একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি পার করছে বিশ্ব। এর প্রভাব রয়েছে দেশের অর্থনীতিতেও। কোভিড ১৯-এর কারণে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো বর্তমানে বেশ খানিকটা ভঙ্গুর। বিশেষ করে রপ্তানি-আমদানির চিত্র অনেকটা স্থবির রয়েছে। রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ শতাংশ। আমদানি কমেছে ১৩ শতাংশের বেশি। বেসরকারি বিনিয়োগেও গতি কম। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বাস্তবায়ন চিত্রও হতাশাব্যঞ্জক। রাজস্ব খাতেও সুখবর নেই। পরপর দুই অর্থবছরে এ খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে (এনবিআর অংশে)। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায় ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে বাজেট নিয়ে কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটে ব্যাপক কাটছাঁট হচ্ছে। প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট হতে পারে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার থাকলেও তা কমিয়ে ৫ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হচ্ছে। সংশোধিত বাজেটে গত অর্থবছরের বাজেট কাটছাঁট হয়েছিল ২২ হাজার কোটি টাকা; এর আগে দুই অর্থবছরে যা ছিল যথাক্রমে ২১ হাজার ও ১৮ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষে বাজেটের আয় ও ব্যয় উভয় ক্ষেত্রে ব্যাপক বাস্তবায়ন ঘাটতি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও নতুন অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার কমিয়ে আনতে হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের মূল বরাদ্দ ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি থেকে কমিয়ে সংশোধিত বাজেটে ৫ লাখ ১ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়; কিন্তু বাস্তবে বাজেট ব্যয় হয় ৪ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রাকে সংশোধিত বাজেটে ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকায় হ্রাস করা হয়েছিল। বাস্তবে অনুন্নয়ন ব্যয় হয় ২ লাখ ৫১ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটের মূল লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। একে সংশোধিত বাজেটে ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বাস্তবে এর বিপরীতে ব্যয় হয় ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানাচ্ছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেট খুব বেশি বড় করতে চাচ্ছে না সরকার। কারণ আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সম্পদ প্রাপ্তিতে যেমন এক প্রকার হতাশা রয়েছে, তেমনিভাবে বৈদেশিক সম্পদ প্রাপ্তিতেও রয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা।
বাজেট তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, মূলত কোভিডে রাজস্ব প্রাপ্তির বড় ধরনের ঘাটতির কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এদিকে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, চলতি বাজেটের মতো আগামী অর্থবছরের বাজেটেও করোনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দুর্যোগ খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ১০ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং করোনা মোকাবিলার মতো বড় কর্মসূচি থাকবে নতুন বাজেটে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৮৭ লাখ করা হয়েছে। আগামী বাজেটে উপকারভোগীর সংখ্যা এক কোটিতে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
করোনার প্রথম ঢেউ মোকাবিলায় ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আরেকটি প্রণোদনার পরিকল্পনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থ মন্ত্রণালয় এটি নিয়ে বর্তমানে কাজ করছে। নতুন প্রণোদনা ঘোষণা করা হলে বাজেটে পৃথকভাবে বরাদ্দ রাখা হতে পারে।