সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ন

সন্ধ্যায় ১৫০ মাইল বেগে আছড়ে পড়তে পারে বুলবুল

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৯
  • ২৬৫ বার

বর্তমান অবস্থান ও গতি ঠিক থাকলে প্রবল গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আজ শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার ওপর দিয়ে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। বঙ্গোপসাগর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে আসছে। বর্তমান গতিপথ ঠিক থাকলে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরের ওপর দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসবে হারিকেন ক্যাটাগরি-২ মানের ঘূর্ণিঝড় হিসেবে। স্থলভাগে প্রবেশের সময় এর গতি থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। এ দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এগিয়ে আসায় চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের অপারেশনাল কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে কয়েক শ’ লাইটার জাহাজসহ ফিশিং ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকাগুলো।
বাংলাদশের আবহাওয়া অধিদফতর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ৬টায় ১৮ নম্বর বুলেটিনে জানিয়েছে, বুলবুল আরো উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় (১৮.৫ক্ক উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৭.৬ক্ক পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি সামনের দিকে স্থানভেদে প্রায় ৭৫ থেকে ৮৫ কিলোমিটার এগিয়েছে। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সমুদ্র বন্দরগুলো, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত নামিয়ে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত নামিয়ে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ও চাঁদের শুক্লপক্ষের (মুন ফেজ) প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

কানাডা থেকে আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি ঠিক কখন উপকূলে আঘাত হানবে এটা স্পষ্ট করে এখনো বলা যাচ্ছে না। বিভিন্ন আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বিভিন্ন রকম সময়ের কথা উল্লেখ আছে। আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম (জিএফএস), কানাডার জিইএম আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় আঘাত হানতে পারে বলে উল্লেখ করেছে। আবার জার্মানির আইসিওএন, আমেরিকার নেভি গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট মডেল (এএভিজিইএম) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট (ইসিএমডব্লিউএফ) শনিবার দুপুর ১২টায় উপকূলে আঘাত হানবে বলে উল্লেখ করেছে।
মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রবেশের সময় গতিবেগ থাকতে পারে ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের অংশ স্থলভাগে প্রবেশের পর এর কেন্দ্র এবং ঘূর্ণিঝড়ের পশ্চাৎভাগের অংশ স্থলভাগের ওপরে আসতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লেগে যায়। এ কারণে একটি ঘূর্ণিঝড় কোনো স্থানের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে শেষ করতে সময় লেগে যায় ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা। ফলে একই স্থানে ঘূর্ণিঝড়টি ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা এর তাণ্ডব চালিয়ে যেতে পারে।
মাতমোর অবশিষ্টাংশ থেকে বুলবুল : গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় মাতমো ভূমির ওপর দিয়ে এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার ভ্রমণের পর পুনরায় জন্ম নিয়েছে বুলবুল হিসেবে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঝড়ের এ ধরনের পুনঃজন্ম অস্বাভাবিক নয়, এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মাতমো ফিলিপিন সাগরে গঠিত হয় গত ২৪ অক্টোবর। পরে মাতমো ৩০ অক্টোবর দক্ষিণ চীন সাগরে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ে পরিণত হয়। মাতমো এ ধরনের চতুর্থ গ্রীষ্মণ্ডলীয় ঝড়, যার পুনঃজন্ম হয়েছে এবং এ ধরনের ঝড়ের মধ্যে মাতমোই দ্বিতীয় ঝড়, যেটা হারিকেনের শক্তিসম্পন্ন হতে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আবহাওয়াকেন্দ্রগুলো উল্লেখ করেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় হিসেবে মাতমো পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভিয়েতনাম উপকূলে উঠে যায় এবং ৩১ অক্টোবর স্থল নি¤œচাপে পরিণত হয়। তখন এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১২ কিলোমিটার (৭০ মাইল)।

উল্লেখ্য, ভূমির ওপর দিয়ে সামনে অগ্রসর হয়ে সাধারণত ঝড় দুর্বল হয়ে যায়। তবে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানির ওপর দিয়ে এগিয়ে গেলে দুর্বল ঝড়টিও শক্তিশালী হয়ে থাকে। ভূমিতে তাপমাত্রা যতই থাকুক তাতে ঝড় কখনোই শক্তিশালী হয় না।

মাতমোর অবশিষ্টাংশ ভিয়েতনাম অতিক্রম করে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে মেঘ ও আর্দ্রতা নিয়ে আসে এবং পরে এটা চলে আসে মিয়ানমারে। মিয়ানমার থেকে আন্দামান সাগরে মাতমোর অবশিষ্টাংশ পৌঁছানোর পরই আন্দামান সাগরের পানিতে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এটা ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করে। সেখানে লঘুচাপ ও সুস্পষ্ট লঘুচাপ হওয়ার পর এটা আরো পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গত বুধবার রাতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় বুলবুলে পরিণত হয়। বুলবুল বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণন গতিতে অগ্রসর হচ্ছে ঘণ্টায় ২৭ কিলোমিটার গতিতে। শেষ পর্যন্ত এটা ক্যাটাগরি-২ ধরনের ঝড়ে পরিণত হতে পারে।
পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ : ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণে শুক্রবার থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত উপকূলবর্তী জেলাগুলোয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংস্থার মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো: মাহফুজুর রহমান গতকাল এক আদেশে এ নির্দেশ দেন। পাউবোর জনসংযোগ পরিদফতরের পরিচালক মুনসী এনামুল হক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সেন্টমার্টিনে দেড় হাজার পর্যটক বিপাকে : বাসস জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ প্রভাবে সমুদ্র উত্তালে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে দেড় হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে আড়াই হাজারের মতো পযর্টক সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে যান। প্রায় ১২ শ’ পর্যটক রাতে দ্বীপে অবস্থান করেন। এর আগের কয়েক দিনে যাওয়া আরো তিন শতাধিক পযর্টক দ্বীপে অবস্থান করছিলেন।
চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেশনাল কর্মকাণ্ড বন্ধ : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ধেয়ে আসার খবরে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গতকাল সকাল থেকেই চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য লাইটারিং বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলে জারি করা হয় অ্যালার্ট-২ এবং সন্ধ্যায় অ্যালার্ট-থ্রি। এর পর থেকে বন্ধ করা হয় বন্দরের সব ধরনের অপারেশনাল কর্মকাণ্ড। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায় কয়েক শ’ লাইটার জাহাজ, ফিশিং ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকাগুলো।

বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি : চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে অ্যালার্ট-থ্রি তথা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা ধাপ জারি করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের সব অপারেশনাল কর্মকাণ্ড। বন্দর কর্তৃপক্ষ মূল জেটিতে নোঙররত সব জাহাজ বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আজ শনিবার সকালের জোয়ারেই বন্দরের জেটি জাহাজশূন্য করার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক নয়া দিগন্তকে জানান, আবহাওয়া অধিদফতর ৬ নম্বর বিপদসঙ্কেত দেখাতে বলার পর চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়েছে। বহির্নোঙরে আগে থেকে অবস্থান করা জাহাজগুলোকে নিরাপদে থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সব জাহাজের ইঞ্জিন চালু রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, নৌ বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর ০৩১-৭২৬৯১৬ এবং পরিবহন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর ০৩১-২৫১০৮৭৮, সচিব বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর ২৫১০৮৬৯।

সতর্ক শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ : চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারোয়ার-ই-জামান নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবেলা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি। তবে চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড়ের প্রান্তিক(পেরিফেরিয়াল) আঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে আজ শনিবার দুপুরের পরে। আজ সকালে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি দেখে পদক্ষেপ নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব ধরনের সতর্কতামূলক প্রস্তুতি রয়েছে।
চসিকের কন্ট্রোল রুম চালু : ঘূর্ণিঝড় বুলবুল চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার আশঙ্কায় নগরবাসীকে যেকোনো সেবা দিতে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গতকাল শুক্রবার সকালে চীনে অবস্থানকারী সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্দেশে কন্ট্রোল রুম চালু করে চসিক। ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য ও সহযোগিতার প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগের জন্য চসিকের পক্ষ থেকে নগরবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে। চসিকের কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্ব^রগুলো হলো-০৩১-৬৩০৭৩৯, ০৩১-৬৩৩৬৪৯।

জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি : এ দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে জেলা দুর্র্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত ওই সভায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা এবং মেডিক্যাল টিম গঠন করার কথা জানানো হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিপুল স্বেচ্ছাসেবক। মজুদ রাখা হয়েছে ত্রাণসামগ্রী ও টাকা এবং শুকনো খাবার।
খুলনায় ৩৩৮ সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত : খুলনা ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনার আকাশ বৃহস্পতিবার রাত থেকে মেঘাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় খুলনা মহানগরীসহ ৯ উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে।

ভোলায় ৮ কন্ট্রোল রুম, ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবী : ভোলা সংবাদদাতা জানান, ভোলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলার ৬৬৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৯২টি মেডিক্যাল টিম। এ ছাড়াও জেলা সদরসহ সাত উপজেলায় আটটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মানুষকে সতর্ক করতে উপকূলে চলছে রেড ক্রিসেন্ট ও সিপিপির প্রচারণা। গত শুক্রবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, ঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে।

উত্তাল কুয়াকাটা উপকূল : কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে উত্তাল রয়েছে কুয়াকাটা উপকূলীয় এলাকা। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে কলাপাড়ার গোটা উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়ার কারণে ঝড় আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষের মধ্যে। সাগর উত্তাল থাকায় শুক্রবার সকাল থেকে সাগরে মাছ ধরারত সকল ট্রলার উপকূলে নিরাপদে আশ্রয় নেয়। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বৃহস্পতিবার রাতে দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মুনিবুর রহমান। সভায় উপজেলার সকল আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখাসহ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সতর্ক রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। এ দিকে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় উপকূলে ফেরার পথে ট্রলার থেকে সাগরে পড়ে বেল্লাল হোসেন (৪০) নামের এক জেলে নিখোঁজ রয়েছে।

মির্জাগঞ্জে প্রস্তুতি সভা : মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, ‘বুলবুল’ আঘাত হানলে পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে এক প্রস্তুতিমূলক এক সভা অনুষ্ঠিত ও উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে মাইকিং করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপজেলার ৪২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সার্বিক বিষয়ে মনিটর করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৭৩৩-৩৩৪১৪৫।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com