শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১২:২১ অপরাহ্ন

৩ ডাক্তারের যৌন কেলেঙ্কারী ফাঁস করলেন সাবেক ছাত্রী

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯
  • ৩৭১ বার

ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ফাঁস করেছেন একই কলেজের সাবেক এক ছাত্রী। ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি ওই কলেজের রেসিডেন্সিয়াল ফিজিসিয়ান ডা. ঝিলাম জিয়া, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশীদ ও এন্ডোক্রাইনোলজি ডায়াবেটোলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. কে এম নাহিদুল হকের বিরুদ্ধে সরাসরি যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন।

অভিযোগকারী ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের এফ-৩ ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন। তিনি বর্তমানে ঢাকায় একটি হাসপাতালে কর্মরত আছেন।

ফেসবুকে ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা গঠিত ক্লোজ গ্রুপ DAMC:The Students United-এ গত শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) তিনি এই পোস্টটি দেন।

তিনি লিখেন, ‘‘ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজে কিছু প্রিডেটর টাইপ ‘বিবাহিত’ ডাক্তার এবং আমাদের শিক্ষক আছেন, যাদের কেউ কেউ অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে আড়ালে এবং কেউ কেউ সাহসের সাথে জনসম্মুখে ছাত্রীদের অশ্লীল কথাবার্তা ও ইঙ্গিত, বিনা অনুমতিতে গায়ে হাত দেয়া এবং বুলানো, এমনকি মাঝরাতে ফোন দিয়ে (যেদিন উনাদের স্ত্রীরা বাসায় থাকেন না) উনাদের সাথে বিবাহ বহির্ভুত যৌনসম্পর্ক করার জন্য নির্লজ্জভাবে ভিক্ষা চান বা ওই টপিকে যাওয়ার জন্য একাধিক কায়দায় ফোনে, চ্যাটে, মেসেজে, ভিডিওকল দিয়ে হ্যারাস করেন (একাধিক ছাত্রীকে একই সাথে!), কেউ আবার চাকরি ও চিকিৎসা দেয়ার নাম করে চেম্বার আওয়ার শেষে এবং ছুটির দিনে চেম্বারে ডেকে দরজা লক করে বিনা অনুমতিতে গায়ে হাত দেন, এমনকি হটাৎ করে জড়িয়ে পর্যন্ত ধরেন।

এদের মাঝে ছাত্রী বা জুনিয়র/সিনিয়র ফিমেল কলিগদের প্রতি কোন সম্মানবোধ নাইই, ইনারা শুধুই দেখবেন কে দেখতে কেমন, কার শরীর কত আকর্ষণীয় এবং কাকে কীভাবে কায়দা করা যায়। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এগুলিকে সেক্সচুয়াল হ্যারাসমেন্টের আন্ডারে জিডি এবং মামলা দায়ের করা যায়।

‘আমার ‘জানামতে’ এবং ‘অভিজ্ঞতামতে’ এরা হলেন নীচের এই তিনজন মহামান্য ব্যক্তি-ডা. ঝিলাম জিয়া (মেডিসিন), ডা. কে এম নাহিদুল হক (এন্ডোক্রাইনোলজি ডায়াবেটোলজি), ডা. হারুনুর রশীদ (মেডিসিন)। গতকাল রাতে সাড়ে এগারোটায় ইমো app-এ একাউন্ট খোলার সাথে সাথে ডা. ঝিলাম জিয়া স্যার আমাকে মেসেজ দিতেই থাকেন ও ভিডিও কল দিতেই থাকেন। [বি.দ্র. ফোর্থ ইয়ারে থাকতে তিনি ক্লাস চলাকালে আমার ফোন নাম্বার নেন এবং বহুবার আমাকে মেসেজ করেছেন, যা তিনি আরও বহু ছাত্রীর সাথে করেছেন]।

স্ত্রিনশট যা দেখছেন, এরপর তিনি হঠাৎ কল দিয়ে আমার সাথে প্রেমের আলাপসহ তিনি আমাকে সেক্সচুয়ালি কতখানি স্যাটিসফাই করার ক্ষমতা রাখেন এবং ফিমেল এনাটমির উপর (ছাত্রীদের আরকি) উনার কই কই চোখ যায় আর কী কী ভাল্লাগে, কী কী তিনি ছুঁয়ে দেখতে চান এই নিয়ে আকর্ষক একটি লেকচার দেন। কারোর সেই লেকচার শুনার মতন ইচ্ছা আর নির্লজ্জতা থাকলে আমার কাছে শুনতে চাইতে পারেন, রেকর্ড করে রেখেছি। স্ত্রিনশটে দেয়া নাম্বার উনার ব্যক্তিগত নাম্বার, নিশ্চিত হতে চাইলে ফোনও করতে পারেন।’’ দাবি করেন তিনি।

ডা. কে. এম. নাহিদুল হক স্যার কী কী বিস্ময়কর কাজ চেম্বার করার সময় শেষ হবার পর এবং ছুটির দিনে চেম্বারে ডেকে চাকরি/চিকিৎসা দেয়ার নামে সবার অলক্ষে দরজা লক করে বা এসিস্ট্যান্ট দিয়ে দরজায় পাহারা বসিয়ে করেছেন, সেগুলি আর কেউ বলতে রাজি না হোক, আমার বা ‘আমার বাবার’ ও আমার প্রাক্তন কলিগের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন।

এখন পর্যন্ত আমার দেখা সবচাইতে ধূর্ত ব্যক্তি হলেন ইনি, যার এইসব কাজকর্মের প্রমান দেখানো অত্যন্ত কঠিন এবং উনি মেন্টাল ম্যানিপুলেশনে সিদ্ধহস্ত। সেই সকল কাজকর্ম ধামাচাপা দেয়ার জন্য তিনি একাধিক মানুষকে কর্মস্থলে এমনকি তাদের বাসায় গিয়ে তাদের পরিবারকে হুমকি দিয়েছেন, এমনকি হাসপাতালের ওয়ার্ডে মারতে পর্যন্ত গিয়েছিলেন [এই ঘটনাটি ঘটে উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পর]। এই বিষয়ে এই কলেজের বেশ কয়েকজন প্রাক্তন মেডিকেল অফিসার এবং প্রাক্তন ইন্টার্ন ডাক্তার সাক্ষ্য দিতে পারবেন।

আর সব শেষে ডা. হারুনুর রশীদ স্যারের কথা আর কি বলবো? উনি ক্লিনিক্যাল ক্লাসে শুধুমাত্র ছাত্রীদের কাছে ডাকেন এবং বিনা অনুমতিতে গায়ে হাত দেন/আদর করেন, সেগুলির সরাসরি শিকার হওয়া এবং কাউকে শিকার হতে দেখা-দুইটাই অত্যন্ত-অত্যন্ত অস্বস্তির ব্যাপার, শুধুমাত্র প্রফের রেজাল্ট উনার হাতে-এই অজুহাতে মানুষ এর প্রতিবাদ করে না বা এই বিষয়ে আপত্তি প্রকাশে ভয় পায়।

আমার এই পোস্ট দিয়ে কারোর আসবে-যাবে কিনা, আমি জানি না। তবে মেয়েদেরকে বলে রাখি, মেয়েরা, সাবধান হও। তোমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এবং কর্মস্থলের, এমনকি রোগী হয়েও নিরাপদ নও। সত্যিকার জীবনের ভিলেনরা তোমাকে রামদা আর মেশিনগান নিয়ে এসে সরাসরি কিডন্যাপ করে নিয়ে ওয়্যারহাউজে বেঁধে বলবে না ‘সুন্দরী, তোমার মন চাই না, দেহ চাই’।

সত্যিকার প্রিডেটর/এবিউসার/হ্যারাসার হয় হচ্ছে চার্মিং, ভদ্র, উপকারীর মুখোশধারী, সমাজের সম্মানিত নাগরিক এবং ক্ষমতাবান। এদের মিথ্যার জাল এমনই দৃঢ় যে স্বয়ং উনাদের পরিবার বা কলিগরাও এগুলি মানতে নারাজ এবং তাদের প্রতিই ডিভেন্সিভ। এবং সত্যিকারের একটা এডভাইস: সাইলেন্ট থাকবে না। সাইলেন্স হচ্ছে এবিউস এবং হ্যারাসমেন্টের প্রথম ও প্রধান শর্ত। বান্ধবীকে জানাও, ক্লাসমেটদের জানাও, পরিবারকে জানাও, ইন্টারনেট ব্যবহার করে কাছের মানুষদের কাছে সাহায্য চাও, কিছু না হোক থানায় গিয়ে একটা জিডি করে আসো।

[জিডি করতে এক টাকাও লাগে না, যে কোন বিষয়ে গিয়ে তুমি একটা কমপ্লেইন্ট লিখে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে এন্ট্রি করতে পারো। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, পুলিশ এবং উকিলের কাছে একা গিয়ে আমি যে সাহায্য পেয়েছি তা বলার নয়। জিডি করার পর পুলিশ এমনকি আমার কেস সিআইডি হেডকোয়ার্টারে রেফার করেছিল, যেখানে বিনাপয়সায় গিয়ে একা একা সাইবার ক্রাইমের মতন জটিল জিনিষ চমৎকারভাবে সমাধান করে এসেছি।] সুতরাং, মেয়েরা, সাবধান হও। ‘না’ বলতে শিখো। মানুষকে জানাতে শিখো।

যারা তোমাদের সম্মান করতে পারে না, তাদের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব তোমাদের না। They brought their disrespect upon themselves all by themselves. আর, প্লিজ, ছেলেরা! এইসব পরিস্থিতিতে মজা না নিয়ে তোমার আশেপাশের মানুষদের প্রতি প্রটেক্টিভ এবং ডিফেন্সিভ হও এবং হস্তক্ষেপ করতে শিখো। তোমরা এধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত সরাসরি শিকার হও না, তারমানে এই নয় যে এক্ষেত্রে তোমাদের কোনই নৈতিক দায়িত্ব নাই।

এন্ড লাস্ট বাট নট লিস্ট, সকল শিক্ষকদের বলছি যদি এই লেখাটি আপনার চোখে পড়ে, অত্যন্ত শ্রদ্ধা এবং বিনয় নিয়ে আপনাদের পায়ের কাছে আমি আমার মাথা নত করে বলছি, ‘বাবা-মার স্থানের পর শিক্ষকের অবস্থান’- এই শিক্ষা নিয়ে আমরা বড় হয়েছি। সেই শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং বিনয়ের কারনে আমরা আপনাদের সম্মান রক্ষা করি। সেই সুউচ্চ অবস্থানটি যদি ভয়, বিরক্তি, অবিশ্বাস, অসম্মান, ঘৃণা, সুযোগসন্ধানী মনোভাব দিয়ে দূষিত হয়ে যায়, তখন আমরা কী করব? আপনাদের প্রতি অসম্মান নিয়ে চুপ করে থাকবো। আমার কথা গুলো কঠিন হতে পারে, অশ্লীল শোনাতে পারে, অসম্মানজনক মনে হতে পারে, কিন্তু এই কথাগুলো একজন নগণ্য ছাত্রী হিসেবে শিক্ষকদের কাছে ও সিনিয়রদের কাছে ‘অনুরোধ’ মাত্র।’’

ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের রেসিডেন্সিয়াল ফিজিসিয়ান ডা. ঝিলাম জিয়া এব্যাপারে বলেন, সে এটা কেন লিখেছে তা আমি পরিস্কার না। ওর সাথে একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে ছাত্রীকে এহেন অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব যৌক্তিক কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি ইতস্তত হয়ে ফোন রেখে দেন।

ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি ডায়াবেটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কে এম নাহিদুল হক বলেন, আমার চেম্বারে আমার সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চেয়েছিল ওই মেয়েটি। কিন্তু আমি রাজি না হওয়ায় সে আমার নামে এসব কথা ফেসবুকে লিখেছে। আমি ওই মেয়েটির বাবাকে বিষয়টি জানিয়েছি।

ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশীদ এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জহিরুল ইসলাম মিয়া বলেন, ওই ছাত্রী ফেসবুকে যে স্ট্যাটাস দিয়েছে সে বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। তাৎক্ষণিকভাবে ওই ছাত্রীর পিতার সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। একারনেই সে এসকল স্ট্যাটাস দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, তারপরেও ওই ছাত্রীর পিতাকে বলেছি ছাত্রীকে সাথে নিয়ে আমার কাছে আসতে। তারা আসলে সামনা সামনি শুনে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবো। যদি শিক্ষকরা কোনো অপরাধ করে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com