শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২১ পূর্বাহ্ন

ইতিহাস গড়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর জেনারেল হলেন দুই বোন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৯
  • ৩০৫ বার

মারিয়া ব্যারেট ও পাউলা লোডি। সম্পর্কে তারা সহোদরা। একজন ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন। অন্যজনের ইচ্ছে ছিল ফরেন সার্ভিসের পরীক্ষা দিয়ে আমলা হবেন। কিন্তু, ভাগ্যের ফেরে দু’জনেরই ঠাঁই হলো সেনাবাহিনীতে। চলতি গ্রীষ্মেই মার্কিন সেনাবাহিনীর জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছেন তারা। পাউলা মেজর এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হয়েছেন মারিয়া। সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। কারণ মার্কিন সেনাবাহিনীতে এর আগে আর কোনো বোনেদের এভাবে শীর্ষপদ আরোহণের নজির নেই।

সত্যিই কি মারিয়া এবং পাউলাই প্রথম? অন্তত মার্কিন সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষের দাবি তেমনই। সাধারণত নারীরা বিয়ের পর পদবি পাল্টে নেন। তাছাড়া মার্কিন সেনার তথ্যভাণ্ডার হাতড়ে, নাম এবং পদবি মিলিয়ে শুধুমাত্র বোনেদের খুঁজে বের করাও প্রায় অসাধ্য। কিন্তু, যেহেতু বাহিনীতে নারী জেনারেলদের সংখ্যা একেবারেই হাতে-গোনা, তাই পাউলা ও মারিয়াকে সহজেই চিহ্নিত করা গেছে বলে মনে দাবি করেছেন মার্কিন সেনার এক মুখপাত্র। গত জুলাই মাসে বছর একান্নর পাউলা পদন্নোতি পেয়ে সেনাবাহিনীর সার্জন জেনারেল হিসেবে ডিরেক্টর অব হেলথ কেয়ার অপারেশনস-এর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। আর ৫৩ বছরের মারিয়া মার্কিন সেনার সাইবার শাখা নেটকম-এর কমান্ডিং জেনারেলের দায়িত্ব পেয়েছেন।

পুরুষ-শাসিত সেনাবাহিনীতে পাউলা-মারিয়ার এই উত্থান বাকি নারীদের উদ্বুদ্ধ যেমন করেছে, তেমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, বলছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীকে নিয়ে গবেষণারত এমা ম্যুর। তিনি বলেন, ‘মার্কিন সেনাবাহিনীতে যে সকলেই যোগ দিতে পারেন এবং শীর্ষে পৌঁছতে পারেন, তা প্রমাণ করেছেন পাউলা ও মারিয়া।

কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনস-এর তথ্য বলছে, মার্কিন সেনার ১৩ লাখ সক্রিয় কর্মীর মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ নারী। নারীদের পদোন্নতিতে নানা ধরনের বাধার কারণে বাহিনীর শীর্ষস্তরের তুলনায় নিচুস্তরে নারীদের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। এমা জানান, একসময় সেনাবাহিনীতে নারীদের অন্তর্ভুক্তি ব্যাপক হারে কমে গিয়েছিল। বাহিনীর অন্দরে একের পর এক যৌন হেনস্তার ঘটনা সামনে আসছিল।

শুধু গত বছরের পরিসংখ্যান বলছে, তার আগের বছরের তুলনায় ওই বছর যৌন হেনস্তার ঘটনা ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। এর পাশাপাশি, নারীদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা, বুলেটরোধী বর্মের অপ্রতুলতার (সেগুলোর সবই ছিল পুরুষদের মাপের) কারণে বিরাট সংখ্যায় নারীরা বাহিনীতে যোগ দিতে পারতেন না।

মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৪৪ বছরের ইতিহাসে ১৯০১ সালে প্রথম নার্স হিসেবে নারীদের বাহিনীতে নেয়া শুরু হয়। তবে, পাউলা ও মারিয়া সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন ১৯৯৪ সালে। ওইসময় অবশ্য সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার অনুমতি নারীদের দেয়নি পেন্টাগন। সেই ছাড়পত্র মেলে আরো পরে, ২০১৫ সালে। তবে, পাউলাদের বাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে সেই সময়কার নারীদের বাহিনীতে যোগদানের প্রেরণা জুগিয়েছিল।

স্বয়ং মারিয়ার কথায়, ‘একই পরিবারের দুই বোনের সেনাবাহিনীর শীর্ষপদে উঠে আসাটা লটারির মতো মনে হতে পারে। কিন্তু, কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। কঠোর অধ্যাবসায়, নেতৃত্বদানের অসামান্য ক্ষমতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান না থাকলে আমরা এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম না।’

ম্যাসাচুসেটসের ফ্র্যাঙ্কলিন শহরে বড় হন মারিয়া ও পাউলা। বাবা রাস্টন লোদি ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক। পরে এলিমেন্টারি স্কুলের প্রিন্সিপাল হিসেবে কাজ করেন। মা ক্লারাও ছিলেন শিক্ষিকা। ছোট থেকে দু’জনের কেউ ভাবেননি বাহিনীতে যাবেন। পাউলা বলেন, ‘ছোটবেলায় স্কুলের একই টিমে ফুটবল খেলতাম আমরা। তখনো ভাবিনি ২৭-৩০ বছর পর আমরা এখানে থাকব।’

কিন্তু, ভাগ্যই তাদের একই রাস্তায় এনে ফেলেছে। এবার সেই রাস্তায় পরবর্তী মাইলস্টোন ছোঁয়াই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই বোনের।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com