মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০১ অপরাহ্ন

দুই দলেরই দৃষ্টি এখন দোদুল্যমান আট অঙ্গরাজ্যে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০
  • ২০৩ বার

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবার দৃষ্টি এখন আট অঙ্গরাজ্যে। এ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, মিনেসোটা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের ফলের ওপরই নির্ভর করছে দুই প্রার্থীর জয়-পরাজয়। আগামী দুই সপ্তাহ ওই আট অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে ট্রাম্পকে ঠেকিয়ে দেয়ার জন্য। ফলে বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে স্থানীয় টিভি ও সংবাদপত্র। ফ্লোরিডা, এ্যারিজোনা রাজ্যে হিস্পানিক সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য স্লট পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রাম্পের প্রচার শিবির থেকেও সব লোকবল মাঠে নামানো হয়েছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, গার্ডিয়ান ও নিউইয়র্ক টাইমসের।

ভোট দেয়ার হার, জনসংখ্যার অনুপাত, অতীতের ভোট দেয়ার গতিপ্রকৃতি এবং ভোটারদের পরিবর্তনশীল মনোভাব বিবেচনায় রেখে আট অঙ্গরাজ্য চিহ্নিত করা হয়েছে নির্বাচনের মূল ব্যাটল গ্রাউন্ড হিসেবে। তবে এই আটটির মধ্যে সাত অঙ্গরাজ্যেই জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী ভোটারদের মধ্যে জনমত জরিপে পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। যেসব প্রবীণ ভোটারের আনুকূল্যে ২০১৬ সালে ট্রাম্পের বিজয় সহজ হয়েছিল, সেই প্রবীণ শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় তিনি এবার পিছিয়ে রয়েছেন। ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের জন্য এটি বাড়তি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আফ্রিকান, হিস্পানিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন বাইডেন। এটিই ট্রাম্পের প্রচার শিবিরে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর মতে, এমন এগিয়ে থাকার পরও বলা যাবে না বাইডেন নিশ্চিত জয়ের পথে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত না হয়ে শুধু জনমত প্রকাশ করলেই একজন প্রার্থীর জয় নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না। উইসকনসিনে রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারপার্সন এ্যান্ড্র্রু হিট বলেন, ট্রাম্পের প্রান্তিক সমর্থকরা ঠিকই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তাকে ভোট দেবেন। এ্যারিজোনায় ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ১১। গত নির্বাচনে সহজেই জিতেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এবারের জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে বাইডেন। ২৯ ইলেকটোরাল ভোটের অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডায় গত বছর ট্রাম্প জয় পেয়েছিলেন। বিপুলসংখ্যক বয়স্ক লোকের বসবাস অঙ্গরাজ্যটিতে। জনমত জরিপে বাইডেন সেখানে এগিয়ে। ১৬ ইলেকটোরাল ভোটের জর্জিয়া রিপাবলিকান অঙ্গরাজ্য হিসেবেই পরিচিত ছিল। কিন্তু প্রান্তিক জর্জিয়ায় বিপুলসংখ্যক বয়স্ক লোকজনের বসবাস এবং পিছিয়ে পড়া কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী এবারের নির্বাচনে বেঁকে বসার আভাস দিচ্ছেন। যে জন্য উৎকণ্ঠা বেড়েছে ট্রাম্প শিবিরে। মিশিগানে গত নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন ট্রাম্প। অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ১৬। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে এখানেও এগিয়ে আছেন বাইডেন। ১০ ইলেকটোরাল ভোটের অঙ্গরাজ্য মিনেসোটায়ও ট্রাম্প পিছিয়ে আছেন। এছাড়া পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনেও বাইডেনের চেয়ে পিছিয়ে আছেন তিনি। যদিও এই দুই অঙ্গরাজ্যে ২০১৬ সালে জিতেছিলেন তিনি।

এখনও জয়ী হতে পারেন ট্রাম্প ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি রয়েছে আর মাত্র কয়েকদিন। তার আগে দেশটির বিভিন্ন সংস্থার জরিপে রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন। তার এই এগিয়ে থাকার চিত্র দেখা যাচ্ছে জাতীয় পছন্দের ক্ষেত্রে এবং দেশটির প্রধান প্রধান কিছু সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যও। সুইং স্টেটের ভোটাররা নির্বাচনের আগ মুহূর্তে কাকে ভোট দেবেন সেই সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু জরিপে সুইং স্টেটগুলোতে বাইডেনের সমর্থন বাড়ার আভাস পাওয়া গেছে। রেকর্ড গড়া তহবিল সংগ্রহের কারণে ডেমোক্র্যাট শিবির বিশাল আর্থিক সুবিধাজনক অবস্থানে আছে; একেবারে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার ভালভাবেই চালাতে পারবেন বাইডেন।

আরেকটি অক্টোবর বিস্ময় ॥ ২০১৬ সালের নির্বাচনের মাত্র ১১ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) পরিচালক জেমস কোমি ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের অভিযোগের তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণার এক সপ্তাহ ধরে মার্কিন গণমাধ্যমের শিরোনামে ঠাঁই পান হিলারি। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা চলে জোরালভাবে। চলতি বছরের নির্বাচনের দুই সপ্তাহের অল্প কয়েকদিন আগে একই ধরনের একটি রাজনৈতিক কম্পন জাগানো ঘটনা ট্রাম্পের জয়ের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চলতি মাসে ট্রাম্পের জন্য সবচেয়ে বিস্ময় তার করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এবং আয়কর ফাঁকির ঘটনা।

জরিপ মিথ্যা হলে ॥ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বাইডেনের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে বিভিন্ন মতামত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। এমনকি প্রধান প্রধান সুইং স্টেটগুলোতেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলেছে। বাইডেন ওইসব অঙ্গরাজ্যেও এগিয়ে আছেন। এছাড়া এ বছরই প্রথমবারের মতো অনেক আমেরিকান ই-মেইলে ভোট দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন। রিপাবলিকানরা ই-মেইল ভোটে ভয়াবহ জালিয়াতির আশঙ্কা প্রকাশ করে তা ঠেকানোর অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাট শিবির বলছে, রিপাবলিকানরা মূলত ভোটারদের দমনের পায়তারা করছে।

চূড়ান্ত বিতর্কে ভাল করলে ॥ দুই সপ্তাহের বেশি সময় আগে ট্রাম্প এবং বাইডেনের প্রথম বিতর্ক হয়। সেই বিতর্কে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তীব্র বাক-বিতণ্ডা এবং আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চালান। ট্রাম্পই সেই বিতর্কে বেশি নোংরা ছড়িয়েছেন। এবারের নির্বাচনে বয়স্করা একটি প্রধান জনগোষ্ঠী হলেও ট্রাম্প তাদের বিষয়টিকে তেমন পাত্তা দেননি। বাইডেন এই উদ্বিগ্ন ভোটারদের আশ্বস্ত করেছেন। প্রথম নির্বাচনী বিতর্কে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাইডেনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ, অপমান, এমনকি ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও সমালোচনা করেন। বিপরীতে পাল্টা বাইডেনও ট্রাম্পকে ভাঁড় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যা দেন। মার্কিন গণমাধ্যমে এই বিতর্কের চুলচেরা বিশ্লেষণে আপাত দৃষ্টিতে বাইডেনই জয়ী হয়েছেন বলা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রথম বিতর্কের নেতিবাচক ধারণা বদলে দিতে পারতেন দ্বিতীয় বিতর্কে অংশ নিয়ে। কিন্তু সেটি ভার্চুয়ালি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। সেই সুযোগ তৈরি হতে পারে আগামী বৃহস্পতিবার। ওইদিন দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর তৃতীয় বিতর্কে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।

দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ধাক্কা ॥ জনমত জরিপে বাইডেন সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও দেশটির বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এগিয়ে আছেন অথবা কাছাকাছি রয়েছেন। যদি প্রেসিডেন্টের জন্য সবকিছু সঠিকভাবে এগোয় এবং ইলেক্টোরাল কলেজের হিসেব-নিকেশ তার পক্ষে যায় তবে আগামী ৩ নবেম্বরে নির্বাচনে জয় সময়ের অপেক্ষা মাত্র। যদিও ট্রাম্প গত বছরের পপুলার ভোটে হেরে গিয়েছিলেন, কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজে স্বস্তিজনক অবস্থানে থাকায় সেটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। উইসকনসিন এবং মিশিগানের মতো দোদুল্যমান কিছু অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছিলেন ট্রাম্প। এ বছর সেটি কঠিন হতে পারে। তিনি যদি পেনসিলভানিয়া এবং ফ্লোরিডার মতো শ্বেতাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যগুলোতে ভোটারদের মন জয় করতে পারেন এবং তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হলেও জয় ছিনিয়ে নিতে পারেন, তাহলে তার হোয়াইট হাউসের মসনদে বসার জন্য ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাওয়া সহজ হয়ে যাবে। হোয়াইট হাউসের দখল নিতে হলে ৫৩৮ ইলেক্টোরাল ভোটের ২৭০ পেতে হয়। তবে দু’জনই যদি ২৬৯ করে ইলেক্টোরাল ভোট পান সেক্ষেত্রে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ওপর সিদ্ধান্ত নেয়ার দায় বর্তায়। স্বভাবতই ট্রাম্প সেখানে সুবিধা পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাইডেন প্রচারে তালগোল পাকালে ॥ এখন পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার ভালভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন বাইডেন। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাব বা অন্য কোন কারণে শেষ মুহূর্তে যদি ডেমোক্র্যাটিক ওই প্রার্থী তালগোল পাকিয়ে বসেন তাহলে পোয়াবারো হতে পারে ট্রাম্পের। বাইডেন এমনিতেই অনেকটা প্রচারবিমুখ। হঠাৎ বড় ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রবণতা দেখা যায়, সমস্যায় পড়তে পারেন সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা লোক। বাইডেন শেষদিকে না এমন কোন কাণ্ড করে বসেন যা তাকে পিছিয়ে দেবে। যদিও বাইডেন এখন পর্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে প্রচার চালাচ্ছেন। অবশ্য শেষ সময়টায় সময়ের বিপরীতে দৌড়াতে হবে তাদের।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com