সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তিকার্যক্রম আগামী ১ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে। চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ভর্তির আবেদন অনলাইনে পূরণ করতে হবে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর হবে খুবই সংক্ষিপ্ত, সুনির্দিষ্ট ও বস্তুনিষ্ঠ। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির নীতিমালা প্রণয়নসংক্রান্ত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। তারই আলোকে এবার সরকারি স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে।
গতকাল সরকারি স্কুলে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি নীতিমালা সংক্রান্ত ভর্তি ও পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে মাউশির মাধ্যমিক শাখার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রশ্ন প্রণয়নের জন্য একটি নির্দেশিকা দেয়া হবে সারা দেশের সরকারি স্কুলগুলোকে। সে নির্দেশনার আলোকেই এবার ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন করা হবে। মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক আবদুল মান্নান গতকাল বৈঠক শেষে নয়া দিগন্তকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই করার কোনো সুযোগ নেই। সে যে শ্রেণীতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সে শ্রেণীর উপযোগী কি না- তাই যাচাই করা হবে। সৃজনশীল বা বড় প্রশ্ন দিয়ে উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়নের সুযোগ থাকে না। সে জন্য এবার থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন হবে সুস্পষ্ট আর উত্তর দিতে হবে আরো সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট এবং বস্তুনিষ্ঠ। এমসিকিউয়ের মতো বা টিক চিহ্নের উত্তর হবে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক মান্নান বলেন, এমসিকিউ বা টিক চিহ্নের মতো নয়। তবে, ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত উত্তরে কিছু লিখতে হবে।
মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) আরো জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রশ্নপ্রণেতাদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। তাদের মতামত নেয়া হবে। তারই আলোকে একটি প্রশ্ন প্রণয়ন নির্দেশিকা জানিয়ে দেয়া হবে সারা দেশের সরকারি স্কুলগুলোকে। সে আলোকেই প্রশ্ন প্রণয়ন করতে হবে ভর্তি পরীক্ষার জন্য।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকারি স্কুলে আগামী ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা (দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণী) ও ২৪ ডিসেম্বর প্রথম শ্রেণীর লটারি অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন বিকেলেই লটারির ফল প্রকাশ করতে হবে। ভর্তি ফরমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭০ টাকা। টেলিটক মোবাইলের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ১৭টি সরকারি বিদ্যালয়ে (প্রথম শ্রেণী রয়েছে) ভর্তি লটারি আয়োজন করা হবে। তার মধ্যে প্রভাতি শাখায় সকাল ১০টায় ও দিবায় বেলা ২টায় লটারি অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ১৮, ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। খাতা মূল্যায়ন হবে ২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর। ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। এবার ঢাকা মহানগরের ৪১টি সরকারি বিদ্যালয়কে বরাবরের মতো ‘এ’ ‘বি’ ও ‘সি’ এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ১৪টি বিদ্যালয়ে ১৮ ডিসেম্বর, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ১৪টি ১৯ ডিসেম্বর ও ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ১৩টি ২০ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকা মহানগরের সব বিদ্যালয়ের শূন্য আসনের তালিকা চাওয়া হবে। তালিকা পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই করা হবে। পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে।
রাজধানীর বাইরের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে লটারি ও ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকদের সমন্বয়ে গঠিত ভর্তি কমিটি গঠন করে রাজধানীর সময়ের সাথে সমন্বয় করে তারিখ নির্ধারণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি ক্লাস শুরু হবে।
ভর্তি পরীক্ষার সময় ও মানবণ্টন : দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পূর্ণমান-৫০, এর মধ্যে বাংলা-১৫, ইংরেজি-১৫, গণিত-২০ নম্বর। ভর্তি পরীক্ষার সময় ১ ঘণ্টা। চতুর্থ-অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পূর্ণমান-১০০। এর মধ্যে বাংলা-৩০, ইংরেজি-৩০, গণিত-৪০ নম্বর থাকবে। ভর্তি পরীক্ষার সময় হবে ২ ঘণ্টা।