বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১৪ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার ইতিবাচক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২১
  • ২০০ বার

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন রোববার বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পূর্ব নির্ধারিত আলোচনার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কিছু ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। আমরা তাদের (মিয়ানমার) বলেছি আপনাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার একটি সুযোগ রয়েছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য একটি তালিকা দিয়েছে এবং বাংলাদেশ তাদের শুরু করতে বলেছে।

ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধান না করা হলে এই অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

তিনি বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মিয়ানমারের সাথে মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে বাংলাদেশের সাথে ২০১৭ সালে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সম্প্রতি মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়কমন্ত্রী কাইয়া টিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনকে লেখা এক চিঠিতে এ কথা জানান।

এছাড়া বাংলাদেশসহ সব প্রতিবেশী দেশের সাথে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান ও পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ক সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে মন্ত্রী চিঠিতে উল্লেখ করেন।

কাইয়া টিন বলেন, মিয়ানমার প্রতিবেশী দেশের সাথে পারস্পারিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যেকোনো দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের সমাধান করতে চায়।

গত ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যাচাই বাছাইয়ের জন্য আট লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ।

‘কিন্তু মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার মানুষের তথ্য যাচাই করেছে। এ বিষয়ে তাদের গুরুত্বের অভাব রয়েছে,’ বলেন তিনি।

ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করলেও মিয়ানমার তা করছে না।

তবে প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কারণ ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছিল মিয়ানমার।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন : ‘আস্থার অভাব’

প্রায় তিন বছর আগে মিয়ামারের সেনারা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে ‘হত্যা ও ধর্ষণ’ চালিয়েছিল এবং রোহিঙ্গা গ্রামগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিল। জাতিসঙ্ঘ, রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল, ইউনাটেড স্টেটস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং আরও অনেককেই এ বিষয়টি দেখিয়েছে।

সে সময় আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা ‘সহিংস গণহত্যা’ থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছিল এবং বাংলাদেশ এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে জায়গা দিয়েছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বাংলাদেশ একাধিক উপায়ে- দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং বিচার ব্যবস্থা মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ২০১৮ সালের ১৬ জানুায়ারি ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সম্পর্কিত একটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করে ঢাকা-নেপিদো, যা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হয়েছিল।

মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থার অভাবের কারণে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে দুইবার প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

চীন-বাংলাদেশ-মিয়ানমার ত্রিপক্ষীয় আলোচনা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারকে আরো অধিকতর চাপ প্রয়োগ এবং বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ প্রত্যাবাসন শুরু করতে ‘সতর্কতার সাথে আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।

২০ জানুয়ারি প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শেষে পররাষ্ট্র সচিব জানান, আগের দুটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা এগিয়ে যেতে চান, যাতে সফলভাবে এবার প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়।

প্রত্যাবাসনের অবস্থা তৈরিতে উভয় দেশের মধ্যে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। চীনের ভাইস মিনিস্টার লুও ঝাওহুই বেইজিং থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সাথে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত এবং সব রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে অনেক সময় লাগবে। এছাড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গত তিন বছরে ৯০ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে, এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

বাংলাদেশ চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রত্যাবাসন শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার বলছে যে যৌক্তিক ব্যবস্থাতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। বিশেষ করে ১ এপ্রিল সংসদে তাদের বৈঠক হবে।

মাসুদ মোমেন বলেন, ‘স্পষ্টতই, প্রথম প্রান্তিকে শুরু করা কঠিন হবে। প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি মহাপরিচালক পর্যায়ের হটলাইন খোলা হবে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগের দুটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা এগিয়ে যেতে চান, যাতে সফলভাবে এবার প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়।

সূত্র : ইউএনবি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com