করোনা ভাইরাসের টিকা বাজারজাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যাতে সংগ্রহ করা যায়, সেদিকে সর্বোচ্চ নজর দিয়েছে সরকার। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পাঁচ শর্তে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যার মধ্যে ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় প্রথম পর্যায়ে কেনা হবে দেড় কোটি ডোজ টিকা। পরবর্তী সময় টিকা সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য কোল্ড চেইন ইকুইপমেন্ট কেনা, এডি সিরিঞ্জ সেফটি বক্স ও পরিবহন খরচ, লোকজনকে প্রশিক্ষণ, নিরীক্ষা, সুপারভাইজিং এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।
আপাতত যে পাঁচ শর্তে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো- টিকা কেনার আগে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। অর্থ বিভাগের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করতে হবে ব্যাংক গ্যারান্টি। অর্থ ব্যয়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধিবিধান যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে। টিকা কেনা, কোল্ডস্টোরেজ চেইন সিস্টেম, এডি সিরিঞ্জ সেফটি বক্স কেনাসহ যাবতীয় বিল-ভাউচার যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নসহ অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে কেনার এক মাসের মধ্যে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর আগে টিকা কিনতে অর্থ বিভাগের কাছে ১২০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ চায়। যা দিয়ে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাসের তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার কথা বলা হয়েছিল।
সম্প্রতি অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ স্বাক্ষরিত বরাদ্দপত্রে বলা হয়েছে- করোনা ভাইরাস প্রতিরোধক টিকা কেনা, পরিবহন ও কোল্ড চেইনে পৌঁছানো পর্যন্ত তিন কোটি ডোজ কিনতে প্রয়োজন এক হাজার ২৭১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এই অর্থের অর্ধেক অর্থাৎ ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভ্যাকসিন কেনার কাজে ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি আরও ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে টিকা সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য কোল্ড চেইন ইকুইপমেন্ট কেনা, এডি সিরিঞ্জ সেফটি বক্স ও পরিবহন খরচ, লোকজনকে প্রশিক্ষণ, নিরীক্ষা, সুপারভাইজিং এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য। এই অর্থ চলতি বছরের বাজেটে করোনার জন্য রাখা ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বলে বরাদ্দপত্রে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, অক্সফোর্ডের প্রতি ডোজ করোনার টিকা কিনতে সরকারের খরচ পড়বে চার ডলার (বাংলাদেশি ৩৪০ টাকা)। জনসাধারণের কাছে তা বিক্রি করা হবে পাঁচ ডলার বা ৪২৪ টাকায়। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকসই হয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিকে উৎপাদনে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে কোম্পানির কাছ থেকে পাঁচ ডলার করে একটি টিকা কেনা হবে। এর মধ্যে সেরাম পাবে চার ডলার এবং তাদের লোকাল এজেন্ট বেক্সিমকো পাবে এক ডলার করে।