মাত্র চার বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে নির্বাচনে লড়েছিলেন ডেমোক্র্যাট পার্টির হিলারি ক্লিনটন। মার্কিন ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। সাবেক এ ফার্স্ট লেডি হেরেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। চার বছর পর নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা মনোনয়ন দেয় আরেক নারী কমলা হ্যারিসকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে। কমলা ব্যর্থ হননি, নির্বাচিত হয়েছেন এবং ইতিহাস গড়েছেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেই নয়, রেকর্ড গড়েছেন অন্তত আরও দুটি ক্ষেত্রে। তিনিই প্রথম কৃষ্ণবর্ণের এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত, যিনি এ পদে আসীন হলেন।
কমলা হ্যারিসের জন্ম ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ওকল্যান্ডে। বাবা ডোনাল্ড জে হ্যারিস জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত, ছিলেন অর্থনীতির অধ্যাপক। মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান শ্যামলা গোপালান হ্যারিস, ছিলেন স্তন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ। ৫৫ বছর বয়সী কমলা হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর ছিলেন। শুরুতে তিনি ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন। প্রতিপক্ষ ছিলেন জো বাইডেনসহ আরও অনেকেই। শেষ পর্যন্ত জো বাইডেনই দলের মনোনয়ন পান। তিনি পরে কমলাকে বেছে নেন রানিং মেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে। গতকাল শনিবার পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফল আসার পর জো বাইডেনের প্রেসিডেন্সি নিশ্চিত হয়। নিশ্চিত হয় কমলা হ্যারিসের ভাইস প্রেসিডেন্সিও। এ যাত্রায় বাইডেনও একটি রেকর্ড সঙ্গী করেছেন। তিনি হচ্ছেন মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কমলা হ্যারিসের এ ইতিহাস গড়া বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক কোটি নারীকেও প্রতিনিধিত্ব করে। যাদের সাধারণত পাশ কাটিয়েই যাওয়া হতো, ঐতিহাসিকভাবেই যাদের প্রতিনিধিত্ব খুব কম এবং পদ্ধতিগতভাবে যারা ছিল অবজ্ঞার পাত্র। কমলার বিজয়ের মাধ্যমে সেই নারী জনগোষ্ঠী দেশটির দ্ইু শতাধিক বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক নতুন শক্তির অধিকারী হলেন।
আমেরিকার ইতিহাসে এ পর্যন্ত মাত্র দুজন নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়েছেন। ২০০৮ সালে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে সারা পলিন, ১৯৮৪ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জেরালডিন ফেরারো। তাদের কেউই নির্বাচিত হতে পারেননি।
কমলার জীবন অবশ্য আগে থেকেই রেকর্ডময়। বহু প্রতিবন্ধকতা তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। ছিলেন সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি। সেখান থেকে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হন ২০১০ সালে। দুই বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বিপক্ষের প্রতি কড়া প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়ার দক্ষতা দেখিয়েই তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। দেশটির দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ নারী সিনেটরও তিনি।
৭৭ বছর বয়সী বাইডেন হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া সবচেয়ে বয়সী রাজনীতিক। এ কারণে এক মেয়াদের বেশি তার হোয়াইট হাউসে থাকার সম্ভাবনা কম বলেও অনেকে মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে কমলার সম্ভাবনাই সবচেয়ে উজ্জ্বল বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। আবার বাইডেন তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কোনো কারণে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পাবে যুক্তরাষ্ট্র। কেননা প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব ছাড়লে ভাইস প্রেসিডেন্টই ওই পদে আরোহণ করেন।