দেশবাসীর দৃষ্টি এখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের (চসিক) দিকে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ সিটি করপোরেশনে আগামী ২৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বন্দরনগরীর ভোটারদের প্রত্যাশা-চসিক নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর, নির্বিঘ্ন ও পরিচ্ছন্ন হবে। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, এখানকার ৫৭ শতাংশ ভোটকেন্দ্র অর্থাৎ ৭২৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি), যা সুষ্ঠু, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের অন্তরায়। নির্বাচন কমিশনের উচিত-এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ভোট নিয়ে কোনোরকম বিতর্ক সৃষ্টির অবকাশ না থাকে।
গত বছর চসিক নির্বাচনের প্রথম তফসিল ঘোষণার পর ১৮ মার্চ রাতে পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক। এ হত্যাকাণ্ডের পর সঙ্গত কারণেই নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। করোনাভাইরাসের কারণে ২১ মার্চ চসিক নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এরপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য করা হলে এ বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়। তবে প্রচার শুরুর প্রথম দিনেই ছুরিকাহত ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের একজন কর্মী। এ ছাড়া ১২ জানুয়ারি পাঠানটুলী ওয়ার্ডের মগপুকুরপাড় এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর একজন সমর্থক। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারকালে প্রতিদিনই ঘটছে নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরসহ ছোট-বড় সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা এবং এসব ঘটনায় ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। কাজেই নির্বাচনের দিন বা এর আগে পরে সংঘাত-সহিংসতা যাতে না বাড়তে পারে, এজন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
এবারের চসিক নির্বাচনে মোট ভোটার ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৩ ও নারী ভোটার ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৯ জন। চট্টগ্রামের ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রে থাকবে ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনসহ মোট মেয়র প্রার্থী ৭ জন। এ ছাড়া এ নির্বাচনে ১৬৩ জন সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ৫৬ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটি ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে জয়লাভের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। এ পরিস্থিতিতে বেআইনি অস্ত্র, কালো টাকা ও পেশিশক্তি ব্যবহারের আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মোকাবিলা করতে পারলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আশা করি কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। অতীতে স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা গেছে, কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও অনেক অঘটন ঘটেছে। মূলত নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার বিষয়টি বহুলাংশে নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কতটা স্বাধীনভাবে ও দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করবে বা করতে পারবে তার ওপর। নির্বাচনের মতো একটি সংবেদনশীল, স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন শতভাগ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবে, এ আশা আমরা করতেই পারি। এ ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার বিষয়টিও জরুরি। আমরা মনে করি, দেশে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির স্বার্থে চসিকসহ সব স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া প্রয়োজন।