গেল বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকা (১ নম্বর) থেকে শুরু করে সুইজারল্যান্ড (২০ নম্বর) পর্যন্ত পৃথিবীর বৃহত্তম ২০টি অর্থনীতিতে মোট ৭০ লাখ কোটি (অথবা ৭০ ট্রিলিয়ন) ডলারের দেশজ সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে কেবল আমেরিকানরাই উৎপাদন করেছে সাড়ে ২১ লাখ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবাসামগ্রী। এখানে ছোট করে একটি বড় কথা বলে রাখি। শুনতে যত ‘বড়’ মনে হয়, আসলে ‘ট্রিলিয়ন’ বা ‘লাখো-কোটি’ সংখ্যাটি তার চেয়েও অনেক বড়! একটু ব্যাখ্যা দিলেই বুঝতে পারবেন।
আপনি যদি রাত-দিন লাগাতারভাবে প্রতি মিনিটে ১০০ ডলার করে খরচ করতে থাকেন, আন্দাজ করুন তো ১ ট্রিলিয়ন ডলার ওড়াতে কতদিন লাগতে পারে? ধাঁধার উত্তর শুনে অবাক হবেন না- এই হারে বেহিসাবি ব্যয় করতে থাকলেও আপনার খাজাঞ্চিখানায় রক্ষিত ট্রিলিয়ন ডলার পরিমাণ অর্থ ১৯ হাজার বছরেও ফুরাবে না।
এবার নিজেই হিসাব করে নিন আপনার পরের প্রজন্মের কত পুরুষ কত টাকা নিয়ে রূপকথার স্বপ্নজগতে হেসেখেলে দিনাতিপাত করতে পারবে। এই সেদিন অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, এত বিশাল আকারের মার্কিন অর্থনীতি অদৃশ্য করোনাভাইরাসের থাবায় চোখের সামনে জবুথবু হয়ে গেল! পাহাড়সম প্রণোদনার উন্মাদনায় অচল অর্থনীতি ষোলোআনা সচল হল না। যাও বা হল তার চাকা বড়জোর ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে ঘুরছে- গতিতে তেজ নেই, চলনে গর্জন নেই- আহত বাঘের মতো নীরব, নিস্তেজ।
করোনার সূত্রপাত হয়েছে আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-এর অক্টোবরে বা তারও আগে- চিনের ‘উহান’ শহরে। চীনারা এ খবর যতদিন পারে গোপন রেখেছে। অবশেষে ডিসেম্বরের দিকে এ রোগের কথা বাইরের জগতে রাষ্ট্র হয়ে গেল। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে সারা দুনিয়ায় লেগে গেল করোনার আগুন। শুরুতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে পাত্তাই দিলেন না।
যখন টনক নড়ল, তখন করোনা সামাল দেয়ার জন্য কংগ্রেসের কাছে আড়াই বিলিয়ন ডলার চাইতে রাজি হলেন। কয়েক সপ্তাহ যেতে না যেতে মাহামারী অতিমারীতে রূপ নিল, করোনা এমন রুদ্রমূর্তি ধরল যে একে সামাল দেয়ার তো প্রশ্নই রইল না, মানুষ বাঁচানোর জন্য রাজ্যে রাজ্যে রাজা-মহারাজারা সবাই বেসামাল হয়ে পড়লেন।
হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইসিইউ বেড নেই, ভেন্টিলেটার নেই, ডাক্তারদের পিপিইর স্বল্পতা লজ্জাজনকভাবে উন্মোচিত হয়ে গেল। তার ওপর গ্লাভ্স নেই, মাস্ক নেই, হ্যান্ড-স্যানিটাইজার নেই, দোকানে হাত ধোয়ার সাবানও পাওয়া যাচ্ছে না। কিচেন টাওয়েল নেই, এমনকি টয়লেট পেপারটাও বাজার থেকে উধাও হয়ে গেল মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে। কারণ কী? কারণ, সবকিছু নাকি চীন থেকে আসে!
করোনা মোকাবেলার জন্য শুরুতে আমেরিকার শক্তিধর যে প্রেসিডেন্ট মাত্র আড়াই বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিতে চাইলেন, সেই প্রেসিডেন্ট কিছুদিন পর হাজারগুণ বেশি দিতে বাধ্য হলেন- আড়াই বিলিয়নের বদলে সই করলেন প্রায় আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের এক ‘মহাপ্রণোদনা-প্যাকেজে’। গরিব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য না দিয়ে টাকাগুলো তিনি এমন এক কৌশলী ফরমুলায় বিলি-বণ্টন করলেন, তাতে দেখা গেল, দিনের শেষে প্রণোদনার সিংহভাগই চলে গেছে কর্পোরেট মাফিয়াদের হাতে, যারা গত ৩০ বছর ধরে ওয়াল স্ট্রিট থেকে দুই হাতে মুনাফা কুড়িয়ে আঙুল ফুলে প্রথমে কলাগাছ, পরে বটগাছে পরিণত হয়েছে।
বুঝে হোক আর না বুঝে, ভাগ্য বদলের এ মহোৎসবে তারা এমনভাবে মজে থাকল যে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি বেমালুম ভুলে গেল। তারা আরও ভুলে গেল, ‘America is not a market place, it is a nation state.’ তারা বুঝতেই পারল না কোন দিক থেকে কী হয়ে গেল। যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর দেশকে হাতধোয়ার সাবানের জন্য চীনের পথ চেয়ে থাকতে হয়! এত অর্থবিত্ত ও প্রযুক্তি নাগালের ভেতর থাকতেও দেশটি করোনা-অতিমারীজনিত জাতীয় জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হল।
এর মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি শ্রমিক চাকরি হারাল, প্রায় দু’লাখ মানুষ মারা গেল। আরও মজার ব্যাপার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন প্রণোদনার ফরমুলা তৈরি করলেন তখন তার ভোটব্যাংক অর্থাৎ অশিক্ষিত, আধা-শিক্ষিত গ্রামীণ শ্বেতাঙ্গ জনমানুষের কথা মনেও রাখলেন না। তারপরও তিনি তাদের ভোট পাবেন। জেতারও আশা করছেন, হয়তো বা জিতেও যেতে পারেন!
এ এক আজব দেশ, আজব তার মানুষ ও রাজনীতি! আজব দেশে গজব হয়ে অতর্কিতে করোনা এসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল; রাষ্ট্র, সরকার, গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থা থমকে দাঁড়াল। নীতিনির্ধারকরা যখন প্রায় দিশাহারা তখন এলোপাতাড়িভাবে সারা দেশে ‘লকডাউন’ এলো, ‘লকডাউন’ গেল; কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হল না। আফসোস- না গেল মানুষ বাঁচানো, না গেল অর্থনীতির ধস ঠেকানো।
সরকারের এ অতি সম্প্রসারণশীল রাজস্বনীতির বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে থেকে চলে আসা সহজ ও উদার মুদ্রানীতি কেবল জারিই রাখল না, বরং এর পরিমাণ ও তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিল। এভাবে ‘ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক’ অঢেল পরিমাণ মুদ্রা বাজারে ঢেলে দিল। অর্থনীতির মানদণ্ডে এর ওজন মাপা একটু কঠিন বৈকি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন অর্থনীতির রক্তপ্রবাহে যে টন টন টাকার আমদানি হল, বাজারের ওপর তার প্রভাব হবে আরও প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো।
এভাবে আমেরিকার অর্থনীতি সাকুল্যে প্রায় সাড়ে ছয় ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনার ডানা মেলে হাওয়ায় উড়তে লাগল। এবার দেখা যাক তা উড়ে উড়ে গেল কতদূর। ‘কিম্বার্লি অ্যামাডিও’ এবং ‘জ্যানেট বেরি-জনসন’ সম্প্রতি ‘ব্যালেন্স.কম’-এ একটি নিবদ্ধ প্রকাশ করেছে। এতে তারা যেসব পরিসংখ্যান দিয়েছে তাতে দেখা যায়, ২০২০-এর প্রথম কোয়ার্টারে আমেরিকার জিডিপি সংকুচিত হয়েছে ৫ শতাংশ। পরের কোয়ার্টারে এসে দেখা যায়, দেশজ উৎপাদন অকল্পনীয়ভাবে নেমে গেছে ৩১ শতাংশের মতো।
এপ্রিলে দেশীয় খুচরা কেনাবেচা কমেছিল ১৬ শতাংশ আর বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ২ কোটি ৩০ লাখে। আগস্টে এসে মার্কিন অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর একটি ক্ষীণ আলোকরেখা দেখা যাচ্ছে- গ্রোসারি কেনাবেচা কিঞ্চিৎ বেড়েছে (০.৬ শতাংশ)। আশাবাদীরা আশায় বুক বাঁধছেন। ভাবছেন, তৃতীয় কোয়ার্টারে এসে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির লক্ষণ দেখা যাবে; কিন্তু কেউই মনে করেন না, প্রথম ৬ মাসে যা ক্ষতি হয়েছে, বাকি ৬ মাসে তা পুষিয়ে নেয়া যাবে।
আরও পরে, সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখে এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানান দিচ্ছে, চলতি বছর দেশজ উৎপাদন ৩.৭ শতাংশ সংকুচিত হবে, আগামী বছর গিয়ে সামান্য বাড়বে, ২০২২-২৩ এলে প্রবৃদ্ধি উঠতে পারে ২.৫ ও ৩.০ শতাংশের মাঝখানে।
একই রিপোর্টে লেখকরা বেকারত্বের বিবরণ দিতে গিয়ে জানাচ্ছেন, এ সমস্যাটি ২০২০-এ ৭.৬ শতাংশ, পরের বছর ৫.৫, তারপর ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করবে। মানুষের কাজকর্ম না থাকায় এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ চিন্তায় বাজারে চাহিদার চাপ কম, তাই সাধারণ নাগরিকদের জন্য মূল্যস্ফীতি এ পর্যন্ত যন্ত্রণার কোনো কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি।
সহজেই অনুমান করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকবে। অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি দেড় থেকে ২ শতাংশের মাঝেই ওঠানামা করবে। এ দেশে ইদানীং বহু বছর ধরে সুদের হার কোনো ব্যাপারই নয়। গত ১০-১২ বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হারে মুদ্রাবাজারে টাকার সয়লাব ঘটিয়ে চলেছে তাতে সুদের হার শূন্য থেকে ০.২৫ শতাংশে বাসর ঘরে নববধূর মতো অনড় অটল হয়ে বসে আছে! ফলে দেখা যাচ্ছে, মর্টগেজ ঋণ নিতে গেলে ৩০ বছর মেয়াদি স্থায়ী সুদের হার ৩ শতাংশের বেশ নিচে পাওয়া যাচ্ছে।
মাত্র ক’দিন আগে আমার এক বন্ধু ৩০ বছর মেয়াদি ঋণে তার বাড়ি ফাইন্যান্স করেছে ২.৮ শতাংশ সুদে। সুবর্ণ সুযোগ আর কাকে বলে! এরই আরেক পিঠের দুঃখজনক বয়ান শুনুন, একে মশকরা বলবেন না অন্যকিছু? আপনি যদি ব্যাংকে টাকা রাখেন তাহলে দেখুন কী পাবেন। আপনার কষ্টার্জিত সঞ্চয়ের ১০ হাজার ডলার যদি কোনো অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকে, তাহলে মাসের শেষে ডাকে আসা স্টেটমেন্ট পরখ করলে দেখবেন অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সে ২ আনা পয়সাও যোগ হয়নি। কী হারে তারা সুদের হিসাব-নিকাশ করে, বোঝারও কোনো উপায় নেই, কেউ বুঝতেও চায় না।
পুঁজিবাদের কী আজব কেরামতি! বড়লোকের টাকায় টাকা আনে, গরিবের টাকা ব্যাংকের ভল্টে থেকে ক্ষয় রোধ করতে পারলেই যেন জানে বাঁচে! এ কি পুঁজিবাদের নিষ্ঠুর পরিহাস, না তার ব্যর্থতা! এখন ব্যাংক আমানতকারীরা প্রায় শূন্য সুদ পাচ্ছে। এভাবে যদি যাবতীয় ঋণ শূন্য সুদে নেয়া যায় তাহলে তো মন্দ হয় না।
নতুন এক ব্যাংকব্যবস্থা ও নতুন অর্থনীতির জন্ম হবে। আপাতত সুদের হারকে শূন্যের কাছাকাছি রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সীমাহীনভাবে বাজারে টাকা ছাড়ছে এবং নিজের জন্য ফাইন্যানশিয়াল অ্যাসেট কিনছে। ফলে ২০২০-এর মাঝামাঝি আসতে না আসতে দেখা যায় ব্যাংকের ব্যালেন্স শিট গিয়ে উঠেছে ৭.২ লাখ কোটি ডলারে।
‘মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসন’ আগামী ৩০ বছরের জন্য অপরিশোধিত তেলের দামের একটি প্রক্ষালন এলান করে দিয়েছে। এতে জানা যায়, এ বছরে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৪৪ ডলারের আশপাশেই থাকবে। আগামী বছর গিয়ে কিছু বাড়বে, তবে ৫০ ডলারের উপরে উঠবে না। ২০৫০ সালের মুদ্রামূল্যমানের হিসাবে এটা ২০২৫ সালে গিয়ে ব্যারেলপ্রতি ১৮৩ ডলার হতে পারে। ২০২৫ সালের বিক্রীত তেলের দাম কেন ২০৫০ সালের মুদ্রামূল্যমানে প্রকাশ করতে হবে, অর্থনীতির বুড়ো ছাত্র হয়েও আমার মাথায় এসব মারপ্যাঁচ একেবারেই খেলে না।
সে যাই হোক, ‘জ্বালানি প্রশাসন’ সবার জন্য নতুন এক সাবধানবাণীও উচ্চারণ করেছে। তাদের হিসাবমতে ২০৫০ সালে গিয়ে তেলের দাম অনেক বেড়ে যাবে, কারণ ততদিনে দুনিয়াজুড়ে সহজে ও সস্তায় উৎপাদিত তেলের উৎসগুলো নাকি সব শুকিয়ে যাবে। কিন্তু তার আগেই যদি ‘টেজলা’ ও তার প্রতিযোগী গাড়ি কোম্পানিগুলো কোটি কোটি ব্যাটারিচালিত মোটরযান বিশ্ববাজারে ছেড়ে দেয় তাহলে কী হবে? ‘জ্বালানি প্রশাসন’ এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি।
এ ছাড়াও এসব প্রক্ষালনে আমেরিকার ফেডারেল সরকারের ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন’ এবং ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন’ কর্মসূচির অভিঘাত বিবেচনায় রাখা হয়নি। ‘আমেরিকান ব্যুরো অফ লেবার পরিসংখ্যান’ অনুযায়ী, ২০২৮ সাল নাগাদ ৮৯ লাখ নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে। এর মাঝে বোধগম্য কারণেই স্বাস্থ্যসেবা খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান যুক্ত হবে। অন্যদিকে, করোনাকালেও আমেরিকায় জলবায়ুর আঘাত ও অভিঘাত থেমে নেই।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ‘হ্যারিকেন’ এবং পশ্চিমাঞ্চলের ‘বনাগ্নি’তে ইতোমধ্যে প্রায় দেড়শ’ কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে। যাই হোক, বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, ‘সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা কিছু না’ হলেও আমেরিকার সরকারি দফতর দেড়শ’ কোটি ডলারকে হেলাফেলায় ফেলে দেয় না, যথাযথভাবে আমলে নিয়ে হিসাব করে।
এ তো গেল ‘মেইন স্ট্রিটের’ হালচাল। ওদিকে ‘ওয়াল স্ট্রিটের’ দিকে যদি নজর ফেরালে দেখবেন আরেক অভাবনীয় কাণ্ড। ফেব্রুয়ারি-মার্চে পুঁজিবাজারে যে ধস নেমেছিল, তিন মাসে তার প্রায় সবই জোয়ারের মতো উঠে এলো। ‘আমাজন’, ‘অ্যাপ্ল’, ‘গুগ্ল’, ‘মাইক্রোসফ্ট’, ‘টেজলা’ ইত্যাদি লালে লাল হয়ে গেল।
হোটেল, এয়ারলাইন্স, রেল ও সড়ক পরিবহন, রেস্তোরাঁ, পর্যটন, সিনেমা-থিয়েটারসহ তামাম বিনোদন শিল্পে কর্মরত লাখ লাখ মজুরি কামাইকারীরা হাহাকার করছে, কারণ প্রণোদনার চেক আসা বন্ধ হয়ে গেছে। তারা বাড়িভাড়া দিতে পারছে না, ছেলেমেয়েদের পাতে খাবার তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছে, অথচ স্টক মার্কেট প্রায় প্রতিদিন শনৈ শনৈ করে উঠছে তো উঠছেই। এসবেরও তুল্য-মূল্য আমি কেন, অনেক বোদ্ধারাও বুঝতে পারছেন না।
শুধু আমেরিকা নয়, প্রায় সব দেশেই করোনা ধনী-গরিবের মাঝে বৈষম্যের দেয়াল আরও মজবুত করে গেঁথে দিয়েছে এবং এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত- ধনী-গরিবের তফাত ইতোমধ্যে অনেক বেড়ে গেছে, আগামীতে আরও বাড়বে। হাতেগোনা দু’-একটি দেশ বাদে প্রণোদনা দিতে গিয়ে আমেরিকার মতো অন্যসব দেশ একই ভুল করেছে। খেটে-খাওয়া দিনমজুরদের অগ্রাধিকার দেয়নি, তাদের দিকে সহানুভূতির নজরে তাকায়নি।
এতে করে আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশে যে অসুবিধা হবে, উন্নয়নশীল দেশের সমস্যা হবে তার চেয়ে বড় মাপের। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো উন্নত আছে, উন্নতই থাকবে। বাংলাদেশসহ বেশকিছু উন্নয়নশীল দেশ কপালে ‘উন্নত দেশের’ তকমা লাগানোর দৌড়ে একটু পেছনে পড়ে যেতে পারে।
কারণ জাতীয় জীবনে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ঘাটতি, দারিদ্র্য, আয় বৈষম্য, দুর্নীতি ও দুঃশাসন ইত্যাদি উপদ্রব জারি থাকলে ২০৪১ সালে বাংলাদেশের জন্য ‘উন্নত দেশ’ হওয়ার স্বপ্নসাধ সফল নাও হতে পারে। কারণ উন্নয়ন মানে শুধু জিডিপির প্রবৃদ্ধি নয়, এর সঙ্গে আরও অনেক উপাদানের আঞ্জাম দিতে হয়।
আবু এন এম ওয়াহিদ : অধ্যাপক, টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র