সত্যিই অবিশ্বাস্য। রোমাঞ্চ আর ঠাসা উত্তেজনায় কাপল সিডনি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। তৃতীয় টেস্ট জিততে শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ৮ উইকেট, ভারতের ৩০৯ রান। জয় নয়, শেষ দিনে টিকে ড্র করাটাই মুখ্য ছিল ভারতের। সেই লক্ষ্য পূরুণ করেছে দলটি। চেতশ্বর পূজারা-রিশব পন্থের ব্যাটিং দলকে দিয়েছিল ড্র করার ভিত্তি। শেষটাতে বিহারী ও অশ্বিনের চরম ধৈযশীল ব্যাটিং। ফলাফল, সিডনি টেস্ট ড্র। চার ম্যাচের সিরিজে এখনো সমতা ১-১ এ।
প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া করেছিল ৩৩৮ রান। প্রথম ইনিংসে ভারতের অল আউট ২৪৪ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৩১২ রানে ডিক্লিয়ার করে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের সামনে জয়ের টার্গেট দাড়ায় ৪০৭ রানে। চতুর্থ দিন শেষে এ লক্ষ্যে খেলতে নেমে ২ উইকেটে ৯৮ রান করে ভারত। সোমবার ম্যাচের পঞ্চম দিনে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ৫ উইকেটে ৩৩৪ রানে। এক ওভার বাকি থাকলেও তা আর খেলা হয়নি। শুরু হয় দুই দলের আনুষ্ঠানিক করমর্দন।
চতুর্থ দিন শেষে ভারতের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৯৮ রান। ৯ রানে পূজারা ও ৪ রানে অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে ছিলেন অপরাজিত। সোমবার ম্যাচের পঞ্চম দিনে অসীম ধৈযের মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামবে টিম ইন্ডিয়া। চলে বলের বল ঠেকানোর পালা।
কিন্তু অধিনায়ক রাহানে টিকতে পারেননি। দলীয় ১০২ রানের মাথায় তিনি বিদায় নেন লিওনের বলে ওয়েডের হাতে ক্যাচ দিয়ে। পঞ্চম দিনে রানই করতে পারেননি তিনি। আগের দিনের ৪ রানই থাকে সম্বল।
তবে এরপর ভারতের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন চেতশ্বর পূজারা ও রিশব পন্থ জুটি। মূলত এই জুটিই দলকে রোমাঞ্চের ড্রয়ের মূল ভিত্তি গড়ে দেয়। এই জুটি পার করে দেয় ৪৪ ওভার।
এই জুটি দলকে নিয়ে যান ২৫০ রান অবধি। চেতশ্বর টেস্ট মেজাজে থাকলেও মারমুখি ঢঙে ছিলেন রিশব পন্থ। আর সেটাই হয়তো তাকে সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত করেছে। তিনি আউট হন সেঞ্চুরি থেকে মাত্র তিন রান দূরে থাকতে। ১১৮ বলে ৯৭ রানে পন্থ লিওনের বলে ক্যাাচ দেন কামিন্সের হাতে। বল ঠেকানোর মিছিলে যখন ব্যস্ত সতীর্থরা, তখন পন্থ তার ইনিংসে হাকিয়েছেন ১২টি চার ও তিনটি ছক্কা। তার এই ওয়ানডে স্টাইলে খেলা দলের বাকিদের অনুপ্রাণিত করেছে পুরো দিন টিকে থাকতে।
পন্থের বিদায়ের পর সাজঘরে ফেরেন চেতশ্বর পূজারাও। তাও সেটা ওভার প্রায় নয় ওভার পর। হ্যাজলউডের বলে বোল্ড তিনি। ৭৭ রানের ইনিংসে পূজারা বাউন্ডারি হাকিয়েছেন ১২টি। কিন্তু বল খরচ করেছেন ২০৫। এমন ইনিংসই ভারত চেয়েছে প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের কাছে।
২৭২ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পর চিন্তার ভাজ পড়েছিল ভারতের কপালে। কারণ স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের কোটা প্রায় শেষ। শেষ চমকটা ষষ্ঠ উইকেটে দেখিয়েছে হানুমা বিহারি। তার সঙ্গে ছিলেন স্পিনার রবী চন্দ্রন অশ্বিন।
অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করেন দু’জন। বলের পর বল ঠেকিয়ে গেছেন তারা। বেশি স্ট্রাইক নেয়ার চেষ্টায় ছিলেন হানুমা বিহারী। যাতে অশ্বিনকে বেশি বল মোকাবেলা করতে না হয়। কিন্তু তারপরও হিসেব মতো সব হয়নি। স্ট্রাইক পেয়েছেন অশ্বিন। নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করে গেছেন বলের পর বল।
টিকে থাকতে হবে বলে শক্তিরও অপচয় করেননি দু’জন। অনেক সিঙ্গেল, ডাবলস নেয়নি তারা। দিন শেষে অনেকেই তাই আক্ষেপে পুড়ছেন, আরেকটু হলো তো রেকর্ড গড়ে ভারত জিতেই যেতে পারত।
কিন্তু সেই পথে হাটেনি অশ্বিন ও বিহারী। ড্র টাই করতে চেয়েছেন দু’জন। শেষ অবধি সফল তারা। এই জুটি ভাঙতেই পারেননি অস্ট্রেলিয়ার কোনো বোলার। এই জুটিতে রান এসেছে ৬২, ২৫৯ বলে। সত্যিই অসাধারণ।
১৬১ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন বিহারী। চার হাকিয়েছেন চারটি। ১২৮ বলে সেখানে অশ্বিনের রান ৩৯*। তিনি অবশ্য চার হাকিয়েছেন সাতটি।
প্রথম টেস্ট জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় টেস্ট জেতে ভারত। সিডনি টেস্ট ড্র। ফলে ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ব্রিসবেন টেস্ট এখন অলিখিত ফাইনাল।