দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। এক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পদে পদে নানা ভুল-ত্রুটি আর গাফিলতি। অনিয়ম-দুর্নীতিও চলছে দেদার। ফলে বেড়ে যাচ্ছে প্রকল্পের ব্যয়। সঙ্গত কারণেই বাড়ছে মেয়াদকালও। রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা যাচ্ছে বড় বড় প্রকল্পগুলোতে ভুলের পর ভুলে। এমনকি ব্যয়-সময় বৃদ্ধি থেকে নিস্তার পেতে ও অনিয়ম রোধে নেওয়া ইজিপিতেও দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ আসছে। এসব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গত সপ্তাহেও একনেক বৈঠকে প্রকল্পের ব্যয়-মেয়াদ বাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামছুল হক মনে করেন ভুল বা ত্রুটির পেছনে দুই ধরনের কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- দক্ষতা বা পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নকশা বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন ঠিকমতো যাচাই-বাছাই করা হয় না। এটি করার দায়িত্ব প্রকল্প কর্তৃপক্ষের। মানে বাস্তবায়নকারী সংস্থার। প্রকল্প কাজে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানরাও ফাঁকি দেয় অনেক সময়। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে মাঠ পর্যায়ে নিজে না গিয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে করার ঘটনা আছে। এ কারণেও প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ত্রুটি ধরা পড়ে।
সূত্রমতে, উন্নয়ন প্রকল্পে দেরি হওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এর কারণ অনুসন্ধানে দফায় দফায় বৈঠক করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সুপারিশ আর নির্দেশনার পরও সুফল মেলেনি এখনো। সম্প্রতি ৩১টি আঞ্চলিক প্রকল্প নিয়ে তদন্ত করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সেখানে দেখা যায়, কিছু প্রকল্পে ইজিপির দরপত্রের মূল্যায়নপর্বেও বিলম্ব। ৩১টি প্রকল্পের মধ্যে সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, রংপুর, রাজশাহী ও কুমিল্লার আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণ ও মেরামতে নেওয়া প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম তদন্ত করে কমিটি। এর মধ্যে বেশিরভাগ প্রকল্প সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিলেট জোনের দুটি প্রকল্পে মূল্যায়নে
সময় লেগেছে ৭৭ দিন ও ৭১ দিন। দরপত্র মূল্যায়নের সাধারণ সময়সীমা ২৮ দিন। ৮টি সড়ক প্রকল্পে স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি সময় লেগেছে দরপত্র মূল্যায়নে। এসব প্রকল্পের খোঁজ নিয়ে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, চুক্তি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে শিথিল মনোভাব পোষণ করে ঠিকাদাররা। চুক্তির শর্ত বাতিলের দায়ে ‘নোটিশ অব ডিফল্ট’ জারি এবং সে অনুযায়ী ‘রেমিডিয়াল মিজার’ গ্রহণ না করলে ওই ঠিকাদারের চুক্তি বাতিলের সুপারিশ করে কমিটি।
একাধিক প্রকল্পে দেখা যায়, একই ঠিকাদার দেশব্যাপী কাজ করে। মূলত সাব কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা হয়। ফলে কাজের মান ঠিক থাকে না। চুক্তিতে যৌথভাবে কাজের উল্লেখ ছাড়া সাব কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে কাজ করা হলে কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেন এ রকম নজির কম। মাঠপর্যায়ে প্রকল্প কর্তাদের তদারকির ঘাটতি ধরা পড়ে অনেক প্রকল্পে। ঠিকাদারের কারিগরি বা আর্থিক সক্ষমতার সুস্পষ্ট অপ্রতুলতার ক্ষেত্রে কালবিলম্ব না করে চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নিতে সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সওজের চুক্তি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে ঠিকাদারের মধ্যে শিথিলতা দেখা যায়। সে কারণে সক্ষমতার চেয়েও বেশি কাজ পাচ্ছে। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে কাজের অগ্রগতি। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া কমিটিতে অতিরিক্ত সচিব নীলিমা সরকার ছিলেন আহ্বায়ক। সেখানে সওজের প্রকৌশলীরাও ছিলেন সদস্য হিসাবে।
ভুল পরিকল্পনায় সওজের রাস্তাঘাটে খরচ ও ব্যয় বাড়ছে। ধরা পড়ছে ডিজাইনের ত্রুটি। একই অবস্থা রেলেও। যোগাযোগ অবকাঠামোয় এ অবস্থা সবচেয়ে বেশি। প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধিতে দায়ী করা হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতাকে। এখন ভূমি অধিগ্রহণের জন্য পৃথক সাপোর্ট প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। দেরিতে হলেও ধরা পড়ছে ভুল নকশা ও ভুল পরিকল্পনা। ভুল নকশায় নির্মাণ করা হয়েছে যশোর-খুলনা মহাসড়কের পালবাড়ী থেকে রাজাঘাট অংশ। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়নি কিন্তু বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে উঁচু-নিচু অবস্থা। অর্থাৎ রাস্তার বিভিন্ন অংশ ফুলে গেছে, যাকে বলে ‘রাটিং’। এ থেকে সৃষ্টি হচ্ছে খানাখন্দের। এর সমাধানে ফের পিচ ঢালাই করেও ফল মেলেনি। আবার রাটিং দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নজরে এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও। তাই ‘বিব্রত’ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
এ প্রকল্পের নকশা, সমীক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ভুলের জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, ভুল নকশার পাশাপাশি প্রকল্পের সমীক্ষাতেও ছিল ভুল। যে পরিমাণ গাড়ি চলবে ধারণা করেছে তার চেয়েও বেশি চলছে। তা ছাড়া এ সড়কে অতিরিক্ত ওজনের বাহন চলছে। এসব কারণে ৩২১ কোটি টাকায় ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগে ‘রাটিং’ সৃষ্টি হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের একটি নির্মাণ প্রকল্পে প্রতিটি ধাপে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। তিনবার মেয়াদ বৃদ্ধি করেও সড়কের কাজ শেষ না হওয়া এবং কাজের নিম্নগতির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। ওই তদন্তে নেমে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এবং ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। ডিজাইন ত্রুটি, ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে ধীরগতি ও নিম্নমানের কাজ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অর্থ ও সময় অপচয়ের কারণে দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
সূত্রমতে, সওজের বরিশাল জোনের অধীনে ‘চরখালী-তুষখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে অনিয়ম ও দায়িত্বে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। শুরুতে এ প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নে ছিল ডিজাইন ত্রুটি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে সড়ক প্রশস্ত করার ডিজাইন করা হয়। অথচ নেওয়া হয়নি অনাপত্তি। তা ছাড়া ডিজাইনে আরও বেশকিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরুর এক বছর পর নানা জটিলতা শেষে অনাপত্তি সংগ্রহ করে সওজ। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে বহিরাগতদের দিয়ে। অর্থাৎ সওজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদার অন্য স্থানীয় ঠিকাদার ও জনবল দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল জোড়াতালি দিয়ে। এসব দেখেও না দেখার ভান করেছেন প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এর খেসারত হিসেবে তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি, নিম্নমানের কাজ সবই চলেছে। টেকসই সড়ক উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতার অংশ হিসেবে এ ধরনের কাজে রাষ্ট্রের অপচয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৪ জানুয়ারি চিঠি দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বলেছে, চরখালী-তুষখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা প্রকল্পের প্যাকেজ ৫-এর ঠিকাদার তমা কনস্ট্রাকশন হলেও তারা নিজস্ব যন্ত্রপাতি ও জনবল ব্যতীত অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজটি পরিচালনা করছে। এটি নিশ্চিত হওয়ায় ৮৬৩ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও এ প্যাকেজের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৩৬ শতাংশ। তাই তমা কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে ‘ডিবার’ ও এলডি আরোপ/জামানত বাজেয়াপ্ত করতে বলা হয়েছে। আর ঠিকাদারের অনুমোদনহীন কাজ জেনেও বিষয়টি প্রকল্প পরিচালকও সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে করে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি ও সময়ের অপচয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
ছোট প্রকল্পের পাশাপাশি বড় প্রকল্পেও একই দশা। যেমন- ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন নির্মাণ প্রকল্পটির পরিকল্পনায় ছিল ভুল। এতে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এর নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি। ফলে ২০১৮ সালে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ তথা দ্বিতীয় প্রকল্প নিতে হয়। এ নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের জন্য অতি প্রয়োজনীয় হলেও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন নির্মাণের আগে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করা হয়নি। এজন্য প্রকল্পটিতে কোনো পরিবেশগত পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনা (ইএমপি) অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ভূগর্ভস্থ পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে নেই কোনো মাস্টার প্ল্যান। ফলে এ কাজে রয়েছে ধীরগতি। আইএমইডি বলছে, সংশোধনের প্রস্তাবে নতুন কিছু কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এর বাইরে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী রেলওয়ে ওভারপাসের উচ্চতা বাড়াতে হয়েছে। এতে ওভারপাসের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার থাকলেও তা বেড়ে ৪ দশমিক ৪৪৪ কিলোমিটার হয়ে গেছে। সড়ক খাতে আরেক মেগা প্রকল্প এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর অংশটি চার লেন নির্মাণ বিলম্বের পেছনে রয়েছে ভুল পরিকল্পনা।
ভুল পরিকল্পনার কারণে চার বছরের মাথায় প্রকল্পটি সংশোধন করতে হয়েছে। ভুল পরিকল্পনার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করতে গত নভেম্বরে তদন্ত কমিটি গঠন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। তবে ওই কমিটি দায়সারা প্রতিবেদন জমা দিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে।
সম্প্রতি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। পাশাপাশি ভুল পরিকল্পনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে পুনরায় নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ জানুয়ারি নতুন চিঠি ইস্যু করা হয়।
তদন্ত কমিটি পর্যালোচনা করে জানায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর আগে ডিজাইন রিভিউ করা হয়নি। ডিজাইনকালে ডিজাইন পরামর্শক প্রণীত ডিজাইনের সীমাবদ্ধতাগুলো দূরীকরণের উদ্যোগ গ্রহণের কারণে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজাইনকালীন সওজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প প্রণয়নকারী ইউনিট কর্তৃক যথাসময়ে প্রকল্পের সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়নি এবং যথাযথভাবে ডিজাইন বুঝে নেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে ডিজাইন ত্রুটির বিষয়ে ডিজাইন পরামর্শকের বক্তব্য গ্রহণ ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নবনিযুক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর আমাদের সময়কে বলেন, সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়-সওজ বৈঠক করে নির্দেশনা দিয়েছে। কোথাও অসঙ্গতি পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
শুধু সড়কেই নয়, রেলের বিভিন্ন প্রকল্পেও একই ধরনের ভুল পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক প্রকল্পের বিলম্ব ও খরচ বৃদ্ধি অথবা ত্রুটির কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত করে এমন দৃষ্টান্ত আছে। মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত বৈঠক আয়োজনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে সওজ। এখন পর্যন্ত সুফল না মিললেও চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে। আর রেলে চেষ্টার লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। রেল মন্ত্রণালয় অথবা রেলওয়ে এ নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখিয়েছে কিনা জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সড়ক আর রেল এক নয়। তাই রেলে ডিজাইনে ত্রুটি, পরিকল্পনায় ভুল অথবা মেয়াদ ও খরচ বৃদ্ধিতে স্বাভাবিক হিসেবে দেখতে চান কিছু কর্মকর্তা।
রেলে ভুল নকশার প্রকল্প অহরহ। এ রকমই একটি প্রকল্প ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডবল লাইন নির্মাণ। এর মধ্যে প্রকল্পটির ত্রুটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ অনুমোদিত প্রকল্প অনুযায়ী বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণকাজ চলছে। তবে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনটি ডুয়েলগেজে রূপান্তর না করায় স্টেশন, সেতু ও লেভেল ক্রসিং গেটে নির্মিতব্য ডুয়েলগেজ লাইনের সমান উচ্চতা থাকবে না। এতে বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনের ট্র্যাক স্ট্রাকচারে অসম ভার্টিকাল লেভেল দেখা দেবে। ফলে লেভেল ক্রসিং দিয়ে যানবাহন চলাচল সম্ভব হবে না। এ ছাড়া আপ লাইন ও ডাউন লাইনের জন্য প্ল্যাটফরম ও প্ল্যাটফরমের শেডের উচ্চতা ভিন্ন হবে। এতে যাত্রীদের নানা ধরনের সমস্যা হবে।
রেলের ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্প প্রস্তাবের আরেকটি উদাহরণ চিলাহাটি-হলিদাবাড়ি রেলপথ পুনরায় চালুকরণ প্রকল্প। এর আওতায় ৮০ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৯ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বর এ রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনও করা হয়েছে। তবে নির্মাণ শেষে এ প্রকল্পে ত্রুটি ধরা পড়ে।
এতে দেখা যায়, চিলাহাটি-হলিদাবাড়ি রুটে ভারত থেকে যেসব পণ্যবাহী ট্রেন আসবে ৫০ গাড়ি পর্যন্ত হতে পারে। তবে বিদ্যমান রেলপথের পাশে নির্মিত লুপ লাইনে এজন্য প্রয়োজনীয় জায়গা নেই। তাই নতুন আরেকটি লুপ লাইন নির্মাণ করতে হবে বেশি জায়গা নিয়ে। এ লুপ লাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
ত্রুটিপূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আরেকটি উদাহরণ আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ ডবল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। কাজ শুরুর পর এর আওতায় নতুন আইটেম হিসেবে ব্রিজ ও কালভার্টের অ্যাপ্রোচ (সংযোগ সড়ক) এবং লো-এমব্যাংকমেন্টে (নিচু বাঁধ) বালুর পাইল করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশে মাটির গুণাগুণ খুবই নিম্নমানের হওয়ায় তা ব্ল্যাক কটন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেখানকার মাটি পৃথকভাবে ট্রিটমেন্ট করতে হয়। রেলের প্রকল্প বাস্তবায়নে ভুল নকশার বিষয়ে সংস্থাটির সদ্য সাবেক মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান গত মাসের শেষ সপ্তাহে বলেন, সময়মতো কাজ শেষ করাই টার্গেট। নানা কারণেই বিলম্ব ঘটে ও খরচ বাড়াতে হয়। তবু সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।