কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার শ্রীমন্তপুর এলাকায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় জাকির হোসেন (৪৮) নামে এক নসিমন চালকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শুক্রবার রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যার পর শনিবার একটি ডোবার পাশে লাশ ফেলে যায়। পরে শনিবার নিহতের মেয়ে নাঈমা আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। শান্ত স্বভাবের জাকির হোসেনকে কেন হত্যা করা হলো বা কারা তাকে হত্যা করতে পারে- এ নিয়ে এলাকায় শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনসহ হত্যকারীদের সনাক্ত করতে মাঠে নামে চান্দিনা থানা পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু না থাকলেও শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ঘাতককে। কিন্তু কিভাবে? নসিমন চালক জাকির হত্যাকাণ্ডের কোন স্বাক্ষী বা ক্লু না থাকলেও হত্যাকারীদের সনাক্ত করতে স্বাক্ষী হয়েছে জুতা! ঘটনাস্থলের কাছাকাছি স্থানে একপাটি রাবারের জুতা পাওয়া যায়। এরপর সেই জুতা ঘিরেই শুরু হয় পুলিশের তদন্ত।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে বের হয়ে আসে ওই জুতার মালিকের খোঁজ। জুতার মালিকের নাম ছানাউল্লাহ (২৬)। তিনি একজন সিএনজি চালক। পুলিশ অভিযান চালিয়ে জুতার মালিক উপজেলার শ্রীমন্তপুর গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে সিএনজি চালক ছানাউল্লাহকে আটক করে। ছানাউল্লাহর দেয়া তথ্যমতে- একই গ্রামের আব্দুল এরশাদের ছেলে আব্দুল মালেক (২৮)-কেও আটক করে। এরপরই খুলতে শুরু করে হত্যাকাণ্ডের রহস্যের জট।
তাদের দেয়া তথ্য মতে জানা যায়, সম্প্রতি জাকির হোসেনের সাথে সিএনজি কেনা-বেচা নিয়ে ছানাউল্লাহর কথা কাটাকাটি হয়। ওই কথা কাটাকাটির ক্ষোভ পুষে রাখে ছানাউল্লাহ। শুক্রবার রাত প্রায় ১টার সময় জমির আইল দিয়ে জাকির হোসেন বাড়ি ফেরার সময় মনের ক্ষোভ মেটাতে জাকিরের উপর আক্রমণ করে ছানাউল্লাহ ও তার সহযোগী মালেক। মুখ চেপে ধরে কিল-ঘুষির একপর্যায়ে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ে জাকির হোসেন।
কিছুক্ষণ পর তারা বুঝতে পারে যে জাকির হোসেন মারা গেছেন। আর এরপরই হত্যাকাণ্ডটি ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে নিতে নিহত জাকিরের লাশ বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলার চেষ্টা করে তারা। জাকিরের লাশ ডোবার পাড়ে নিয়ে যেতেই দূর থেকে অজ্ঞাত কোনো এক ব্যক্তির টর্চের আলো পড়ে তাদের উপর। আর এরপরই ভয় পেয়ে লাশ সেখানেই ফেলে পালিয়ে আসে হত্যাকারী মালেক ও ছানাউল্লাহ। এসময় তাড়াহুড়া করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসার সময় পথিমধ্যে ঘাতক ছানাউল্লাহর বাম পায়ের একটি জুতা খুলে পড়ে যায়।
এমন লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) কুমিল্লার ৭নং আমলী আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট গোলাম মাহবুব খানের আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয় আরেক ঘাতক আব্দুল মালেক। তার একদিন পর বুধবার (২০ নভেম্বর) একই আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয় ঘটনার মূলহোতা ছানাউল্লাহ।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দিনা থানা পুলিশের এসআই গিয়াস উদ্দিন জানান, হত্যাকারীদের তথ্যমতে তারা জাকির হোসেনকে মারধর করতেই আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু তাদের এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষিতে মারা যায় জাকির হোসেন। আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।