দেশের গুরুত্বপূর্ণ কারাগারগুলোর সিসিটিভি মনিটরিং কার্যক্রম, ট্যানয় সিস্টেম, আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে কাজ করছে না। কারাগার আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত এসব যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। আর সিসিটিভি ভিডিওতে প্রদর্শিত সময় এবং লোকাল সময়ের মধ্যে পার্থক্য দেখা দিচ্ছে। এ ব্যাপারে ঠিকাদারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষ ও প্রকল্প পরিচালককে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। অন্য দিকে চার বছর ধরে চলমান এই প্রকল্পের ৩ বছর ৮ মাসে বাস্তবায়ন হার মাত্র ৩৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এই হার ৮৫ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা ছিল বলে পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কারা নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে সরকার দেশের কারাগারের ভেতরে ও বাইরের সীমানাকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) আওতায় আনারও সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১৬ সালে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। মূলত ২০১৮ সালে প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার কথা। কিন্তু দুবার এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নেয়া হয়। চার বছর ধরে চলমান এই প্রকল্পের তিন বছর ৮ মাসে বাস্তবায়ন হার মাত্র ৩৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা একই সময় পর্যন্ত সংশোধিত ডিপিপিতে প্রক্ষেপিত আর্থিক অগ্রগতির লক্ষ্যমাত্রার (৮৫.৬৭) তুলনায় কম। প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমান অবস্থায় প্রকল্পের বাকি কাজের একটি সময়াবদ্ধ কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তাব করে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য আইএমইডি থেকে বলা হয়েছে। এখন আবার আরো ছয় মাস সময় বাড়িয়ে বাস্তবায়নকাল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
এই প্রকল্পের এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২, হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার, কাশিমপুর এবং মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার, কাশিমপুরে প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষে বা ভবনে সিসিটিভি মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে না। নির্মিত ভবন কারাগারের জন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কারা কর্তৃপক্ষের নির্মিত ভবনে সিসিটিভি মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে। কাশিমপুর কারাগার-১ ও ২, হাজীপুর জেলা কারাগার এবং কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ট্যানয় সিস্টেম যান্ত্রিক সমস্যা হওয়ায় ঘোষণায় সমস্যা হচ্ছে। ট্যানয় সিস্টেম কার্যকর করার জন্য ঠিকাদার কর্তৃক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারা কর্র্তৃপক্ষ এবং প্রকল্প পরিচালককে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১, কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুরে স্থাপিত আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টরে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয়ায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে ঠিকাদারকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। অন্য দিকে সিসিটিভি ভিডিও তে প্রদর্শিত সময় এবং লোকাল সময়ের মধ্যে পার্থক্য দেখা দেয়ায় উভয় ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ খানে সময়ের সমরূপতা নিশ্চিত করার জন্য আইএমইডির পক্ষ থেকে কারা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সিসিটিভি মনিটরিং ভবন সংলগ্ন মাটি দেবে গেছে। ভবনের ফাটল বা চিড় সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে কারা কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগকে বলা হয়েছে।
আইএমইডির সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত চিঠির তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৩২টি কারাগারের মধ্যে ৩০টি কারাগারে সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সাতটি পণ্য প্যাকেজের মধ্যে চারটি প্যাকেজের আওতায় নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম এবং একটি প্যাকেজের আওতায় ফার্নিচার সব কারাগারে সরবরাহ ও স্থাপন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর ৭টি কারাগারে প্যাকেজ জিডি-২ এর আওতায় সিসিটিভি নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ২৫টি কারাগারে নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সরবরাহ এবং স্থাপনের কাজ চলমান আছে। প্রকল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মোবাইল ফোন জ্যামার সলিউশনের দরপত্র প্রক্রিয়া বাকি আছে। ওই প্যাকেজের মূল্য ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪০.৮৩ শতাংশ। ওই জ্যামারটি দুই বছর আগে প্রণীত হয়েছিল। দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমদানিপূর্বক সরবরাহ ও স্থাপন করা প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের বা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্ভব হবে না।
সুরক্ষা বিভাগকে দেয়া চিঠিতে আইএমইডি বলছে, প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৩২টি কারাগারে এ যাবত স্থাপিত নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামের একটি স্টক টেকিং করতে হবে। এগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি কোনো সমস্যা থাকে তা চিহ্নিহ্নহ্নত করে প্রতিকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যাপারে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, কারা অধিদফতর, প্রকল্প পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার বা জেল সুপারের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য বলেছে পরিকল্পনা কমিশনের এই বিভাগটি।