ব্রেনে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল তার। দু’সপ্তাহ আগে অপারেশন করে তা দূর করানো হয়েছে। হাসপাতাল থেকে বুয়েন্স আয়ারসের বাড়িতে ফিরেছেন ফুটবলের কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা। কিছুটা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছিলেন। কিন্তু বুধবার ঘটে যায় মহাবিপত্তি। আকস্মিক ৬০ বছর বয়সী ম্যারাডোনা তার ভাতিজাকে বললেন- আমি অসুস্থ বোধ করছি। তাই তিনি বিছানায় যাচ্ছেন। সম্ভবত এটাই ছিল তার জীবনের শেষ কথা।
এই বিছানায় যাওয়া যে তার শেষ বিছানাসঙ্গ হবে তা কে জানতো! আসলে হার্ট এটাক করেছিলেন ম্যারাডোনা। কাউকে কিছু বুঝতে দেয়ার আগেই তিনি পরপারে পাড়ি জমান। কিন্তু পিছনে রেখে গেছেন ফুটবল খেলার এক বিস্ময়কর জাদু। অন্যদিকে রেখে গেছে বিশৃংখল এক জীবনধারা। এলকোহল আর মাদকে আসক্ত হয়ে তিনি সুনামের মতোই দুর্নাম কুড়িয়েছেন। মৃত্যুকালে রেখে গেছেন ৫টি সন্তান। এসব সন্তান তার চারজন স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয়া। সর্বশেষ তার সঙ্গে ২০ বছর ধরে সংসার করছিলেন স্ত্রী ক্লাউডিয়া ভিলাফেনে। আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ের নায়ক দিয়েগো ম্যারাডোনা বুধবার সকালে নাস্তা খেতে উপর থেকে নামেন। এ সময় তিনি অন্যদের বলেন, তার শীত শীত লাগছে। তারপর বিছানায় যাওয়ার আগে ভাতিজাকে বলেন ‘মে সিয়েন্তো মাল’। অর্থাৎ আমি অসুস্থ বোধ করছি। এ কথা বলেই তিনি বিছানায় চলে যান। দুপুরের একটু আগে একজন নার্স ডাকা হলো। তিনি এলেন। ম্যারাডোনাকে পরীক্ষা করলেন। অন্যদের সহায়তা চেয়ে ফোন করলেন। তার ফোন পেয়ে প্যারামেডিক দল পৌঁছাল। কিন্তু তার আগেই চিরবিদায় নিয়েছেন ম্যারাডোনা। তার মৃত্যুতে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। তিনি টুইট করেছেন, আপনি (ম্যারাডোনা) আমাদেরকে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। আপনাকে নিয়ে আমরা সীমাহীন আনন্দিত। আমাদের সবার মধ্যে আপনি সর্বোত্তম। আমাদের মাঝে আপনি থাকার জন্য ধন্যবাদ দিয়েগো। সারাজীবন আপনাকে আমরা মিস করবো।
ওদিকে এ খবর প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী বুয়েন্স আয়ারসের রাস্তায় শোকার্ত মানুষের ঢল নেমেছে। ইতালির নেপলস, ইউরোপের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে- সব স্থানে শোকে কাঁদছেন লাখ লাখ, কোটি কোটি মানুষ। ম্যারাডোনা তার প্রথম এবং একমাত্র স্ত্রী ক্লাউডিয়া ভিলাফেনের ঔরসে দালমা (৩৩) এবং গানিনা (৩১) নামের দুটি কন্যা সন্তানের জনক। ক্লাউডিয়াকে তিনি ১৯৮৪ সালে বিয়ে করেন। এ সম্পর্ক টিকে ছিল ২০০৪ সাল পর্যন্ত। এরপর দীর্ঘদিনের প্রেমিকা ভেরোনিকা ওজেদার গর্ভে জন্ম নেয় তার সবচেয়ে ছোট ছেলে দিয়েগো ফার্নান্দো।