সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর হওয়ার প্রথম দিন সোমবার থেকেই অঘোষিত ধর্মঘট শুরু হয়েছে দেশের সড়ক পরিবহন সেক্টরে। নতুন আইনে বেপরোয়া মোটরযানের কারণে দুর্ঘটনা হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল, সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। গণমাধ্যমের খবর বলছে, পরিবহন নেতাদের উসকানিতে শ্রমিকরা অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছেন। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, কিছু নেতা পরিবহন শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে বলছেন, তাঁদের ফাঁসি হবে। এ কারণে শ্রমিকদের এই কর্মবিরতি। অবশ্য সড়ক পরিবহন নেতারা বলছেন, ধর্মঘট ডাকেননি, নতুন কঠোর আইনে ভীত হয়ে চালক-শ্রমিকরা বাস চালাতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। অথচ সরকার এখন পর্যন্ত তেমন কঠোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের পথে যায়নি। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকরের প্রথম দিনে সহনীয় মাত্রায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অথচ প্রথম দিনেই দেশের উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিমের ১৪টি জেলায় অবৈধ কর্মবিরতি ও আকস্মিক বাস বন্ধে দুর্ভোগে পড়তে হয় দূরগামী যাত্রীদের। বাস চলাচল বন্ধের দ্বিতীয় দিনে আরো নতুন এলাকা যোগ হয়েছে। খুলনা, রাজশাহী ও শেরপুরের পর মঙ্গলবার পিরোজপুর ও ঝালকাঠিতেও বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে শ্রমিকরা। ফলে সড়কে নেমে দুর্ভোগে পড়া মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। গাজীপুরে পরিবহন শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকালে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করলেও দুই ঘণ্টা পর উঠে যায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধের পর এবার সারা দেশে ট্রাক ধর্মঘটের ডাক এসেছে। এদিকে নতুন আইন সংশোধনের দাবিতে ট্রাক মালিক-শ্রমিকরা বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছেন। পরিবহন সেক্টরের নেতারা বলছেন, আইনের সব ধারা নিয়ে তাঁদের আপত্তি নেই। তাঁরা বলছেন, কিছু বিষয় নিয়ে তাঁদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকার আশ্বস্ত করলেও পরে সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। এ কারণেই কর্মসূচি।
সরকার এখন পর্যন্ত সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে অনড় অবস্থানে আছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেছেন, কোনো চাপেই নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের পথ থেকে সরকার সরে আসবে না। এ আইন প্রয়োগে যেন অযথা বাড়াবাড়ি না হয়, সে ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। অঘোষিত বাস ধর্মঘটে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। ট্রাক ধর্মঘট শুরু হলে পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু এই ধর্মঘট কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এ ধরনের ধর্মঘটের নেপথ্যের উসকানিদাতাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে উল্লেখ করা দরকার, রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাটিতে শতভাগ কার্যকর করা গেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট দেখা দেবে না। কার্যকরভাবে নতুন আইন প্রয়োগে সরকার পিছপা হবে না—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।