্থায় পড়লে কী করে বসবেন, তা হয়তো আমরা এমন এক সময়ে টের পাব, যখন আর করার কিছু থাকবে না।

ইতিমধ্যে অনেক বড় বড় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ট্রাম্পের উদাসীনতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি ইতিমধ্যে বহু ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেলেছেন। ট্রাম্প জমানায় আমেরিকায় করোনায় যে প্রাণহানি হলো তার জন্যও স্বয়ং ট্রাম্প দায়ী। এ ক্ষতি যাতে আরও বেশি না হয়, সে জন্য আমাদের এ প্রার্থনা করা উচিত, যাতে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং নির্বাচনে কোনো ধরনের বিতর্ক ছাড়াই হেরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ অবসরে যান। শুধু সেটি ঘটলেই ট্রাম্প সত্যিকার অর্থে সুস্থ হওয়ার সুযোগ পাবেন।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

অ্যান্ড্রু গথোর্প: যুক্তরাষ্ট্রের লেইডেন ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com