দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত ছিলেন শহীদুল ইসলাম (৩০)। আয় করে জামিয়েছিলেন দেড় কোটি কোরিয়ান ওউন। বাংলাদেশি টাকায় যার হিসেব করলে দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কিন্তু সেই টাকা নিজের করে রেখে যেতে পারেননি তিনি। সই জাল করে শহীদুলের এ অর্থ আত্মসাৎ করে নিয়েছেন তারই মামা আজিজুল হক।
এ ঘটনায় ইপিএস কর্মী শহীদুল ইসলামের স্ত্রী নাজমিন আক্তার সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোরিয়ান থানায় মামলা দায়ের করে দূতাবাস।
মামলার সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৫ জুন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত (স্ট্রোক) কারণে মৃত্যু হয় শহীদুলের। তার আগে তিনি হোয়াসংসির মাদুমিয়োংর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাংলাদেশে তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার কালিয়াটি থানার পারকি ইউনিয়নের রোহা গ্রামে। বাবার নাম আব্দুল বাসেত। শহীদুলের মামা আজিজুল হকও দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাস করেন। ভাগ্নের মৃত্যুর পর তার স্যামসাং বীমা কোম্পানিতে করা ভূয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দাখিল করেন আজিজুল। সেখান থেকে সই জাল করে শহীদুলের ক্ষতিপূরণের অর্থ ও কৌশলে ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ আত্মসাৎ করে নেন।
বিষয়টি জানার পর আজিজুল হকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে শহীদুল ইসলামের স্ত্রী নাজমিন আক্তার সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে আবেদন করেন। তিনি দূতাবাসকে জানান, তার স্বামী কোরিয়ান ব্যাংকে প্রায় এক কোটি ছয় লাখ ও বীমা কোম্পানির কাছে ৪৬ লাখের বেশি অর্থ পাওনা ছিলেন। ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি তা দিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু শহীদুলের মামা আজিজুল হক স্বাক্ষর প্রতারণার মাধ্যমে সেসব অর্থ (১ কোটি ২৭ লাখ টাকা) আত্মসাত করে নিয়েছেন।
দূতাবাসের অভিযোগে বলা হয়েছে, মৃতের ব্যাংকের গোপন নাম্বার, এটিএম কার্ড, হস্তগত করে স্ত্রীর ছবি ব্যবহারসহ সই জাল করার মাধ্যমে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বীমা কোম্পানিতে উপস্থাপন করেন আজিজুল হক। নিয়মানুযায়ী বীমা কোম্পানিতে উপস্থাপিত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সত্যায়ণ করার প্রয়োজনীয়তা থাকলে ও এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ক্ষতিপূরণ পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি তালিকা পাঠিয়ে মৃতের পরিবারের সঙ্গে দূতাবাসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু পরিবার সেগুলো না পাঠিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে। পরবর্তীতে বীমা কোম্পানিতে যোগাযোগ করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে।
পরে, বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বীমা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিপূরণের বাকী অংশ পরিশোধ প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সিউল বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মকিমা বেগম আমাদের সময়কে বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর এবং পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বলে বাংলাদেশ দূতাবাস গত ২৮ ডিসেম্বর সিহং থানায় আজিজুল হকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি এখন তদন্তাধীন রয়েছে।’
বাংলাদেশে অবস্থানরত শহীদুল ইসলামের স্ত্রী নাজমিন আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশ দূতাবাস তাকে অনেক সাহায্য করেছে। তিনি তার মামা শ্বশুর আজিজুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
এ বিষয়য়ে শহীদুলের মামা আজিজুলের সঙ্গে কথা হলে আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সত্য উদঘাটনের জন্য আমি সমস্ত কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি।’