E Dermenghem (১৮৯২-১৯৭১) ছিলেন খ্যাতিমান এক ফরাসি সাংবাদিক। তার জনপ্রিয় বই ÔMAHOMET et la tradition islamique’ বা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইসলামী ঐতিহ্য। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে। ১৯২ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করে বিখ্যাত ফরাসি প্রকাশনী Éds. du Seuil। বইটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় Muhammad and the Islamic Tradition নামে ১৯৮৩ সালে। প্রকাশক- Overlook Books. এ বইতে লেখক তিন ভাগে হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জীবনী, ইসলামী সংস্কৃতি-সভ্যতা এবং কুরআনে কারিম ও হাদিসের নির্বাচিত বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করেন।
দারমেনহাম ফ্রান্সে গুরুত্বপূর্ণ তার বিবিধ গবেষণা এবং সাংবাদিকতার জন্য। ইসলাম বিচারেও তিনি জনপ্রিয়। ফরাসি ভাষায় সম্ভবত নবীজীবনীকার হিসেবে তিনিই প্রথম চেষ্টা করেছেন কিছুটা যথার্থতা রেখে জীবনী বর্ণনার। দারমেনহাম আসলে হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি কেমন শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, তা আন্দাজ করার জন্য বিশেষ গবেষণার প্রয়োজন নেই। তাঁর সা: প্রশ্নে তিনি গড়পড়তা পশ্চিমা মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। তবুও তিনি কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন। কারণ বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি অঙ্গীকার তিনি ভুলে যেতে রাজি ছিলেন না।
সেই নারাজি থেকেই তিনি নারাজি প্রকাশ করেছেন ফরাসি কিংবা পশ্চিমা ঐতিহাসিক ও লেখকদের ইসলাম-বয়ানের প্রতি। তার মতে পশ্চিমা জগৎ এ ক্ষেত্রে ক্রুসেডের উত্তরাধিকার থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি যা মুসলিম ও খ্রিষ্টান দুনিয়ায় ‘মতবিরোধ ও বিদ্বেষের আগুন লেলিহান’ করে তোলে। বিশেষত ‘খ্রিষ্টজগতে ইসলামের বিরুদ্ধে ভয়াবহ বিষোদগার সীমা অতিক্রম করে। সেই সীমা অতিক্রম জারি থাকে কোনো রকম তথ্য অনুসন্ধান ছাড়াই।’
‘তথ্য অনুসন্ধান ছাড়া’ ‘বিষোদগারের’ এই যে উত্তরাধিকার, একে প্রধানত বহন করেন পশ্চিমা লেখক, রাজনীতিক ও প্রচার করা। এ ক্ষেত্রে তারা কত নিচে নেমে যায়, তার নমুনা দিয়েছেন দারমেনহাম। তিনি দেখান, (ক) তারা মুহাম্মদকে সা: লুটেরা, ডাকাত সর্দার, কপট, রিপুর পূজারি, লোভাতুর, জাদুকর ইত্যাদি আখ্যা দিতে বিচলিত হয়নি।
(খ) এক লেখক দাবি করেন, হজরত মুহাম্মদ সা: খোদা হয়ে বসেছিলেন! তার রোষ স্থিমিত করতে অনুসারীরা তার নামে পশু কোরবানি দিত!
(গ) এক লেখক দাবি করেন, হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ইন্তেকাল হয় নেশাতুর অবস্থায়। অনুসারীরা মৃতদেহ খুঁজে পান ময়লার স্তূপে! মৃতদেহের কিছু অংশ খেয়ে ফেলেছিল শুয়র!
(ঘ) হজরত মুহাম্মদ সা: সম্পর্কে ব্যঙ্গ কবিতা লিখেছে কবিরা। তারা বলেছে, মুসলিমরা হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ব্রোঞ্জের প্রতিকৃতি বানিয়ে তার উপাসনা করে।
(ঙ) সোনা ও রুপার দ্বারা মহানবীর প্রতিকৃতি বানিয়ে মুসলমানরা হাতির পিঠে রাখত।
দরমেঁগেম দুঃখ প্রকাশ করেন যে, এমন উদ্ভট প্রচারে সবার সামনে ছিল ফরাসিরা।
ফরাসি চিন্তাবিদ গুস্তাভ লে বোঁ ( ১৮৪১-১৯৩১) এর La Civilisation des Arabes প্রকাশিত হয় ১৮৮৪ সালে। বৃহদায়তন এ বই ইসলাম প্রশ্নে পশ্চিমা অন্ধ বিদ্বেষের সমালোচনা করেছে। গুস্তাভ দেখিয়েছেন, চিন্তার স্বাধীনতার প্রশ্নে পশ্চিমারা যতটা উদার, ইসলাম সম্পর্কে ততটাই অনুদার। এ জায়গায় তাদের চিন্তা ও চিত্ত স্বাধীন নয় মোটেও। বরং সেটি বন্দী ভীতি ও ঘৃণার হাতে।
এই ভীতি ও ঘৃণার স্বরূপ ব্যাখ্যা করেন গুস্তাভ। ইউরোপের ইতিহাসে খুঁজে পান এর রসদ। তিনি দেখান বহু শতাব্দী ধরে ইউরোপ তার সব শত্রুর তুলনায় মুহাম্মদকে সা: অধিক বিপজ্জনক মনে করে আসছে।
সেটি এজন্য নয় যে, মুসলিমরা নানা সময়ে ইউরোপ জয়ে এগিয়ে গেছেন। বরং এমন সময়েও তারা আতঙ্কগ্রস্ত ছিল, যখন মুসলিমদের অস্ত্রের ঝনঝন শোনা যাচ্ছিল না। ইউরোপ তখনো মনে করত, ওরা আমাদের ধূলায় লুটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অস্ত্রের অনুপস্থিতিতে সেটি কী দিয়ে সম্ভব? গুস্তাভের ভাষায়, সেটি ‘তাদের সভ্যতার উৎকর্ষ দিয়ে।’ তারা ভাবতো, ইসলামী সভ্যতার ঔৎকর্ষের সামনে ধূলোয় লুটিয়ে পড়ছে তাদের সম্মান।
এটি সেই সময়ের কথা, যখন ফ্রান্সের সিংহাসনে ছিলেন রাজা শার্লেমান (৭৪৮-৮১৪)। ইউরোপ যাকে নিয়ে গর্ব করে এবং রাজাদের আদর্শ হিসেবে আখ্যা দেয়। তিনি শান্তি কামনা করেছিলেন প্রতাপশালী মুসলিম খলিফা হারুনুর রশীদের (৭৬৩-৮০৯) সমীপে। ফলে যুদ্ধ ছিল না। কিন্তু ইউরোপীয় মনে রক্তপাত হচ্ছিল। কারণ মুসলিম সভ্যতার ঔৎকর্ষ ও ইসলামের প্রাধান্য তাদের সভ্যতাকে লাঞ্ছিত করছিল, তাদের ধর্মবোধ বিক্ষত হচ্ছিল!
গুস্তাভ দেখিয়েছেন, এই অপমানবোধ কিভাবে তীব্র হুতাশনে রূপ নেয়, যখন, ১৪৫৩ সালে, সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতেহ (১৪৩২-১৪৮১) কনস্টান্টিনোপল অধিকার করে নেন। গুস্তাভের ভাষায় ‘কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর তারা অহরহ আমাদের ভয়ের মধ্যে রেখেছে।’
পরে যখন মুসলিমরা ইউরোপীয় দখলদারি, উপনিবেশ ও লুটেরাদের কবলে পড়লেন, তখন তো এই ভীতি থাকার কথা ছিল না। কিন্তু তখনো এই ভয় ও বিদ্বেষ জারি ছিল। গুস্তাভ ইউরোপীয় মনের কথা খোলাসা করছেন, ‘এখন অবশ্য আমরা তাদের ভয় থেকে নিস্তার পেয়েছি। কিন্তু মুসলিমদের প্রতি ভয় ও বিদ্বেষ আমরা ছাড়তে পারছি না। কারণ বহু শতাব্দী ধরে যে ভীতিমূলক মানসিকতা আমরা লালন করে আসছি, তা আমাদের মেজাজের অংশ হয়ে গেছে। আমাদের রক্তে ও শিরায় মিশে গেছে ইসলামবিদ্বেষ। পেয়েছে স্থায়ী রূপ।’ গুস্তাভের বিচারে, এ বিদ্বেষ যেমন গোপন, তেমনি গভীর।
গুস্তাভের এ ভাষ্যকে স্পষ্টতা দেয় পশ্চিমা ইতিহাস। বিশেষত মহানবী সা: প্রশ্নে পাশ্চাত্যের ভূমিকা বরাবরই ছিল ভয়ানকভাবে বিদ্বিষ্ট। মুসলিম স্পেনে যখন ইউরোপের যে কোনো দেশের তুলনায় খ্রিষ্টানরা সুখে ও নিরাপদে ছিল, তখনো তাদের মন সুখী ছিল না। কারণ মুসলিম সালতানাত যতই তাদেরকে উন্নত জীবন ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিক, ইসলামের প্রধান্য ও মুসলিম শাসন দেখা একশ্রেণীর খ্রিষ্টানের জন্য ছিল তীব্র যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণার তাড়নায় ৮৫০ সালে চরমপন্থী খ্রিষ্টান পরেফেক্টাস কর্ডোভার বাজারে ইসলামের নবীকে ভণ্ড, বিকৃতকামী ও যিশুবিরোধী বলে চিৎকার করতে থাকে। রাষ্ট্রীয় আইনে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। চরমপন্থী খ্রিষ্টানরা তাকে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বীর হিসেবে দেখাতে থাকে।
কিছু দিন পর সে আবারো নোংরা গালিগালাজ করে মহানবীকে সা:। নিজের দল গড়তে থাকে এবং মুসলিম শাসনকে চ্যালেঞ্জ করার হুমকি দেয়। ফলত আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। চরমপন্থীরা এই মৃত্যুকে বীরত্বের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে। তাকে বানায় আদর্শ। এরপর একের পর এক নোংরা গালাগালি হতে থাকে মহানবীর সা: বিরুদ্ধে। প্রকাশ্য লোকালয়ে, বাজারে কিংবা কাজীর সামনে। সেটি ছিল উদ্দেশ্যমূলক সংগঠিত আক্রমণ। এ কোনোভাবেই ভিন্নমতের প্রকাশ ছিল না। সাধারণ খ্রিস্টানরা এই অশালীনতা মেনে নিচ্ছিল না। কিন্তু আক্রমণকারীরা পৃষ্ঠপোষক পেয়েছিল। ইউলোজিও নামের এক প্রিস্ট এবং পল আলভ্যারো তাদের ইশ্বরের সৈনিক বলে আখ্যা দেন।
ক্যারেন আর্মস্ট্রং (জন্ম : ১৯৪৪-) আলোচনা করেছেন ইউলোজিও এবং আলভ্যারোর প্রসঙ্গ। তিনি দেখিয়েছেন, তারা কতটা বেপরোয়া এবং বোধ ও যুক্তিবর্জিত ছিল! তাদের কাছে ইসলামের উত্থান হলো নিউটেস্টামেন্টে বর্ণিত মহাপ্রতারক এন্টিক্রাইস্টের আগমনের পূর্বাবস্থা। ৬৩৮ সাল থেকে জেরুসালেম যেহেতু মুসলিমদের অধিকারে ছিল এবং মুসলিমরা বলতে গেলে গোটা বিশ্ব শাসন করছিল অতএব চরমপন্থী খ্রিষ্টানরা একে ধর্মীয় আগামবাণীর সাথে মিলিয়ে নিলো, যেখানে বলা হয়েছে, এন্টিক্রাইস্টের আগমনের সাথে জেসাসের আগমনের সম্পর্ক। জেসাসের আগমনের আগে এক যিশুদ্রোহী জেরুসালেমে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। তার মতবাদ হবে অনেকটা বিশ্বাসযোগ্য।
সেই মতবাদ বলতে ইসলাম এবং সেই দ্রোহী বলতে হজরত মুহাম্মদ সা:কে চিত্রিত করা হতো। ধর্মগ্রন্থের দোহাই দিয়ে এর বয়ান পেশ করা হতো ভীতিকরভাবে। ক্যারেন নমুনা হাজির করেছেন ‘দ্য বুক অব রিভিলেশন’ থেকে, যেখানে বিশাল এক দানবের উল্লেখ রয়েছে। যার দেহে চিহ্নিত থাকবে রহস্যময় ৬৬৬ সংখ্যা, সে বুকের ওপর ভর করে ওঠে আসবে মহাগহ্বর থেকে, অধিকার করবে টেম্পল মাউন্ট এবং বিশ্বময় জারি করবে দানবের শাসন।
ইউলোজিও এবং আলভ্যারো পাদ্রিদের লেখা নবীজীবনী সামনে রেখে দেখাতেন, স্পেনীয় বছর ৬৬৬ সালের প্রচলিত ধারণার আটত্রিশ বছর আগে ইন্তেকাল হয় হজরত মুহাম্মদ সা:-এর। অতএব তিনিই ছিলেন এর দ্বারা চিহ্নিত!
এই যে দানব হিসেবে দেখা ও দেখানো, তা খ্রিষ্টীয় কিংবদন্তির সাথে একাকার করে অসাধারণ চাতুর্যের সাথে হাজির করা হয় এবং প্রতারণা, মিথ্যাচার, তরবারি ইত্যাদিকে এই চরিত্রে যুক্ত করে পশ্চিমা মনে স্থায়ী এক প্রতিকৃতি তৈরি করে নেয়। বিদগ্ধ কিছু পণ্ডিত নিজেদের পড়াশোনার মাধ্যমে একে ভুল জানলেও পশ্চিমা সমাজ একেই ধরে নেয় ইসলামের নবীর সা: আসল অবয়ব। এর নাম তারা দেয় মাহাউন্ড মানে দানব! ক্রমেই তারা মাহাউন্ড কথাটিকে ইবলিসের প্রতিশব্দে পরিণত করে!
ক্যারেন আর্মস্ট্রং জানান, ‘কিছু বিশিষ্ট পণ্ডিত ব্যক্তি পয়গম্বর ও তাঁর প্রচারিত ধর্ম সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ ধারণা অর্জনের চেষ্টা করলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে মাহাউন্ডের সেই দানবীয় রূপ স্থায়ী আসন গেড়ে নেয়। তাকে বানানো হয় উদীয়মান পশ্চিমা পরিচয়ের বিশাল শত্রু। আমরা যা চাই, যা কামনা করি, তার প্রতিপক্ষ তিনি।’ ক্যারেন দেখান, এই মানসিকতা ইউরোপে এখনো রয়ে গেছে প্রবলভাবে।
পশ্চিমা বুদ্ধিজীবিতা ও সংবাদমাধ্যম এখন সেই ধারাই এগিয়ে নিচ্ছে। কানাডিয়ান চিন্তাবিদ উইলফ্রেড কন্টিওয়েল স্মিথ (১৯১৬-২০০০) ইসলাম ইন মডার্ন হিস্ট্রি (প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৭৭) গ্রন্থে স্বীকার করেছেন, পৃথিবীর যে কোনো ধর্মীয় নেতার তুলনায় পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে মুহাম্মদ সা: খুবই নিম্নস্তরে স্থান পেয়েছেন এবং পৃথিবীর সব ধর্মের মধ্যে ইসলামের মর্মোপলব্ধি পাশ্চত্যে সবচেয়ে কম।
স্মিথের বিচারে এটি নতুন কিছু নয়। কারণ ‘ইতিহাসের গতিধারা এমনভাবে প্রবাহিত হয়েছে, যাতে গোড়া থেকেই ইসলামের সাথে পাশ্চাত্যের বৈরি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।’ স্মিত এর কারণও দেখিয়েছেন। তার বয়ান হচ্ছে, ‘একমাত্র মুহাম্মদ সা:-ই পাশ্চাত্য সভ্যতাকে ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ প্রদান করেন। আদর্শ ও অস্ত্রের যুগপৎ এই আক্রমণ ছিল সরাসরি এবং অত্যন্ত শক্তিশালী।’
স্কটিশ চিন্তাবিদ উইলিয়াম মন্টোগোমারি ওয়াটের (১৯০৯-২০০৬) বয়ানে স্মিথের প্রতিধ্বনি। তিনি জানান, ‘শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইসলামই ছিল খ্রিষ্টজগতের প্রধান শত্রু। কেননা ইসলামের সাথে তুল্য অধিকতর সংগঠিত কোনো রাষ্ট্রশক্তি খ্রিষ্টজগতের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি।’
এই দানব ছবি পশ্চিমা মনে এমনভাবে খোদাই হয়ে আছে যে, সালমান রুশদি (জন্ম : ১৯৪৭-) যখন ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসে প্রধান চরিত্র বানালেন মাহাউন্ডকে এবং তার সাথে জড়িয়ে দিলেন শয়তানের সম্পর্ক, তখন পশ্চিমা মন নিজের ভেতরের সুস্থির চিত্রেরই প্রতিরূপ দেখল সেখানে। স্বাগত জানাল বইটিকে। মুসলিমদের বেদনা এবং সত্যের কান্নাকে তারা বুঝতে চাইল না।
পশ্চিমা মন নিজের ভেতর লুকানো এই ছবি হাজির করতে চেয়েছে বারবার। যেকোনো উপলক্ষে মহানবীর সা: প্রসঙ্গে প্রদর্শন করতে চেয়েছে বৈরিতা। সম্ভাব্য সব উপায়ে মনের ভেতর লালিত সেই অবয়ব প্রকাশ করতে কম কোশেশ করেনি। অতএব হিংসাশ্রয়ী পাদ্রি ও লেখকদের অভব্য আক্রমণ ও মিথ্যাচারের বাইরেও সারাবিশ্বে বিখ্যাত পশ্চিমা চিন্তানায়কদের একটি অংশের মধ্যেও সেই কোশেশ লক্ষ করা যায়। মহাকবি আলিগিয়েরি দান্তে (১২৬৫- ১৩২১) ডিভাইন কমেডির ধারণা ইসলাম থেকে নিয়েও ইসলামের নবীকে নরকের শেষ স্তরে স্থান দিলেন। অভিজ্ঞতাবাদের জনক বলে বিখ্যাত ফ্রান্সিস বেকন (১৫৬১-১৬২৬) মুসলিমদের সরাসরি শিষ্যত্ব স্বীকার করেও বিবিধ প্রবন্ধে মহানবী সা:কে বিদ্রূপাত্মকভাবে উপস্থাপন করলেন। ফ্রাঁসোয়া মারি এরিয়েঁ ভল্টেয়ার (১৬৯৪- ১৭৭৮) ১৭৪২ সালে প্রকাশিত ট্র্যাজেডি ও মাওমেত নাটকে ইসলামের নবীকে নিয়ে উপহাস করলেন, আঘাত করলেন নবীজীর সম্মানে। সে আক্রমণে ছিল ঔদ্ধত্য, কুরুচি। সেই ধারা ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনের যুগে আরো তীব্র রূপ নেবে, এটা ইউরোপীয় বিদ্বেষবিষাক্ত মনের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার; কিন্তু আধুনিককালে তারা এ বিদ্বেষ চর্চা করছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে। অথচ ইতিহাসের এ ধারাবাহিকতার অনুশীলনে আদৌ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন আসে না, আসে সেই বিদ্বেষ ও ধারাবাহিক সেই লড়াই। অতএব ফ্রান্স, ডেনমার্ক অথবা নেদারল্যান্ডসে যখন মহানবীর সা: ব্যঙ্গ ও অপমানকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হয়, তখন পেছনে কাঠি নাড়ে পশ্চিমা সেই অসুখের ধারাবাহিকতা। গুস্তাভ লি বোঁ-এর ভাষায় যে অসুখের নাম ‘রক্তে ও শিরায় মিশে যাওয়া ইসলামবিদ্বেষ!’
লেখক : কবি, গবেষক