চাকরিজীবীদের ৩৪ শতাংশের বেতন বা মজুরি এখনো কোভিড-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসেনি। স্বকর্মে নিয়োজিতদের ক্ষেত্রে এ হার ৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে তাদের বেতন বা মজুরি কমে গেলেও পরবর্তীতে তা আর আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি। কোভিডের কারণে ৪৯ শতাংশ কর্মজীবী, যাদের বেতন কমে গিয়েছিল বা কাজ হারিয়েছিলেন, তারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সবাই শহরে এসে কাজ খুঁজেছেন। কোভিডের সময় সবচেয়ে কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন বরিশাল এলাকার মানুষ। শতকরা হিসাবে যা ১৩ শতাংশ এবং কম বেকার হয়েছেন খুলনা এলাকার মানুষ। মাত্র ৩ শতাংশ। ঢাকায় এই হার ৮ শতাংশ।
কর্মসংস্থান ও অভিবাসনের ওপর মহামারীর প্রভাববিষয়ক সানেমের জরিপের ফলাফলে গতকাল বুধবার এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিদেশে চলে যাওয়া টাকা আবার রেমিট্যান্স আকারে দেশে ফিরে আসছে কি না তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এই টাকা যদি আবার বিদেশে চলে যায় তবে তা সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ওয়েবিনারে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা। ওয়েবিনারটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পওতিয়ানেন। আলোচক হিসেবে কথা বলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনীম সিদ্দিকী এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
জরিপের ফলাফল উপস্থাপনের সময় ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, কর্মসংস্থান ও অভিবাসনের ওপর করোনা মহামারীর প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পেতে সানেম ২০২১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে খানা পর্যায়ে জরিপটি পরিচালনা করেছে। মোবাইল ফোন কলের মাধ্যমে পরিচালিত এই জরিপের খানাগুলোকে নির্বাচন করা হয়েছে ২০১৮ সালের সানেম-জেনারেল ইকোনমিক ডিভিশনের (জিইডি) পরিচালিত ১০৫০০ খানার মধ্য থেকে। জরিপে ২৭৩ জন প্রবাসী শ্রমিক, ২৩০ জন দেশের মধ্যে অন্যত্র কাজের জন্য স্থানান্তরিত কর্মী বা শ্রমিক এবং দেশ বা দেশের বাইরে কাজের জন্য স্থানান্তরিত নন এমন ২৮৪৫ জন কর্মী বা শ্রমিকের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।
জরিপের বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করে বলা হয়, বেতন বা মজুরির বিনিময়ে যারা কাজ করেন এমন ৬২ শতাংশ কর্মী বা শ্রমিক জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের বেতন ২০১৯ সালের তুলনায় কমে গিয়েছে, ৭.৯ শতাংশ জানিয়েছেন তারা এই সময়কালে কাজ হারিয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত (জরিপ চলাকালীন সময়) কাজ ফিরে পাননি, ১.৭ শতাংশ জানিয়েছেন তারা ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বরে সাময়িকভাবে কাজ হারিয়েছিলেন। ৫.৪ শতাংশ জানিয়েছেন তারা পেশা পরিবর্তন করেছেন। স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত এমন ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালের মধ্যে তাদের আয় কমে গিয়েছে, ২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন এই সময়কালে তাদের কাজ বা ব্যবসা একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত ৫২.৫ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বরে তাদের ব্যবসা বা কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন এমন ৭ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বরে তারা কাজ হারিয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত কাজে যোগ দিতে পারেননি, নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ১৬ শতাংশ।
কৃষি খাতে বেতন বা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন এমন ৬৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে ২০১৯ সালের তুলনায় তাদের আয় কমে গিয়েছে। তৈরী পোশাক খাতে এই হার ৬৯ শতাংশ, তৈরী পোশাক ব্যতীত অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে এই হার ৫৮ শতাংশ, নির্মাণ খাতে ৭৪ শতাংশ, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় ৫৭ শতাংশ এবং পরিবহন খাতের ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন তাদের বেতন বা মজুরি এই সময়ে কমে গিয়েছে।
বেতন বা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন এমন ৩৮ শতাংশ কর্মজীবী জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে তাদের বেতন কমেনি, ২৮ শতাংশ জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বরে তাদের বেতন বা মজুরি কমেছিল কিন্তু জরিপ চলাকালীন সময়ে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০২১) তাদের বেতন বা মজুরি আগের অবস্থায় অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের অবস্থায় ফিরেছে এবং ৩৪ শতাংশ জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে তাদের বেতন বা মজুরি কমেছিল কিন্তু জরিপ চলাকালীন সময়ে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০২১) তাদের বেতন বা মজুরি আগের অবস্থায় অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের অবস্থায় ফিরেনি।
স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত এমন ২০ শতাংশ কর্মজীবী জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে তাদের আয় কমেনি। ৪৩ শতাংশ জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বরে তাদের আয় কমেছিল কিন্তু জরিপ চলাকালীন সময়ে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০২১) তাদের আয় আগের অবস্থায় অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের অবস্থায় ফিরেছে এবং ৩৭ শতাংশ জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে তাদের আয় কমেছিল কিন্তু জরিপ চলাকালীন সময়ে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০২১) তাদের আয় আগের অবস্থায় অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের অবস্থায় ফেরেনি।
শহর এলাকায় বেতন বা মজুরির বিনিময়ে কাজ করতেন এমন ৮.৮৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে তারা কাজ হারিয়েছেন এবং এখনো বেকার রয়েছেন, গ্রামের ক্ষেত্রে এই হার ৭.৩৯ শতাংশ; বরিশালে এই হার ১৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১০ শতাংশ, ঢাকায় ৮ শতাংশ, খুলনায় ৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫ শতাংশ, রংপুরে ১০ শতাংশ এবং সিলেটে ৭ শতাংশ।
জরিপে দেখা গিয়েছে ৪৯ শতাংশ কর্মজীবী ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে চাকরি হারানো, বেতন না পাওয়া বা কম বেতন পাওয়া, বাসা ভাড়া ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করতে না পারা ইত্যাদি কারণে শহর থেকে গ্রামে চলে এসেছেন। তবে এই ৪৯ শতাংশ কর্মজীবীর প্রায় সবাই আবার শহরে ফিরে কাজে যোগ দিয়েছেন বা শহরে কাজ খুঁজতে এসেছেন।
জরিপে দেখা গিয়েছে ২০ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিক ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালের মধ্যে কাজ হারিয়েছেন। প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ৫ শতাংশ বিভিন্ন কারণে দেশে ফিরে এসেছেন।
ড. বিদিশা বলেন, যেসব খাতের কর্মজীবীগণ এখনো অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ধারায় পিছিয়ে আছে তাদের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। এসব খাতের মধ্যে রয়েছে পরিবহন, নির্মাণ এবং হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। এসব খাতের জন্য ন্যূনতম শর্তে বিশেষায়িত প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন। একইসাথে স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিতরা যেহেতু তুলনামূলকভাবে পুনরুদ্ধারে পিছিয়ে রয়েছেন, তাই তাদের জন্য নীতি সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ফিরে আসা প্রবাসীদের আবার কাজে পাঠানোর বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে, একইসাথে বাইরে কাজ করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়াগত খরচ রয়েছে তা কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ফিরে আসা শ্রমিকদের দেশের শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াসও পাশাপাশি চালাতে হবে।
ড. সেলিম রায়হান তার আলোচনায় সানেমের গবেষণার পটভূমি নিয়ে আলোচনা করেন। গবেষণার আলোকে অর্থনৈতিক নীতি নিয়েও তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের ওপর শ্রমবাজারের চ্যালেঞ্জগুলোর প্রভাব কী? শুধু অর্থনীতিই নয়, দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং কর্মসংস্থানের জন্যও কোভিড-১৯ এক অভূতপূর্ব সঙ্কট। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে এই বিষয়গুলোকে বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তীর্ণ হলেও, আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরো বলেন, পণ্য ও সেবা বাজার, পুঁজিবাজার এবং শ্রমবাজারের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং ক্রিয়ার ওপরও কোভিড-১৯ এর প্রভাব পড়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, মহামারীর আগে থেকেও বেসরকারি বিনিয়োগ, বিদেশী বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি শ্লথ ছিল। কোভিড-১৯ এই সমস্যাগুলো আরো তীব্র করেছে। ফলে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া নির্ভর করছে কত দ্রুত এই বাজারগুলো পুনরুদ্ধার হয় তার ওপর। যেসব অর্থনৈতিক নীতি আমরা গৃহীত হতে দেখছি সেগুলো শুধু পণ্য ও সেবা বাজার কেন্দ্রিক। পুঁজিবাজার বা শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারের জন্য নীতি নেই বললেই চলে বা থাকলেও তেমন প্রভাবশালী নয়। ফলে সার্বিক পুনরুদ্ধার তেমন শক্তিশালী নাও হতে পারে।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটা ইতিবাচক যে লোকজন ধীরে ধীরে কাজে ফিরে যাচ্ছে, কিন্তু যদি নতুন বিনিয়োগ না হয়, তাহলে শ্রমশক্তিতে যোগ হওয়া নতুন মানুষদেরকে আমরা কিভাবে জায়গা দেবো, যেখানে আমরা আগের থেকেই বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য এখনো তেমন কিছু করতে পারিনি।
অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের প্রজন্মান্তরের প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করে তিনি বলেন, প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীদের সাথে গ্রামের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু, দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসীরা গ্রাম থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। ফলে মহামারীর মধ্যে তাদের গ্রামের ফিরে যাওয়া একটি অস্থায়ী ব্যাপার। অন্য দিকে গ্রামে কর্মসংস্থানের সুযোগও কমে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে এবং গত ৮ মাসে আর ফিরে যেতে পারেনি। রেমিট্যান্সকে ‘কোট আনকোট রেমিট্যান্স’ (রেমিট্যান্স’) বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, এই রেমিট্যান্সে আরো অনেকগুলো অস্থায়ী নিয়ামক থাকতে পারে, যদিও রিজার্ভ এবং অর্থনীতির জন্য তা ইতিবাচক ছিল। অভিবাসন বন্ধ থাকার পরেও রেমিট্যান্স যেহেতু বৃদ্ধি হয়েছে, ফলে রেমিট্যান্স এবং অভিবাসনের যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক সেটি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য যে টাকা চলে গিয়েছিল, রেমিট্যান্সের মধ্যে সেটি আছে কি না, তা বিবেচনা করা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, বিদেশে এখন বিনিয়োগ তেমন লাভজনক না হওয়া এর একটি কারণ হতে পারে। তিনি আরো বলেন, যদি এই অর্থ আবার বিদেশে ফেরত যায়, তাহলে এক্সচেঞ্জ বাজারের ওপর চাপ পড়বে, যা সামষ্টিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
ড. তাসনীম সিদ্দিকী রামরুর সাম্প্রতিক গবেষণা তুলে ধরে বলেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের মধ্যে, মহামারীর প্রথম চার মাসে, নারী অভিবাসীরা পুরুষ অভিবাসীদের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে পেরেছে। তিনি বলেন, নারী অভিবাসীদের মধ্যে ৬৯ শতাংশ রেমিট্যান্স পাঠাতে পেরেছেন যেখানে পুরুষ অভিবাসীদের মধ্যে পেরেছেন মাত্র ৩০ শতাংশ। তিনি আরো বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে সরকার প্রান্তিক জনগণকে যেসব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে সেগুলো অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক অভিবাসীরা পাননি। রামরুর গবেষণা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সংসদ সদস্যরা নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে শহর থেকে গ্রামে ফেরা হাজার হাজার অভিবাসীকে সাহায্য করেছেন, কিন্তু সরকারি কোনো সাহায্য এ জন্য বরাদ্দ হয়নি।
রেমিট্যান্স নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, অনেক পরিবারই যারা অভিবাসনে আগ্রহী ছিল তারা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে গড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দিলেও বিদেশে যেতে পারেনি। মার্চ থেকে ডিসেম্বরে চার লাখ শ্রমিক ফিরে এসেছেন, অনেক ক্ষেত্রেই নিঃস্ব হয়ে; গড়ে এই শ্রমিকরা বিদেশে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ফেলে এসেছেন। রেমিট্যান্সের ধারা বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে এগুলো বিবেচনায় রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রেমিট্যান্সের জন্য সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে, এটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে শোনা যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখা জরুরি।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সানেমের জরিপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক, অভিবাসী এবং অভিবাসী নন এমন শ্রমিক এই তিন শ্রেণীর কাদের ওপর মহামারীর কেমন প্রভাব পড়েছে তা আলাদা করে বিশ্লেষণ করা দরকার। একই ধরনের বিশ্লেষণ ভিন্ন ভিন্ন আয়ের শ্রেণীগুলোর ক্ষেত্রেও দরকার। এই বিশ্লেষণগুলো সঠিক ও কার্যকর নীতি প্রণয়নের জন্য জরুরি।
টুমো পওতিয়ানেন বলেন, আমরা যতই শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার চাই না কেন, বৈশ্বিক শ্রমবাজার, ভোগ এবং বাণিজ্য সম্পর্কে কোনো কার্যকর ভবিষ্যদ্বাণী করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এই আলোচনায় সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুগুলো পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে এবং সামাজিক নিরাপত্তার নিমিত্তে একটি সার্বিক ও বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে।
বিভিন্ন খাতে এবং বিভিন্ন উপায়ে জনগণ কাজে ফিরছেন কিন্তু, কয়েকটি খাতে বিশেষ মনোযোগ দেয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, কাজে ফিরলেও, কর্মসংস্থান কম হচ্ছে কি না বা কর্মঘণ্টা কমে যাচ্ছে কি না তা দেখতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে প্রণোদনা প্যাকেজ পাওয়া কঠিন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি এ দিকে বিশেষ নীতি গ্রহণ করার ওপর জোর দেন। সর্বোপরি, শ্রমবাজারের শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার, বেসরকারি খাত এবং সুশীলসমাজকে একযোগে কাজ করা দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।